তিন মাসে বিদেশি ঋণের পরিমাণে সামান্য কমল
বিআলো ডেস্ক: বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ সামান্য হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে বৈদেশিক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০৩.৬৩ বিলিয়ন ডলার, যা সেপ্টেম্বরের তুলনায় ৭৪০ মিলিয়ন ডলার বা ০.৭১ শতাংশ কম।
বর্তমান ১২২ টাকা প্রতি ডলারের বিনিময় হারে এই ঋণের পরিমাণ দেশীয় মুদ্রায় দাঁড়ায় প্রায় ১২ লাখ ৬৪ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা।
সরকার ও সরকারি সংস্থাগুলোর মোট ঋণ ৮৪.২১ বিলিয়ন ডলার, আর বেসরকারি খাতে রয়েছে ১৯.৪২ বিলিয়ন ডলার ঋণ। মোট ঋণের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৯০.৬৯ বিলিয়ন ডলার—যা মোটের ৮৭.৫৪ শতাংশ। অপরদিকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১২.৯৫ বিলিয়ন ডলার, যা মোটের ১২.৫০ শতাংশ।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ১০০.৬৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরে ঋণ বেড়েছে ২.৯৮ শতাংশ বা ৩ বিলিয়ন ডলার।
২০২৫ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন। এর আগে জুলাই পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ১০৩.৭৯ বিলিয়ন ডলার।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাদের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে বৈদেশিক ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৮৪ বিলিয়ন ডলারে, যা ২০০৬ সালের শেষের ১৯ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় অনেক বেশি।
বিশ্লেষকদের মতে, বড় প্রকল্প ও অবকাঠামো উন্নয়নের চাপ সামলাতে সরকার উচ্চ সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছে। তবে একইসঙ্গে দুর্বল ঋণ ব্যবস্থাপনার কারণে দেশি-বিদেশি উভয় উৎস থেকেই অতিরিক্ত ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “ঋণ হ্রাসের প্রধান কারণ হচ্ছে আস্থার সংকট। আদানি গ্রুপের পাওনা, বিমান সংস্থার বকেয়া, এলসি বাবদ অর্থ পরিশোধে বিলম্ব ইত্যাদি কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “যদিও সাম্প্রতিক সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে, তবে আন্তর্জাতিক রেটিং এজেন্সিগুলোর বাংলাদেশকে নিচে নামিয়ে দেওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে উচ্চ সুদের আশ্বাস থাকা সত্ত্বেও অনেকেই ঋণ দিতে আগ্রহী হচ্ছেন না।”
তাঁর মতে, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় কিছুটা বেড়েছে বটে, তবে সেগুলো যথেষ্ট ইতিবাচক পরিবর্তন এনে দেয়নি, যা বিদেশি ঋণ প্রবাহ বাড়াতে পারে।
বিআলো/শিলি