নদী-খাল ও ব্রাহ্ম সমাজের ঐতিহাসিক মন্দির রক্ষায় মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান
নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলে নদী, খাল-বিল, জলাশয়, ব্রাহ্ম সমাজের ঐতিহ্যবাহী মন্দির ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন করেছে জেলা নাগরিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি।
৩ সেপ্টেম্বর বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জেলা শহরের নিরালা মোড় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ঘন্টাব্যাপী এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে দল-মত নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সচেতন নাগরিক অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধনের পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। পাশাপাশি পুলিশ সুপার, পৌর প্রশাসক ও গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে স্মারকলিপির অনুলিপি দেওয়া হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হক মোহন, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খান মোহাম্মদ খালেদ, সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নূর মোহাম্মদ রাজ্য, পরিবেশ সৈনিক ফজলে সানি, সদস্য হাসরত খান ভাসানী, ব্যবসায়ি নেতা আবুল কালাম মোস্তফা লাবু, ফরহাদ হোসেনসহ অন্যান্য সদস্যরা। এছাড়াও হিউম্যান রাইটস্ রিভিউ সোসাইটি টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি মোঃ রাশেদ খান মেনন, সাংস্কৃতিক কর্মী সাজু মেহেদী, তালহা আল মাহমুদ, জাকির হোসেন, করটিয়া ব্যবসায়ি সমিতির নেতা নাসির উদ্দিন রাজু, ব্যবসায়ী নেতা সুমন মুন, কালিহাতী প্রেসক্লাবের আহবায়ক রশিদ আব্বাসী, মিল্টন হক, নাজমুল হাসান বাবু, অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, টাঙ্গাইল জেলার নদী, খাল ও জলাশয় দখল, দূষণ ও অব্যবস্থাপনার কারণে বিলুপ্তির পথে। শহরের ভিক্টোরিয়া রোডের শ্যামাবাবুর খাল, ব্রাহ্ম সমাজের ঐতিহাসিক মন্দির এবং অন্যান্য প্রাচীন ধর্মীয় ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংসের পথে। নদী ও খাল দখল ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে, যা কৃষি, পরিবেশ, প্রাণপ্রকৃতি ও জনজীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি।
এছাড়া বক্তারা বলেন, দায়িত্বহীন কর্মকর্তাদের কারণে শহরে অনুমোদনহীন বহুতল ভবন বেড়ে চলেছে, যা ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে। অনিয়মিত বালু উত্তোলন এবং বালুমহল ঘোষণার কারণে নদীর প্রকৃত গতিপথ হারাচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও অব্যবস্থাপনার কারণে যানজট এবং সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের দাবি, শ্যামাবাবুর খালসহ সকল নদী-খাল অবৈধ দখল মুক্ত করে খনন ও পরিচ্ছন্ন করা হোক। প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণের জন্য কার্যকর আইন প্রয়োগ ও স্থানীয় প্রশাসনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হোক। ধর্মীয় ও প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে সংরক্ষণ ও পুনর্নির্মাণ করা হোক। জনস্বার্থে নাগরিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও গণমাধ্যমকে যুক্ত করে দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হোক।
বক্তারা সকলের প্রতি আহ্বান জানান, টাঙ্গাইল জেলার নদী, খাল, জলাশয়, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও ধর্মীয় ঐতিহ্য রক্ষায় সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসতে। তারা আশা প্রকাশ করেন, জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো এই ন্যায্য দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করবে।
বিআলো/এফএইচএস