দুই কিলোমিটারজুড়ে গাছ শূন্য হচ্ছে সড়ক-ক্ষোভে ফুঁসছে স্থানীয়রা
এ.বি.এস রতন, নওগাঁ: নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার জন্তিগ্রাম থেকে কদমতলী মোড় পর্যন্ত প্রায় ৯ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্রামীণ সড়কটি ‘অর্জুনগাছের সড়ক’ নামে পরিচিত। দুই পাশে দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সহস্রাধিক অর্জুনগাছসহ আম, শিসু ও অন্যান্য গাছ ছিল—যেগুলো ২৫–৩০ বছর আগে রোপণ করা হয়েছিল। কিন্তু সড়ক সম্প্রসারণের নামে সম্প্রতি এ গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। এতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তারা গাছ না কেটে সড়ক উন্নয়নের বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
গত ১৩ অক্টোবর সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পের টেন্ডার আহ্বান করা হয় এবং ২৮ অক্টোবর ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর গত এক সপ্তাহ ধরে অর্জুনগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির বহু গাছ অপসারণের কাজ চলছে। বহুদিন ধরে এসব গাছ এলাকার সৌন্দর্য বাড়িয়েছে এবং ঔষধি কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। গাছ কাটায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ঔষধি গুণসম্পন্ন অর্জুনগাছের ছাল ও পাতা সংগ্রহ করতে জেলা–উপজেলার বাইরের মানুষেরাও এখানে আসতেন। তাদের বক্তব্য, সড়কটি এখনও এমন অবস্থায় রয়েছে যে আরও ২০–৩০ বছর কোনো সমস্যায় পড়া ছাড়া যানবাহন চলাচল করতে পারবে। তারপরও গাছ কেটে সড়ক প্রশস্তকরণের সিদ্ধান্ত স্থানীয়দের কাছে অযৌক্তিক মনে হচ্ছে।
জন্তিগ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ বাসিন্দা বসির উদ্দিন বলেন, “জেলায় কোথাও এমন সড়ক দেখিনি যেখানে এত ঔষধি গাছ আছে। এসব গাছ আমাদের কাছে ডাক্তারসম। কিন্তু আমাদের না জানিয়ে সড়ক উন্নয়নের নামে গাছ কাটা হচ্ছে—এতে ভবিষ্যতে আমরা বড় সমস্যায় পড়ব।”
স্থানীয় মরিয়ম বেগম বলেন, “এই গাছের পাতা-লতা কুড়িয়ে আমরা জ্বালানির কাজ চালাই। ছাগল–গরুর খাবারও মেলে। রোদে দাঁড়ালে গাছের ছায়ায় আশ্রয় পাই। কিন্তু গাছগুলো কেটে ফেলায় আমরা এসব সুবিধা আর পাব না।”
পরিবেশ কর্মী অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান বলেন, “অর্জুনগাছ শুধু সড়কের সৌন্দর্যই বাড়ায়নি, পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা করেছে। উন্নয়ন দরকার, কিন্তু পরিবেশ ধ্বংস করে কোনো উন্নয়ন গ্রহণযোগ্য নয়। এটি ইচ্ছাকৃতভাবে গাছ সাবাড়ের মতো মনে হচ্ছে। গাছ রেখে সড়কের এক পাশ প্রশস্ত করার সুযোগ ছিল।”
গাছ কাটার ঠিকাদার ‘বাসাত টিমবার’-এর স্বত্ত্বাধিকারী আকবর আলী প্রামাণিক জানান, “প্রায় ৩০০ জন ঠিকাদার শিডিউল জমা দিলেও সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে আমাকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। ভ্যাটসহ ১৭ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছি। এরপর গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।”
মহাদেবপুর এলজিইডির প্রকৌশলী সৈকত দাস জানান, “৯ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির প্রস্থ ৮ ফুট বাড়িয়ে ১৮ ফুট করা হচ্ছে। প্রকল্পের বরাদ্দ প্রায় ১৬ কোটি টাকা। সড়ক প্রশস্ত করতে গাছ অপসারণ প্রয়োজন ছিল। উপজেলা সমন্বয় সভায় বিষয়টি আগেই আলোচনা করা হয়। গাছ কাটতে বিএমডিএকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।”
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) নওগাঁ রিজিয়ন–২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ মোহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, “সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বিএমডিএ ও বন বিভাগ যৌথভাবে গাছের টেন্ডার দিয়েছে। প্রায় এক হাজার গাছ অপসারণ করা হবে। কাজ শেষে পুনরায় গাছ রোপণ করা হবে।”
বিআলো/ইমরান



