নির্বাচন দেরি হলে পতিত ফ্যাসিবাদ সুযোগ পাবে আলোচনা সভায় : সালাহউদ্দিন আহমদ
পিআর পদ্ধতিতে দেশের উন্নয়ন হয় না
নির্বাচনকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার ষড়যন্ত্রে জনগণ বিভ্রান্ত হবে না : রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, দেশে যদি নির্বাচন বিলম্বিত হয়, তাহলে ফ্যাসিবাদের উৎপত্তি হবে। পতিত ফ্যাসিবাদ সুযোগ পাবে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। নির্বাচন বানচাল হলে অগণতান্ত্রিক শক্তির উত্থান হবে বলেও তিনি সতর্ক করেন। গতকাল শনিবার রাজধানীতে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন সেমিনার হলে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (এনডিপি) ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন বলেন, পিআর মানে পার্মানেন্ট রেস্টলেসনেস। এ ব্যবস্থায় স্থিতিশীল সরকার ব্যবস্থা থাকে না। কয়েক মাস পরপর প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন হয়, সরকার পরিবর্তন হয়। এতে কোনো দল জনগণের কাছে দেওয়া অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে পারে না, দেশের উন্নয়নও হয় না। বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রকে আমরা এমন অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিতে পারি না। তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডেই পিআরের বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে।
যারা পিআর-পিআর করছে, তাদের সঙ্গে থাকা দলের অনেকে ‘আমি-ডামি’ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। তারা আওয়ামী লীগের সব কর্মকাণ্ডে বাতাস করেছে। বিএনপির এই নেতা প্রশ্ন রাখেন, পিআর পদ্ধতিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কি কোনো জায়গা আছে? তাদের সাংবিধানিক অধিকার কি থাকবে না? সর্বশেষ জরিপের তথ্যকে অবিশ্বাসযোগ্য আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, যেখানে দেশের ৫৬ শতাংশ মানুষই পিআর কি তা বোঝে না, সেখানে বলা হচ্ছে ৭০ শতাংশ মানুষ পিআর চায়। এটা বিভ্রান্তি ছড়ানোর শামিল। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যারা হীন রাজনৈতিক উদ্দেশে, দলীয় স্বার্থে জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে, তাদের বলবো জনগণকে বিভ্রান্ত করবেন না। নির্বাচন বিলম্বিত বা বানচালের চেষ্টা করা মানে অগণতান্ত্রিক শক্তিকে উত্থানের সুযোগ দেওয়া। সংবিধান সংস্কার প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, সংবিধান ছেলে খেলা নয়। ১৮ কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে আমরা ছিনিমিনি খেলতে পারি না। সংবিধানকে নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চলতে দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, ১৯৭২ সালের সংবিধানও গণপরিষদের মাধ্যমে প্রণীত হয়েছিল, কিন্তু এক বছরের মধ্যে সংশোধন আনতে হয়েছিল। তাই নতুন সংবিধান প্রণয়ন করলেই তা স্থায়ী হয়ে যাবে, এমন ধারণা ভুল। গণতান্ত্রিক চর্চার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, তর্ক-বিতর্ক হবে, বহুমত থাকবে, কিন্তু জাতীয় ইস্যুতে ঐকমত্য তৈরি করতে হবে। যাতে জনগণ বিজয়ী হয়, এদেশের মানুষ বিজয়ী হয়। আলোচনায় তিনি গাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানান এবং জাতিসংঘকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনডিপি চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ্ আল হারুন (সোহেল)। বক্তব্য রাখেন সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদসহ এনডিপি নেতারা।
ফ্লোটিলায় যোগ দেওয়া শহিদুল আলমকে তারেক রহমানের অভিনন্দন : গাজামুখী নৌবহরে যোগ দেওয়ার সাহসী উদ্যোগের জন্য দেশের খ্যাতিমান আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলমকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল শনিবার নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, গাজা অভিমুখী ফ্লোটিলায় শহিদুল আলমের অংশগ্রহণ শুধু সংহতির প্রকাশ নয়, এটি ন্যায়ের পক্ষে বিবেকের শক্তিশালী উচ্চারণ। বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরে তিনি প্রমাণ করেছেন, এই জাতি কখনো নিপীড়ন ও অবিচারের কাছে মাথা নত করেনি এবং করবে না। তারেক রহমান আরো উল্লেখ করেন, বিএনপি সবসময় শহিদুল আলমের পাশে থাকবে এবং ফিলিস্তিনের জনগণের ন্যায়সংগ্রামে তাদের সমর্থন জানিয়ে যাবে। গাজায় সংবাদ ও তথ্য অবরোধ ভাঙার উদ্দেশ্যে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (এফএফসি) মিডিয়া ফ্লোটিলায় যোগ দিয়েছেন শহিদুল আলম। ইসরায়েলি অবরোধ ভেঙে গাজায় পৌঁছানোর চেষ্টায় থাকা জাহাজ কনশান্স থেকে গত শুক্রবার দুপুরে ফেসবুক লাইভে বক্তব্য দেন তিনি। কনশান্স হলো ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) ও থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজার (টিএমটিজি) নৌবহরের একটি জাহাজ। এএফসি বৈশ্বিক উদ্যোগ ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার’ অংশ হিসেবে অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে কাজ করছে। শহিদুল আলম জানান, আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, যেকোনো বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে গাজায় পৌঁছাবো। আমাদের লক্ষ্য গাজা এবং আমরা কোনো প্রতিবন্ধকতাকে মেনে নেবো না।
