দুই দশকের প্রভাব, কোটি টাকার অনিয়ম: চট্টগ্রাম বন্দরের ‘অঘোষিত সম্রাট’ এনামুল করিম
চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ন্ত্রণের অদৃশ্য ‘সম্রাট’ এনামুল করিম
নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় দীর্ঘদিন ধরে এক অদৃশ্য ‘সাম্রাজ্য’ গড়ে তুলেছেন বন্দরের পরিবহন বিভাগের পরিচালক এনামুল করিম। প্রায় দুই দশক ধরে প্রভাব বিস্তার করে আসা এ কর্মকর্তা বর্তমানে নিয়োগ বাণিজ্য, কনটেইনার ছাড় ও লাইসেন্স অনুমোদনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
নিয়োগ বাণিজ্যে কোটি টাকার লেনদেন
চট্টগ্রাম বন্দরে শ্রমিক ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিটি পদে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এনামুল করিমের বিরুদ্ধে। ঘুষের অঙ্ক ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। এই প্রক্রিয়াটি পরিচালিত হয় তার ঘনিষ্ঠ তিন সহযোগীর মাধ্যমে—বন্দর শ্রমিক কর্মচারী লীগ (রেজি: ২৭৪৭)-এর সভাপতি মীর নওশাদ, সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর এবং সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল।
কনটেইনার ছাড়ে অনিয়ম: ১০ কোটিরও বেশি ক্ষতি
২০১৫-১৬ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। শিপিং এজেন্ট মেসার্স ইউনিবেঙ্গল কনটেইনার ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের রিভলভিং হিসাবে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকা সত্ত্বেও বন্দরের ট্রাফিক বিভাগ নিয়ম লঙ্ঘন করে তাদের কনটেইনার ছাড়পত্র দেয়। ঐ সময় বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন ডেপুটি ট্রাফিক ম্যানেজার (অপারেশন) এনামুল করিম।
ফলে বন্দর কর্তৃপক্ষ ১০ কোটি ৩২ লাখ টাকার বেশি রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় এবং পরবর্তীতে টাকা আদায়ে মামলার পথ বেছে নেয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়া হয়ে যাওয়ায় বকেয়া অর্থ আদায় সম্ভব হয়নি, এমনকি বন্দরে আটকে থাকা প্রায় ১৬০০ কনটেইনার থেকেও পাওনা উদ্ধার হয়নি।
দুদকের তদন্ত
দুদক ইতোমধ্যে এই ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্দর চেয়ারম্যান বরাবর একাধিক চিঠি পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় নথিপত্র চাওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, এনামুল করিম শিপিং এজেন্টদের সঙ্গে যোগসাজশ করে বন্দরের রাজস্ব আত্মসাৎ করেছেন এবং এ অর্থ দিয়ে নিজের ও পরিবারের নামে সম্পদ গড়ে তুলেছেন।
এ ছাড়া ২০১৪-১৬ সালের মধ্যে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে যুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা ও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে কমিশন। গত এক-দেড় মাস আগে আবারও অনুসন্ধান জোরদারের জন্য তদন্ত চেয়েছেন দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন।
বিআলো/তুরাগ