ধানের শীষে গণজোয়ার: মাদারীপুর-৩-এ ইতিহাস বদলাবেন খোকন তালুকদার
দীর্ঘ ১৭ বছর তিনটি নির্বাচন হলেও জনগণের আশা পূরণ হয়নি-ছাত্রনেতা মামুন সিকদার
৩৩ বছরের ইতিহাস ভেঙে দিবেন খোকন তালুকদার-যুবনেতা রিয়াদ কাজী
এফ এইচ সবুজ ও হেমায়েত হোসেন খান, মাদারীপুর:
মাদারীপুর-৩ আসনে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে একই রাজনৈতিক ধারার দাপট। যে ইতিহাসকে “অভেদ্য” বলেই মানতেন স্থানীয়রা-ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বদলাতে যাচ্ছে। ভোটারদের মনোভাব, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সমীকরণ ও মাঠের চিত্র এবার নতুন দিক নির্দেশ করছে।
আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র প্রভাবের কারণে এই আসন দীর্ঘদিন প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন হলেও এবার পরিস্থিতি পাল্টেছে। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী খোকন তালুকদার নির্বাচনী প্রচারণায় নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। এলাকাজুড়ে ভোটারদের মুখে মুখে এখন প্রশ্ন-৩৩ বছরের ইতিহাস কি এবার ভাঙবে?
কালকিনি, ডাসার ও সদর উপজেলার মানুষের সঙ্গে আলাপ থেকে জানা গেছে, উন্নয়ন নিয়ে অসন্তোষ, দীর্ঘদিনের একদলীয় নিয়ন্ত্রণ, গ্রামীণ অবকাঠামোর দুরবস্থা, কৃষি ও জনদুর্ভোগ এবার ভোটে বড় ভূমিকা রাখছে। এলাকাবাসীর নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ আছে। তরুণ ও নারী ভোটাররা পরিবর্তনের আকাক্সক্ষা দেখাচ্ছেন। তারা বলছেন, তাদের ভোট উন্নয়ন, স্বচ্ছতা ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা দেখে দেওয়া হবে।
এলাকায় ব্যাপক প্রচারণা, পোস্টার, পথসভা ও গণসংযোগ চলছে। দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে এই আসনে আওয়ামী লীগের আধিপত্য থাকলেও এবার বিরোধী প্রার্থীর প্রতি অভূতপূর্ব সাড়া দেখা যাচ্ছে।
কালকিনি উপজেলার সাবেক ছাত্রনেতা মামুন সিকদার বলেন, মাদারীপুর-৩ আসনে তৃণমূলের প্রত্যাশা ও জনমানুষের আকাক্সক্ষাকে বাস্তবায়ন করেই বিএনপি আনিছুর রহমান খোকন তালুকদারকে নেতা হিসেবে মনোনীত করেছে। ১৭ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আমরা খোকন ভাইয়ের নেতৃত্বে আন্দোলন করেছি। তৃণমূলের রায় বাস্তবায়ন হওয়ায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও জননেতা তারেক রহমানের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
যুবদলের নেতা রিয়াদ কাজী বলেন, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ এখানে প্রভাবশালী অবস্থান বজায় রাখলেও এবার নির্বাচনে ৩৩ বছরের ইতিহাস ভেঙে দিবেন খোকন তালুকদার। স্থানীয় রাজনীতিকে নতুন সমীকরণে ফেলেছেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভোটার জানান, ‘আমরা এই এলাকার স্থানীয় ভোটার। আমাদের একটাই চাওয়া-নিশ্চিন্তে বাড়িতে ঘুমাতে চাই। খোকন তালুকদারের কাছে আমাদের দাবি, তিনি যেন এমন পরিবেশ নিশ্চিত করেন যেখানে আমরা শান্তিতে ঘুমাতে পারি। তা না হলে তিনি জনগণের সমর্থন হারাবেন।
কালকিনি উপজেলা ছাত্রদল আহ্বায়ক নজরুল হাওলাদার বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর তিনটি নির্বাচন হলেও জনগণের আশা পূরণ হয়নি। একতরফা নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ আসনে দায়বদ্ধ নেতৃত্ব না থাকায় কোনো উন্নয়ন হয়নি। এখন আমাদের একটাই দাবি-একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। বিএনপি থেকে ধানের শীষে মনোনয়ন পেয়েছেন আলহাজ আনিছুর রহমান খোকন তালুকদার। কালকিনি-মাদারীপুর-৩-এর মানুষ এবার স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন উন্নয়ন প্রত্যাশায়।
