তিতাস থেকে বুড়িগঙ্গা’ বন্ধ নদীপথে প্রাণ ফেরাতে নদীপথ যাত্রা
সম্পূর্ণ ভিডিওটি সংবাদ দেখতে ক্লিক করুন
এফ এইচ সবুজ: বছরজুড়ে যানজট, বর্ষা এলেই জলজট-এ যেন বাংলাদেশের চিরচেনা চিত্র। এই দেশে যেমন সড়কে আটকে থাকে গাড়ি, তেমনি পথহারা নদীগুলোতে আটকে যায় পানি। এরই পরিণতি যানজট আর জলজট; জনজীবনে ভোগান্তির শেষ নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের ২৪ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি নদীপথ নৌচলাচলের উপযোগী করা গেলে যানজট ও জলজট-দুই সমস্যারই বড় অংশের সমাধান সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন সারাদেশের নৌপথ পুনরুদ্ধার এবং নদীতে নিরবচ্ছিন্ন পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করা।
এই ভাবনার সঙ্গে একমত হয়ে মাঠে নেমেছে নদী ও প্রকৃতিবিষয়ক সামাজিক আন্দোলন ‘তরী বাংলাদেশ’। সারাদেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া নৌপথ পুনঃউদ্ধার, দখল-দূষণমুক্ত নদী রক্ষা ও নদীমাতৃক বাংলাদেশের ঐতিহ্য পুনর্জাগরণের দাবিতে সংগঠনটি শুরু করেছে ‘নদীপথ যাত্রা’।
‘তিতাস থেকে বুড়িগঙ্গা’-এই প্রতীকী যাত্রার মধ্য দিয়ে উদ্বোধন হয় তাদের নতুন কর্মসূচির। ট্রলারে নদীপথ পর্যবেক্ষণ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তথ্য সংগ্রহই এই অভিযাত্রার মূল লক্ষ্য। সভার শুরুতে তরী বাংলাদেশের আহ্বায়ক শামীম আহমেদ বলেন, একসময় দেশে ২৪ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ নৌপথ ছিল, বর্তমানে রয়েছে মাত্র ৬ হাজার। বাকি ১৮ হাজার কিলোমিটার কোথায় গেল-এই প্রশ্ন সরকার ও সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় আনা জরুরি। দেশের দীর্ঘ নৌপথ পুনরুদ্ধার ও নদীর দখল-দূষণ রোধে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) একে এম আরিফ উদ্দিন বলেন, একজন ঋণখেলাপি নির্বাচনে অযোগ্য হলে নদী দখল-দূষণকারী কেন অযোগ্য হবে না? নদী রক্ষা কমিশনের সেই সুপারিশ কার্যকর করতে হবে। আদালত নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে, তাই নদী দখলকে প্রাণহত্যার মতো অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
লেখক ও সম্পাদক মোস্তাফিজ শফি বলেন, দেশের ইতিহাসে সব উন্নয়নই নদীকেন্দ্রিক ছিল। আজ নদীগুলো ভালো নেই-এটা জাতির জন্য দুঃসংবাদ। নদী দখলদাররা যেন ক্ষমতার আসনে না পৌঁছায়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
রিভারাইন পিপল-এর মহাসচিব শেখ রোকন বলেন, তরী বাংলাদেশ দেখিয়ে দিয়েছে-নদীকে ভালো রাখলে তাকে বহুমাত্রিক ব্যবহারে আনা যায়।
এখন সময় এসেছে দেশের প্রতিটি জেলায় নৌপথ পুনরুদ্ধারের আন্দোলন গড়ে তোলার।
সেন্টার ফর ল অ্যান্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্স-এর সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, নদী দখল ও দূষণকারীদের নাম-ছবি প্রকাশ করে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক শেখ আদনান ফাহাদ বলেন, তিতাস থেকে বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত তরী বাংলাদেশের নৌযাত্রা রাষ্ট্রের জন্য অনুপ্রেরণামূলক দৃষ্টান্ত। পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে এই উদ্যোগকে উদাহরণ হিসেবে নেওয়া যেতে পারে।
পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক জি এম রুস্তম খান বলেন, নদী হারানো মানে দেশ হারানো। নদী হারালে প্রকৃতি ও কৃষি উভয়ই ধ্বংস হবে।
বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের সমন্বয়ক মিহির বিশ্বাস বলেন, নদীর জায়গা উদ্ধার যেমন জরুরি, তেমনি এর রক্ষণাবেক্ষণেও নিয়মিত মনোযোগ দিতে হবে। তরী বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারাদেশে নদী, খাল ও জলাশয় দখল-দূষণের বিরুদ্ধে কাজ করছে।
“তিতাস থেকে বুড়িগঙ্গা” অভিযাত্রার মাধ্যমে তারা কয়েকটি মূল দাবি তুলে ধরে জানান, সারাদেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া নৌপথ পুনরুদ্ধার, নদী ও খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদ, নদীর সঙ্গে খালের সংযোগ পুনঃস্থাপন, পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে নৌপথ ব্যবহারের প্রসার, এবং নদীর নিরাপত্তা ও সংরক্ষণে কার্যকর ব্যবস্থা।
সভায় উপস্থিত নদীকর্মী ও অতিথিবৃন্দ এসব দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন। মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন তরী বাংলাদেশের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য খালেদা মুন্নি, সোহেল রানা ভূঁইয়া, সুশান্ত পাল, খাইরুজ্জামান ইমরান, জুবাইদুর রহমান মেহেদি, রফিকুল ইসলাম, গোলাম কিবরিয়া, নদী ও পরিবেশ কর্মী এফ এইচ সবুজ প্রমুখ এবং বিভিন্ন নদী-পরিবেশবাদী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
বিআলো/এফএইচএস



