নবীজির প্রিয় কালিজিরা আজ আধুনিক চিকিৎসার চমক
বিআলো ডেস্ক: নবী করিম (সা.)-এর বাণীতে কালিজিরাকে বলা হয়েছে এমন এক বীজ, যাতে মৃত্যু ছাড়া সব রোগের আরোগ্য রয়েছে। যুগে যুগে মুসলমানদের আস্থা ও চিকিৎসার অংশ ছিল এই কালো বীজ। আজ আধুনিক বিজ্ঞানও বলছে, নবীজির (সা.) সেই ঘোষণা নিছক ধর্মীয় বিশ্বাস নয়, এর রয়েছে বাস্তব বৈজ্ঞানিক ভিত্তি।
নবীজির (সা.) বাণীতে কালিজিরা-
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- “কালিজিরা খাও, এতে মৃত্যু ছাড়া সব রোগের নিরাময় আছে।” – সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৬৮৮; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২২১৫
চিকিৎসাবিজ্ঞানে এর নাম Nigella sativa, আরবিতে পরিচিত হাব্বাতুস সাওদা (الحَبَّةُ السَّوْدَاءُ) নামে। নবীজির (সা.) দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসেও এটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আয়েশা (রা.)-এর বর্ণনায় পাওয়া যায়, নবীজি (সা.) নিজেই কালিজিরা ব্যবহারে উৎসাহ দিতেন।
যদিও কোরআনে সরাসরি কালিজিরার নাম উল্লেখ নেই, আল্লাহ তাআলা বলেন- “আমি প্রতিটি রোগের জন্য নিরাময় সৃষ্টি করেছি।”- সুরা শু‘আরা, আয়াত: ৮০
নবীজির (সা.) খাদ্যাভ্যাসে কালিজিরার স্থান-
খেজুর, যব, মধু, দুধ, অলিভ তেল এবং কালিজিরা- এসব ছিল নবীজির (সা.) নিয়মিত খাদ্যতালিকার অংশ। তিনি প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে চিকিৎসা করতেন। কালিজিরা ছিল তাঁর ঘরোয়া ওষুধের অন্যতম নির্ভরযোগ্য উপাদান।
চিকিৎসায় কালিজিরার উপকারিতা-
তিব্বে নববী বা প্রফেটিক মেডিসিনে কালিজিরাকে বলা হয় ‘উপশমের মূল উপাদান’। ইবনে কাইয়্যিম (রহ.) লিখেছেন-
“কালিজিরা ঠান্ডা ও গরম- উভয় প্রকার রোগেই উপকারী। এটি পেট পরিষ্কার করে, ক্ষুধা বাড়ায় ও শরীরে প্রাণশক্তি জোগায়।” – (আয-যাদুল মা‘আদ, ৪/৩০২)
আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে কালিজিরা-
বিজ্ঞানীরা আজ একমত- কালিজিরা কেবল ঐতিহ্য নয়, এটি প্রকৃতির এক শক্তিশালী ওষুধি বীজ। এর প্রধান সক্রিয় উপাদান থাইমোকুইনোন (Thymoquinone), যা দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং নানা জটিল রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
গবেষণায় প্রমাণিত কিছু কার্যকারিতা-
১. ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে
২. প্রদাহ ও ব্যথা কমায়
৩. রক্তে গ্লুকোজ ও ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
৪. ক্যানসার সেলের বৃদ্ধি রোধ করে
৫. রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে
৬. কাশি, সর্দি ও হাঁপানিতে উপকারী
ব্যবহারের উপায়-
বিশেষজ্ঞদের মতে, কালিজিরা প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিকের মতো কাজ করে, তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত।
* সকালে খালি পেটে আধা চা-চামচ কালিজিরা খাওয়া যেতে পারে।
* এক চা-চামচ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে উপকারিতা বাড়ে।
* ঠান্ডা বা সর্দিতে কালিজিরার তেল গরম পানির সঙ্গে কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে গ্রহণ করা যায়।
* গর্ভবতী নারী বা গুরুতর রোগীর ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
নবীজি (সা.) আমাদের শুধু আত্মিক নয়, শারীরিক স্বাস্থ্যেরও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। কালিজিরা সেই শিক্ষা ও বিজ্ঞানের অসাধারণ মিলন।
আধুনিক গবেষণাও বলছে- কালিজিরা সত্যিই “প্রকৃতির অলৌকিক বীজ”, যা মানুষের শরীর, মন ও আত্মাকে নবজীবন দিতে পারে।
বিআলো/শিলি



