নিষিদ্ধ কীটনাশকের ভয়াবহতা: জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ চরম ঝুঁকিতে
মীর তোফায়েল হোসেন, রাজশাহী: কৃষিতে নিষিদ্ধ ও বিপজ্জনক কীটনাশকের ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন কৃষিপ্রধান এলাকায়। এতে চরম ঝুঁকিতে পড়েছে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ। নিষিদ্ধ এসব বিষাক্ত কীটনাশক কৌশলে ভিন্ন নামে বাজারে বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। সাধারণ কৃষকরা না জেনেই এসব ব্যবহার করছেন, যার পরিণতিতে তারা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, পাশাপাশি ক্ষতির মুখে পড়ছে পরিবেশ।
বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজিনাস নলেজ (বারসিক) পরিচালিত মাঠ পর্যায়ের এক অনুসন্ধানমূলক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন ভয়াবহ চিত্র।
বুধবার রাজশাহীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়ক নৃবিজ্ঞানী মোঃ শহিদুল ইসলাম এবং নির্বাহী পরিচালক পাভেল পার্থ।
গবেষণা অনুযায়ী, রাজশাহীর ৮টি উপজেলার ১৯টি কৃষিপ্রধান গ্রামে ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে তথ্য সংগ্রহ, কেস স্টাডি ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। এতে দেখা যায়, ৬৮ শতাংশ কৃষক নিষিদ্ধ কীটনাশক ব্যবহার করছেন এবং ৯৩.৩৭ শতাংশ কৃষক জানেনই না যে তারা ক্ষতিকর বা নিষিদ্ধ বালাইনাশক ব্যবহার করছেন।
বারসিক জানায়, বাজারে ‘জিরো হার্ব ২০ এসএল’ (প্যারাকোয়াট), ‘ফুরাডান-৫জি’ (কার্বারাইল), ‘গ্যাস ট্যাবলেট’ (অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড), ‘তালাফ ২০ এসএল’ (প্যারাকোয়াট) সহ নানা নামের লেবেলে নিষিদ্ধ ও মারাত্মক বিষাক্ত কীটনাশক বিক্রি হচ্ছে। এসবের প্রকৃত জেনেরিক নাম বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এগুলোর অনেকগুলো বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, নিষিদ্ধ কীটনাশকের ব্যবহার শুধু শারীরিক ক্ষতির কারণই নয়, আত্মহত্যার মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৩২ জনের মধ্যে ৩ জন কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন।
স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে: কিডনি বিকলতা, স্নায়ুবিক সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা, বমি ইত্যাদি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে, এ ধরনের কীটনাশক ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ শ্রেণিতে পড়ে।
পরিবেশগত দিক থেকেও ক্ষতি বিশাল। পুকুরের মাছ, ব্যাঙ, মৌমাছি ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। মাটি ও পানির গুণগত মানও দিন দিন অবনতি ঘটছে।
বারসিক-এর সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, নিষিদ্ধ কীটনাশক বাজারজাত বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ, মাঠ পর্যায়ে নজরদারি জোরদার, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও কীটনাশকের তথ্য নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু, পরিবেশবান্ধব কৃষিপদ্ধতির প্রসার, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ তহবিল, গণমাধ্যম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি।
এই গবেষণা সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জন্যও একটি বড় সতর্কবার্তা। সময় এসেছে বিষমুক্ত কৃষি ও নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের।
বিআলো/এফএইচএস