ধনী দেশগুলোর জবাবদিহিতা ও ক্ষতিপূরণ দাবিতে ঢাকায় তৃতীয় জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক: জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী ধনী দেশগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত, ক্ষতিপূরণ আদায় এবং বৈশ্বিক জলবায়ু ন্যায্যতার দাবিতে রাজধানীতে শুরু হয়েছে তৃতীয় জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) ঢাকার শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দিনব্যাপী এ সমাবেশের উদ্বোধন করা হয়।
নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে সরকারি প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক জলবায়ু আন্দোলনকর্মী, গবেষক ও জলবায়ু-ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিসহ প্রায় ২ হাজার মানুষ অংশ নেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে সমাজকল্যাণ এবং নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস. মুরশিদ বলেন, বাংলাদেশ বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে সবচেয়ে কম দায়ী হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম বড় ভুক্তভোগী দেশ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ফ্রন্টলাইন দেশ। অথচ গ্লোবাল নর্থের দেশগুলো সময়মতো পদক্ষেপ না নেওয়ায় দরিদ্র দেশগুলোই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ধনী দেশগুলোর দায়ের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমরা তাদের কাছে ঋণী নই বরং তারা আমাদের কাছে ঋণী। জলবায়ু ন্যায্যতা এখন প্রতিশ্রুতির বিষয় নয় এটি জবাবদিহি ও কার্যকর পদক্ষেপের প্রশ্ন।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনকে আর কেবল প্রযুক্তিগত বা অর্থনৈতিক সমস্যা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই।
তিনি জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর অব্যাহত নির্ভরতার সমালোচনা করে বলেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তিসহ বৈশ্বিক চুক্তির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে এখনও বড় ঘাটতি রয়ে গেছে। তিনি
গ্লোবাল নর্থ প্রায়ই ন্যায্যতার বদলে ঋণ দেয় বলেন। এছাড়াও নারী, আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন।
উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার এবং সঞ্চালনা করেন ধরা’র সদস্য সচিব শরীফ জামিল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং।
শরীফ জামিল বলেন, জলবায়ু ন্যায্যতা বাংলাদেশের জন্য শুধু একটি দাবি নয়, এটি টিকে থাকার প্রশ্ন। নিজেদের ঘরে ন্যায্যতা নিশ্চিত না করতে পারলে বৈশ্বিক পর্যায়ে ন্যায্যতার দাবি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
ফিলিপাইনের জলবায়ু আন্দোলনকর্মী লিডি ন্যাকপিল বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে দ্রুত সরে এসে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য শক্তিশালী বৈশ্বিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ–এর প্রধান নির্বাহী আসাদ রেহমান বলেন, যে সংকট দরিদ্র দেশগুলো সৃষ্টি করেনি, তার অর্থায়নের দায় তাদের ওপর চাপানো অন্যায়। তিনি আরও বলেন, ঋণ ব্যবস্থার মাধ্যমে এখনও গ্লোবাল সাউথ থেকে গ্লোবাল নর্থে বিপুল অর্থ প্রবাহিত হচ্ছে। এই সংকটের মূল্য ধনী দেশগুলোকেই দিতে হবে।
টারা ক্লাইমেট ফাউন্ডেশনের ডেপুটি রিজিওনাল প্রোগ্রাম ডিরেক্টর সাইনান হটন বলেন, উন্নয়নের নামে দূষণ মেনে নেওয়ার সময় শেষ। তিনি জানান, সৌরশক্তি ও ব্যাটারি নির্ভর নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবস্থা অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ইতোমধ্যে বাংলাদেশের কৃষি, মৎস্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও জীবিকায় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। নদী দখল, অব্যবস্থাপনা ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়নে অগ্রগতি আনতে কপ-২৯ এর ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনা করা হয়।
সম্মেলনের আগে এক হাজারের বেশি দেশি ও আন্তর্জাতিক জলবায়ু কর্মী একটি র্যালিতে অংশ নেন।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে আগারগাঁও হয়ে র্যালিটি সম্মেলনস্থলে গিয়ে শেষ হয়। এতে বৈশ্বিক দূষণকারীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। রবিবার সমাবেশের দ্বিতীয় দিনে থিমেটিক সেশন, কর্মশালা ও নেটওয়ার্কিং আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘মিট দ্য প্রেস’ আয়োজন করা হবে।
বিআলো/তুরাগ



