তিন মাস পর সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক : তারেক রহমান
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: মাফিয়া সরকারের তৈরি করা জঞ্জাল তিন মাসে দূর করা সম্ভব না। আবার তিন মাস পরে সরকারের সফলতা বা ব্যর্থতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক বা অন্যায্যও নয়। তবে সরকার পরিচালনায় অদক্ষতা দেখতে পেলে জনগণ সহজভাবে মেনে নেবে না। শনিবার বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে (আইইবি) জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (জেটেব) তৃতীয় কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
অধিবেশনের উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এতে সভাপতিত্ব করেন জেটেব আহ্বায়ক ফখরুল আলম। দ্বিতীয় অধিবেশন প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ সময় প্রত্যক্ষ গোপন ভোটের মাধ্যমে সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হন ফখরুল আলম এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এ কে এম রুহুল আমিন আকন্দ।
তারেক রহমান বলেন, আমি আগেও বলেছি, সংস্কার কাজ করতে গিয়ে অগ্রাধিকারের সেটিংস যদি ভুল হয় তাহলে জনগণের কাছে সরকারের অদক্ষতা হিসেবেই সেটা বিবেচিত হবে। দু’দিন আগে আহতরা হাসপাতাল থেকে যেভাবে বের হয়ে এসেছেন সেটা আমাদের বিবেকবান প্রত্যেকটা মানুষের জন্যই লজ্জাস্কর বিষয়। স্বাভাবিকভাবেইপ্রশ্ন উঠতে পারে আহতদের পুনর্বাসন, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা কেন অগ্রাধিকার লিস্টে নেই, থাকলেও কত নম্বরে ছিল?
তিনি বলেন, গত ১৫ বছর স্বৈরাচারী সরকার দেশকে আমদানিনির্ভর, পরনির্ভর ও ঋণনির্ভর করেছে। এমন অবস্থা থেকে দেশকে বের করে আনা প্রয়োজন। বের করে এনে যে কোনো উপায়ে সমৃদ্ধ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে গার্মেন্টস খাতকে আরো লাভজনক ও বিশ্ববাজারে চাহিদা তৈরিতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করছে বিএনপি। এছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিশেষ করে এসএমই খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়িয়ে অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর বিষয়টিও বিএনপির বিবেচনাধীন রয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, একটি দেশের রাজনীতি যদি রুগ্ন হয় তাহলে অর্থনীতিও রুগ্ন হতে বাধ্য। স্বৈরাচারী আমলে আমরা সেটা দেখেছি। তারা উন্নয়নের নামে যে মেগাপ্রজেক্ট করে তার আসল রূপ কিন্তু এখন বের হয়ে আসছে। তিনি আরো বলেন, বিএনপির ৩১ দফা কর্মসূচি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের উন্নয়নে ঐতিহাসিক সনদ বলে আমরা মনে করি। ঘোষিত এই ৩১ দফা বাস্তবায়নে মানসম্পন্ন ও প্রায়োগিক শিক্ষার ওপরও কিন্তু জোর দেয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, জনসংখ্যা কোনো অভিশাপ নয় বরং এই জনসংখ্যাকে যদি মানবসম্পদে রূপান্তর করা যায় তাহলে দেশের উন্নয়নে এটাই বড় শক্তি।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা দেখেছি অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। জনগণ আশা করছে, নিরপেক্ষ ও স্বাচ্ছ পরিবেশে ভোট দিতে সক্ষম হবে। জনগণ তাদের প্রতিনিধিদেরকে নির্বাচিত করার সুযোগ পাবে। জনগণ যখন সত্যিকার অর্থে বুঝতে পারবে তাদের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার কাজ করছে তখন জনগণের সঙ্গে সম্পর্কটা দৃঢ় হবে। দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমাদের সবার লক্ষ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের জীবনযাত্রাকে একটু ভালো করা, শিক্ষাব্যবস্থা ভালো করা, বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করা, চিকিৎসার ব্যবস্থা ভালো করা, নিরাপত্তা ভালো করা আমাদের লক্ষ্য। অতীতে যখনই জনগণের ভোটে বিএনপি সুযোগ পেয়েছে তখন চেষ্টা করেছে যতটুকু সম্ভব এই কাজগুলো করার।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংস্কারের কাজ করছে, আমরা তাদের সমর্থন করি। প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থা করবেন। আমাদেরকে সতর্ক থেকে কাজ করতে হবে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, দলের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, ফরহাদ হালিম ডোনার, সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক মিনহাজুর রহমান, সদস্য সচিব এ বি এম রুহুল আমিন আকন্দসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃবৃন্দ।
এর আগে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল শনিবার সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, অধিকার আদায়ে মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এ দেশের মানুষকে সাহস জুগিয়েছেন তার নির্ভীক ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়ে। তার অবস্থান ছিল শোষণের বিরুদ্ধে এবং শোষিতের পক্ষে। মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আমি তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তার রুহের মাগফিরাত কামনা করি। মওলানা ভাসানী আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম। সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ ও আধিপত্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের প্রবাদ পুরুষ মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে উপমহাদেশের নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের পক্ষে আপসহীন ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়েছেন। মওলানা ভাসানী দেশমাতৃকার মুক্তির পথপ্রদর্শক হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং কৃষক শ্রমিক মেহনতি জনতার ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী ছিলেন এক আলোকবর্তিকা। তার অবস্থান ছিল শোষণের বিরুদ্ধে এবং শোষিতের পক্ষে। অধিকার আদায়ে তিনি এ দেশের মানুষকে সাহস জুগিয়েছেন তার নির্ভীক ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের দ্বারা। তার হুংকারে অত্যাচারী শাসক ও শোষক গোষ্ঠীর মসনদে কম্পন সৃষ্টি হতো। জাতির ভয়াবহ দুর্দিনগুলোতে তিনি জনস্বার্থের পক্ষে থাকতেন বলেই জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন। অসহায় মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় মওলানা ভাসানী সবসময় আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। তার অগাধ দেশপ্রেম, দেশ ও জাতির স্বার্থরক্ষা এবং গণতন্ত্র ও মানবতার শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে যুগ যুগ ধরে আমাদের অনুপ্রাণিত করবে। তার আদর্শকে সঠিকভাবে অনুসরণ করতেবপারলেই আমরা আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হব।
প্রসঙ্গত, আজ রবিবার (১৭ নভেম্বর) মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী।
বিআলো/তুরাগ