নন-লাইফ বীমা ব্যবসায় এজেন্ট কমিশন বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক: নন-লাইফ বীমা ব্যবসায় এজেন্ট কমিশন বাতিলের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এই সিদ্ধান্ত আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। একই তারিখ থেকে নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর এজেন্ট লাইসেন্সও স্থগিত করা হবে, জানিয়েছে সূত্র।
নন-লাইফ বীমা খাতে এজেন্ট কমিশন বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু করতে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) আবেদনের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) আইডিআরএর সভাকক্ষে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং বাস্তবায়নের নির্দেশনা ও প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে শিগগিরই একটি প্রজ্ঞাপন জারি করার কথা বলা হয়। পাশাপাশি দেশের গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কমিশন বাতিলের বিষয়টি জানানো হবে। দেশের বাণিজ্যিক সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গেও এই সিদ্ধান্তের বিষয় জানাতে আইডিআরএ বৈঠক করবে।
আইডিআরএ জানিয়েছে, নন-লাইফ বীমা বাজারে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, ব্যবসায়িক অনিয়ম কমানো এবং শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সভায় বলা হয়, এজেন্ট লাইসেন্স স্থগিত থাকলেও প্রয়োজনে নন-লাইফ কোম্পানিগুলো উন্নয়ন কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে পারবে।
তবে কমিশন প্রদানের অমিল বা অন্য কোনো অনিয়ম প্রতিরোধে আইডিআরএ ও বিআইএ যৌথভাবে দুটি ভিজিল্যান্স টিম গঠন করবে। এছাড়া ব্যাংক কর্মকর্তাদের কমিশন পাওয়া বা কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ বন্ধ করতে শিগগিরই বিআইএ সভাপতি ও আইডিআরএ চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
সভায় বিআইএ’র সভাপতি সাঈদ আহমেদ, সকল নন-লাইফ বীমা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা তাদের দায়িত্বশীল প্রতিনিধি, আইডিআরএর সদস্যবৃন্দ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভার শেষে উপস্থিত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা এজেন্ট কমিশন ছাড়া ব্যবসা পরিচালনার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।
আইডিআরএ’র অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে বলা হয়, “বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৫ নভেম্বর বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদর দপ্তরে নন-লাইফ বীমা খাতে এজেন্ট কমিশন বন্ধের জন্য আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভাপতিত্ব করেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম আসলাম আলম।”
সম্প্রতি নন-লাইফ বীমা ব্যবসায় এজেন্ট কমিশন ১৫ শতাংশের পরিবর্তে শূন্য শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব বিআইএ আইডিআরএকে চিঠি প্রদান করে। এই প্রস্তাবের আলোকে ২৫ নভেম্বর বিকেল ৪টায় কর্তৃপক্ষের সভাকক্ষে অংশগ্রহণকারীদের বৈঠক ডাকা হয়। আইডিআরএর উপপরিচালক (নন-লাইফ) মো. সোলায়মান স্বাক্ষরিত নোটিশে বিআইএ’র নির্বাহী কমিটির নন-লাইফ থেকে নির্বাচিত সকল সদস্য এবং দেশের সব নন-লাইফ বীমা কোম্পানির প্রধান নির্বাহীদের উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানানো হয়।
আইন ও নীতিমালার সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা:
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কমিশন শূন্য করতে হলে বীমা আইন ২০১০ এবং বীমা এজেন্ট (নিয়োগ, নিবন্ধন ও লাইসেন্স) প্রবিধানমালা ২০২১ উভয়ই সংশোধন অপরিহার্য। কারণ, বর্তমান আইনের ৫৮(১) ধারা অনুযায়ী, এজেন্ট বা ব্রোকার ছাড়া অন্য কাউকে প্রিমিয়াম সংগ্রহে পারিশ্রমিক দেওয়া যাবে না। ফলে নন-লাইফ কোম্পানিগুলোতে উন্নয়ন কর্মকর্তাদের প্রিমিয়ামের বিপরীতে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলেন, আইন ও প্রবিধান হালনাগাদ না করে হঠাৎ কমিশন শূন্য করলে বাজারে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। ২০২১ সালের সিদ্ধান্তের মতো ব্যবসায়িক বৈষম্যও দেখা দিতে পারে। এছাড়া, কমিশন শূন্য করার পর বাজারে প্রতিযোগিতা, ব্যবসা সংগ্রহ পদ্ধতি এবং এজেন্টদের ভূমিকা নিয়ে নতুন নীতিমালা প্রণয়নের প্রয়োজন হবে।