১৬ বছর জনগণ ভোট দিতে পারেনি : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সামনের ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে-এটাই দেশের জনগণের প্রত্যাশা। জনগণ ভোট দিতে প্রস্তুত, তাই নতুন কোনো ইস্যু তৈরি করে জনমতকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা যারা করছেন, তারাও জনগণের কাছে ধরা পড়ে যাবেন। গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের উদ্যোগে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় সংগঠনের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শাহরিন ইসলাম তুহিনসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। রিজভী বলেন, গত ১৬ বছর জনগণ ভোট দিতে পারেনি। শেখ হাসিনা ভোটে তালা ঝুলিয়ে রেখেছিলেন, নির্বাচনের নামে প্রহসন করেছেন। গরু-বাছুরকে ভোটকেন্দ্রে যেতে দেখা গেছে, কিন্তু ভোটারদের যাওয়ার সুযোগ দেননি। দিনের ভোট রাতে হয়েছে, র্যাব, ছাত্রলীগ, যুবলীগ দিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়া ঠেকানো হয়েছে। বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, এবারের নির্বাচন কমিশন এবং ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই নিশ্চিত করবে জনগণের ভোটাধিকার। এই সরকার নিরপেক্ষ থাকবে, কোনো পক্ষ নেবে না। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে একটি বিশেষ ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলের সমর্থক আমলাদের বসানো হয়েছে-এটা সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বড় বাধা। আমরা প্রত্যক্ষ করছি, জনগণও বুঝতে পারছে। ড. ইউনূসের প্রতি আস্থা রেখে বলবো, এমন ব্যক্তিদের দায়িত্ব দিন যারা নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করবেন। তিনি অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনার দল নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, পুলিশ ব্যবহার করে দেশে একদলীয় ফ্যাসিবাদ কায়েম করা হয়েছে। কিন্তু জনগণ নতুন করে আরেকটি ফ্যাসিবাদের শাসন দেখতে চায় না। জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ধারাবাহিকতা তুলে ধরে রিজভী বলেন, বিএনপি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে জাতিকে একদলীয় দুঃশাসন থেকে মুক্ত করেছিল। এরপর বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরাচার এরশাদকে পরাজিত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। আর ৫ আগস্টের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তারেক রহমান জাতিকে নতুন করে অনুপ্রাণিত করেছেন। আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অভিযোগ এনে তিনি বলেন, জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করতে আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদীরা নানা চক্রান্ত করছে। ষড়যন্ত্র থেমে নেই, বরং তা বাস্তবায়নের জন্য মাস্টারপ্ল্যান চলছে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ সব অন্ধকার দূর করে জাতীয়তাবাদের পতাকা উঁচু রাখবে-এটাই বারবার প্রমাণিত হয়েছে। সম্প্রতি দুর্গাপূজা নিয়ে গুজব এবং ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, গত কয়েকদিন আগে দুর্গাপূজা অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে। হিন্দু-মুসলমান সবাই মিলে মণ্ডপ পাহারা দিয়েছে। এটাই আমাদের সম্প্রীতির ঐতিহ্য। ভারতে ড. ইউনূসের মুখাবয়ব দিয়ে তৈরি ‘অসুরের’ মূর্তির সমালোচনা করে রিজভী বলেন, এটি অত্যন্ত নিম্ন রুচির পরিচয় ও অপসংস্কৃতির প্রকাশ। ভারত সঙ্গীত-শিল্প-সংস্কৃতির দেশ, এমন কাজ তারা করবে-এটা আমরা কল্পনাও করিনি। রিজভী বলেন, মোদি সাহেব যদি ভারতে মধ্যযুগীয় অন্ধকার নামিয়ে আনেন, আমরা বাংলাদেশের মানুষ সেটি গ্রহণ করবো না। আমাদের দেশে বিভাজন তৈরি করা যাবে না। তারেক রহমান সুস্পষ্টভাবে বলেছেন-আমরা সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ থাকবো। এক প্রশ্নের উত্তরে রিজভী বলেন, ১৯৯১ সালে শেখ হাসিনা ভারত থেকে ফিরে এসে বলেছিলেন, বিএনপি ১০টির বেশি আসন পাবে না। কিন্তু জনগণ সব জানে, কারা বিগত ১৬ বছর ধরে আপসহীন লড়াই করেছে। ভ্রান্ত তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। ধানের শীষ তাদের প্রিয় প্রতীক, এটিকে মিথ্যা প্রচার দিয়ে দুর্বল করা যাবে না।