কালকিনি উপজেলা ছাত্রদল সদস্য সচিব সাইফুল মুন্সি বলেন, মাদারীপুর-৩ একটি অবহেলিত এলাকা-রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ও শিক্ষা ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নবঞ্চিত। গত ১৭ বছর সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়ায় জনগণের প্রতিনিধি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ ছিল না। এখন দেশ গণতান্ত্রিক পথে ফিরেছে। ২০২৬ সালের নির্বাচনে বিএনপি মাদারীপুর-৩ আসনে সবচেয়ে যোগ্য ও ত্যাগী নেতা আনিছুর রহমান খোকন তালুকদারকে মনোনয়ন দিয়েছে। মনোনয়ন ঘোষণার পর কালকিনি ও পুরো আসনে ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। খোকন ভাই নির্বাচিত হলে-শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিল্প-বাণিজ্যসহ সমগ্র মাদারীপুর-৩-এ উন্নয়ন ফিরবে। ক্ষমতায় না থেকেও তিনি বহু অসহায় মানুষের পাশে ছিলেন। মাদারীপুর-৩ এখন পরিবর্তনের অপেক্ষায়-এ পরিবর্তনের নেতৃত্ব দেবেন আনিছুর রহমান খোকন তালুকদার।
ডাসার উপজেলার শ্রমিক নেতা শাহ আলম ফকির বলেন, মাদারীপুর-৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী আনিছুর রহমান খোকন তালুকদার দীর্ঘ ১৭ বছর রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। ডাসার ও কালকিনীর মানুষ তার কর্মীবান্ধব নেতৃত্ব ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে তাকে নিজের মানুষ হিসেবেই মনে করে। এই এলাকার প্রতিটি মানুষের একটাই প্রত্যাশা-খোকন তালুকদারের মতো যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতৃত্বই মাদারীপুর-৩-এর উন্নয়ন ও অধিকার রক্ষায় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করুক।
আনিসুর রহমান খোকন তালুকদার বলেন: এই সিদ্ধান্ত একদিনে হয়নি। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য কাজ করছি। স্থানীয় নেতাকর্মীরা যেসব রিপোর্ট দিয়েছেন, দলের মূল্যায়নে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এটা আমার একার সিদ্ধান্ত নয়-এটা দলের সিদ্ধান্ত। আমরা তো সংগঠন করি। প্রতিটি গ্রামে আমাদের কর্মী আছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শের সৈনিকরা আছেন। আমাদের যেতে হয় না-তারা নিজেরাই ছুটে আসে দলের হয়ে কাজ করতে। আমি ১৯৯৪ সাল থেকে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে আছি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি দিয়ে শুরু করেছি। বিরোধী দলে থেকেও দল ছাড়িনি।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা রাস্তাঘাট। উন্নয়নের ছোঁয়া এখানে খুব একটা লাগেনি। অনেক রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট বেহাল। কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলো নতুন করে সংস্কার করা জরুরি। স্বাস্থ্য খাতে জনবল সংকট সারা দেশেই। আমরা চাই আমাদের এলাকায় ৫০০ শয্যার একটি হাসপাতাল হোক। পাশাপাশি বেকারত্ব দূর করতে আমরা শিল্পনগরী গড়ে তুলতে চাই। ভৌগোলিক কারণে আমাদের অবস্থান সুবিধাজনক-এখানে শিল্প গড়ে উঠলে স্থানীয় যুবকরা উদ্যোক্তা ও শ্রমিক। ধানের শীষ নিয়ে এখন আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে যাচ্ছি। ছাত্র থেকে শুরু করে ৭৫ বছরের বৃদ্ধও আমাদের সঙ্গে থাকে।
তিনি আরও বলেন, পুরুষ-মহিলা সবাই ভোট দেওয়ার অপেক্ষায় আছে। নির্বাচনে অবশ্যই বাজেট লাগে। আমরা যে সীমাবদ্ধতার মধ্যে আছি, সেখানেই চেষ্টা করছি। ছাত্র রাজনীতি থেকেই সংগ্রাম করে আজ এখানে এসেছি। কর্মী ও শুভাকাক্সক্ষীদের সহযোগিতায় আমরা নির্বাচন পার করতে পারব। তরুণরা ছোটখাট শিল্পে উদ্যোক্তা হবে। বেকারত্ব দূর করতেই আমরা শিল্পনগরী পরিকল্পনা করছি। পরিবর্তন জনগণ অবশ্যই চায়। অত্যাচার, জুলুম, গুম, অস্বচ্ছ নির্বাচন সবকিছু থেকেই মুক্তি চায় মানুষ। ৩ লাখ ৮০ হাজার ভোটার-সবাইকেই আমি ভোটার মনে করি। কাউকে খারাপ বলছি না। সবার কাছেই যাবো। আমি ভালো হলে সবই ভালো হবে।
বিআলো/এফএইচএস



