দুর্গোৎসবে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান মির্জা ফখরুলের
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য জনমনে প্রশ্ন তুলেছে: রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক: শারদীয় দুর্গাপূজা ও বিজয়া দশমী উপলক্ষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তিনি বলেছেন, মধ্যযুগীয় কাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দুর্গাপূজা একটি সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হিসেবে পালিত হয়ে আসছে, একইসঙ্গে ধর্মীয় উপাসনার মূল বজায় রেখেছে। ধর্মীয় উৎসব সাম্প্রদায়িক কোনো বৃত্তে আবদ্ধ থাকে না, উৎসব বৃত্ত অতিক্রম করে সব মানুষকে নিয়ে উদযাপিত হয়। মানুষের আত্মাকে মিলনের বোধে উদ্দীপ্ত করে। বুধবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ সই করা বাণীতে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি এবারের শারদীয় দুর্গাপূজায় সম্প্রীতি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে দেশের সব নাগরিকের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। অপশক্তির অশুভ তৎপরতা দুর্গাপূজার উৎসবকে যাতে কোনোভাবেই বিঘ্ন ঘটাতে না পারে সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে আহ্বান জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় এবং সামাজিক উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা ও বিজয়া দশমী। এ উপলক্ষে আমি হিন্দু ধর্মাবলম্বী সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও প্রাণঢালা অভিনন্দন। তাদের অব্যাহত সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করছি। মির্জা ফখরুল বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা বাংলা ভাষাভাষী হিন্দু জনগোষ্ঠীর সব মানুষের জীবনে এক আলোকদীপ্ত বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে।
সুদীর্ঘকাল ধরেই বাংলাদেশসহ বাংলাভাষী মানুষদের এই ধর্মীয় উৎসবটি এক ঐশ্বর্যময় ঐতিহ্যে মহিমামণ্ডিত। দেবী দুর্গা শক্তি ও সাহসের মূর্ত প্রতীক। পৃথিবীতে অঞ্চলভেদে যেকোনো উৎসবই মানুষের মধ্যে নিয়ে আসে স্বর্গীয় আনন্দ ও শুভেচ্ছার বার্তা। তিনি আরো বলেন, উৎসবের প্রাঙ্গণে কোনো বিধি-নিষেধ নেই। সেটি প্রত্যেক মানুষেরই মিলন ক্ষেত্র। বাংলাদেশের মৃত্তিকার গভীর থেকে যে ইতিহাস ও ঐতিহ্য উৎসারিত হয় সেটি ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মূল্যবোধকে অন্তর্ভুক্ত করে। দুর্গাপূজার মূল বাণী হচ্ছে- অশুভের ওপর শুভের জয়। দূর্গা, তার গৌরবময় লক্ষ্য অর্জনের জন্য মন্দকে উপলব্ধি এবং তা প্রতিহত করেন। বিএনপি মহাসচিব উল্লেখ করেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের জাতীয় ঐত্যিহের অংশ। আমরা সবাই বাংলাদেশি- এটিই আমাদের গর্ব, একমাত্র পরিচয়।
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য জনমনে প্রশ্ন তুলেছে: রিজভী
নিউইয়র্কে একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, তার বক্তব্য নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন উঠেছে। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার প্রাঙ্গণে মাছের পোনা ছাড়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে জেটিওর সাংবাদিক মেহেদী হাসানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এমন মানুষও রয়েছেন, যারা বলছেন আপনি ৫ বছর থাকুন, ১০ বছর থাকুন, ৫০ বছর থাকুন। সুতরাং, মানুষ নানা ধরনের কথাই বলে। তারা বলে নির্বাচনের দরকার কী? কার নির্বাচন দরকার? প্রসঙ্গটি টেনে রিজভী বলেন, তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছেন, অনেকে তাকে পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে আসলে তিনি কী বার্তা দিচ্ছেন, সেটিই এখন জনমনে সংশয় তৈরি করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা কতদিন ক্ষমতায় থাকবেন তা জনগণের আকাঙ্ক্ষার ওপর নির্ভর করবে জানিয়ে রিজভী বলেন, নির্বাচন নিয়ে যখন অনিশ্চয়তা বিরাজ করছিল, সেই সময়েই তিনি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। অথচ এখন ক্ষমতায় থাকার বিষয়ে দেওয়া বক্তব্য মানুষের মধ্যে আরো অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনা করে রিজভী বলেন, দেশের ব্যাংকগুলো খালি হয়ে গেছে। ভেবেছিলাম প্রধান উপদেষ্টার দেশ-বিদেশে নানা যোগাযোগ রয়েছে, সেখান থেকে অর্থনৈতিক সহায়তা আসবে। কিন্তু গত এক বছরে কোনো ঋণ বা সহায়তা আসেনি। ফলে ব্যাংকগুলো কার্যত শূন্য হয়ে পড়েছে। চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপির কেউ যদি এমন কাজে জড়ায়, তারেক রহমানের নির্দেশে সঙ্গে সঙ্গে বহিষ্কার করা হচ্ছে। তবে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সরকারের দায়িত্ব, সেটি সরকার করতে পারছে না। বিএনপির এ নেতা আরো বলেন, বাংলাদেশবিরোধী একটি শক্তি ও ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করছে।
না হলে পাহাড়ে এই অনিশ্চয়তা কেন দেখা দিচ্ছে? জামায়াতে ইসলামী প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, অনেকেই জামায়াতকে ছায়া সরকার বলে উল্লেখ করছে। তবে বিএনপির লক্ষ্য দেশকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে নেওয়া। শিক্ষাক্ষেত্র ও স্বাস্থ্যখাতসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যোগ্য ব্যক্তিদের রাখতে চায় বিএনপি, শুধু ছায়া সরকারের লোকজন নয়। কিছু ইসলামী দল জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিন্তু জনগণ কোনো পিআর চায় না। তারা তাদের ভোট দিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করবে, এটাই স্বাভাবিক নিয়ম, প্রচলিত নিয়ম। রিজভী জানান, বিএনপি শুধু রাজনীতি বা নির্বাচন নিয়েই নয়, সামাজিক ও পরিবেশগত কাজেও সম্পৃক্ত। তারেক রহমানের নির্দেশে মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দলসহ বিভিন্ন সংগঠন মাঠপর্যায়ে পরিবেশ রক্ষায় কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে লেকে মাছের পোনা ছাড়া হয়। দেশে গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে হলে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই বলেও জানান বিএনপির এই নেতা।
পাহাড়ে অস্থিতিশীলতা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অংশ: এদিকে, গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর পল্টনে বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দুর্গাপূজার সময় পাহাড়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। রিজভী বলেন, যারা শেখ হাসিনার পতন মেনে নিতে পারছে না, তারাই পরিকল্পিতভাবে দুর্গাপূজার সময় পাহাড়ে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি করছে। রাজনৈতিক স্বার্থে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিভক্ত করা হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। তিনি আরো দাবি করেন, দুর্গাপূজাকে বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকেও ষড়যন্ত্র চলছে। তবে পূজার শান্তিপূর্ণ আয়োজন নিশ্চিত করতে হিন্দু-মুসলিম সবাই একসঙ্গে কাজ করছে এবং সেই শপথ নিয়েছে। দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বিএনপির এ নেতা।
বিআলো/ইমরান