নিউইয়র্কে বৈঠক সফল, গাজায় যুদ্ধবিরতি তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের আস্থা
নিজস্ব প্রতিবেদক: নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের ফাঁকে মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান জানিয়েছেন, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ শেষ করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে আরব ও মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক ‘ফলপ্রসূ’ হয়েছে। তিনি বৈঠকের ফলাফলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। ট্রাম্পও বৈঠককে সফল হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, ইসরায়েলকে ছাড়া সব শক্তিধর দেশের নেতারা এতে অংশ নিয়েছেন, যারা সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম।
তবে গাজা সিটিতে ইসরায়েলের হামলা এখনও অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন ডজন ডজন ফিলিস্তিনি নিহত হচ্ছেন, এবং হাজার হাজার মানুষকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
বৈঠকে অংশ নেন মিসর, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতারা। যদিও বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি, তবে মার্কিন গণমাধ্যম অ্যাক্সিওস জানিয়েছে, ট্রাম্প চেয়েছিলেন আরব ও মুসলিম দেশগুলো গাজায় সেনা পাঠাতে সম্মত হোক। এতে ইসরায়েল উপত্যকা থেকে সরে যাবে এবং পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনের জন্য অর্থের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে।
আমিরাতের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ডব্লিউএএম জানিয়েছে, বৈঠকের মূল লক্ষ্য ছিল গাজার যুদ্ধ বন্ধ করা ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা। এছাড়াও বৈঠকে গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তি এবং মানবিক সংকট মোকাবিলার বিষয়গুলো অগ্রাধিকারে ছিল।
পরিকল্পনায় ইসরায়েলের সরাসরি কোনো অংশ নেই, তবে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকেও এতে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে, যদিও ইসরায়েল আগেই জানিয়েছে এটি মানবে না। হামাসের কোনো ভূমিকা নেই; যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল বলছে, হামাসকে নিরস্ত্র ও নির্মূল করতে হবে।
এই বৈঠক এমন সময় অনুষ্ঠিত হলো, যখন গাজায় দুই বছরের যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে এবং বহু দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এসব স্বীকৃতিকে সমালোচনা করেছে। গাজায় এ পর্যন্ত অন্তত ৬৫,৩৮২ জন নিহত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রমেই একা হয়ে পড়ছে। ফ্রান্স, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগালসহ অন্যান্য দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলেও যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এটি হামাসকে ‘হত্যাকাণ্ডের পুরস্কার’ দেওয়ার মতো। ট্রাম্প তার জাতিসংঘ বক্তৃতায় যুদ্ধের ‘তাৎক্ষণিক’ সমাপ্তির আহ্বান জানান, কিন্তু গাজার মানবিক সংকট নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্র পাওয়া কোনো পুরস্কার নয়, বরং অধিকার।
আল-জাজিরার কূটনৈতিক সম্পাদক জেমস বেস বলেন, নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলের প্রধান সমর্থক যুক্তরাষ্ট্র। অর্থ ও অস্ত্রের সরবরাহও তাদের কাছ থেকেই আসে। তাই একমাত্র যিনি পরিস্থিতি বদলাতে পারেন, তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এর আগে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) ফ্রান্স ও সৌদি আরব আয়োজিত জাতিসংঘের এক সম্মেলনে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো ঘোষণা দেন, যে তার দেশ গাজায় শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাতে প্রস্তুত।
বিআলো/এফএইচএস