দেশে বাড়ছে শিশুশ্রম, বিপদজনক শ্রমে নিয়োজিত লক্ষাধিক শিশু
ক্লেপ আয়োজিত সেমিনারে গবেষণা তথ্য
বিশেষ প্রতিনিধি: শিশুশ্রম প্রতিরোধে নানা উদ্যোগের পরও দেশে শিশুশ্রমের হার বেড়েছে। দেশে বর্তমানে ৩৫ লাখ কর্মজীবী শিশুর মধ্যে প্রায় এক লাখ ৬ হাজার শিশু বিপদজনক শ্রমে নিযুক্ত। ২০১৩ সালে বিপজ্জনক শিশুশ্রমের হার ৩.২ শতাংশ থাকলেও ২০২২ সালে তা কমে ২.৭ শতাংশ হয়েছে। তবে সামগ্রিক শিশুশ্রমের হার ২০১৩ সালের ৪.৩০ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে বেড়ে হয়েছে ৪.৪০ শতাংশ।
এই তথ্য বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিশুশ্রম প্রতিরোধ ও নির্মূল : সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জসমূহ’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে তুলে ধরা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ও গবেষক ড. মোহাম্মদ নাজমুজ্জামান ভূইয়া মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
তিনি জানান, শ্রম আইনে বিপজ্জনক কাজে শিশুদের নিয়োগ নিষিদ্ধ হলেও আইনগত সীমার বাইরে বহু শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিযুক্ত। বর্তমানে কৃষি খাতে ৬১ শতাংশ শিশু শ্রমিক, গৃহস্থালিসহ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ২৭ শতাংশ এবং পোশাক-জাহাজভাঙাসহ শিল্পখাতে ১৩ শতাংশ শিশু কাজ করছে।
আয়োজক সংগঠন ‘চাইল্ড লেবার ইলিমিনেশন প্লাটফর্ম (ক্লেপ)’ এর এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন এডুকো বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আব্দুল হামিদ। বক্তৃতা করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ. এইচ. এম সফিকুজ্জামান, শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, আইএলও’র সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার সৈয়দা মুনিরা সুলতানা, শিশুশ্রম বিশেষজ্ঞ নাঈমূল আহসান জুয়েল প্রমুখ।
শ্রম সচিব এ. এইচ. এম সফিকুজ্জামান বলেন, শিশুশ্রম নিয়ন্ত্রণে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে এবং আগামী দুই মাসের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধনের আশা করা যাচ্ছে। সরকার ইতোমধ্যে আইএলও কনভেনশনের ৮টি ধারায় স্বাক্ষর করেছে এবং বাকি ২টিতেও স্বাক্ষরের উদ্যোগ নিয়েছে।
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিশুশ্রম শুধু সামাজিক সমস্যা নয়, এটি মানবাধিকার লঙ্ঘন। আইনের বাইরের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে শিশু শ্রমিক বেশি থাকায় শ্রম আইন সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে আব্দুল হামিদ বলেন, শিশুশ্রম বন্ধ করা দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু মানুষের অসহযোগিতার কারণে এটি বন্ধ করা যাচ্ছে না। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
সেমিনারে সুপারিশ করা হয়, শ্রম আইন সংশোধন করে গৃহস্থালির কাজ অন্তর্ভুক্ত করা, কঠোর শাস্তির বিধান করা, বাধ্যতামূলক শিক্ষা ও ন্যূনতম কাজের বয়সের মধ্যে সামঞ্জস্য আনা, অ-বিপজ্জনক কাজের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা এবং বারবার অপরাধীদের জন্য ফৌজদারি শাস্তি নিশ্চিত করা।
বিআলো/তুরাগ