নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই, কমলাপুরে ট্রেনে ফিরতি যাত্রীদের ঢল
বিশেষ প্রতিনিধি: চোখ রাঙাচ্ছে করোনা তারপরেও স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বালাই নেই। মাক্স ছাড়াই সাধারণ মানুষের অবাধ চলাচল ২০২০ সালের কথাটি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। সে সময় করোনায় বেশ কয়েক হাজার মানুষ মারা যান। কেবলমাত্র উদাসীনতা দেখিয়ে হাজারো মানুষ স্বেচ্ছায় এই রোগটি ডেকে নেন। এ সময় অনেক শিক্ষিত মানুষই করোনা বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করে নিজেরাই জাতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেন। যার খেসারত দিতে হয়েছে কয়েক হাজার জীবনের বিনিময়ে।
সম্প্রতি করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় মাস্ক পরার জন্য নাগরিকদের অনুরোধ জানিয়েছে। বিশেষত বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের এই সাবধানতার কোন দাম দেওয়া হচ্ছে না। আজ ঈদুল আজহার ষষ্ঠ দিনে কমলাপুরে ট্রেনে ফিরতি যাত্রীদের ঢল নামে। করোনা সতর্কতা হিসেবে রেলওয়ের দেওয়া মাস্ক পরার নির্দেশনা তাদের কেউ মানেনি। এমনকি উপেক্ষিত থেকেছে স্বাস্থ্যবিধি। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষেরও দৃশ্যমান কোনও পদক্ষেপ নেই।
আজ বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দুপুর ১২টায় রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে এ চিত্র। অথচ ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মাইকিং করে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা হতো। এর আগে, গত ৮ জুন পবিত্র ঈদুল আজহার পর ট্রেনের ফিরতি যাত্রায় মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে যাত্রীদের অনুরোধ জানিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় মাস্ক পরার জন্য নাগরিকদের অনুরোধ জানিয়েছে। বিশেষত বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে ঈদ-পরবর্তী ট্রেনযাত্রায় সব যাত্রীকে মাস্ক পরা এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের অনুরোধ জানিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। কমলাপুর রেলস্টেশনে তেমন কোনও পদক্ষেপ চোখে পরেনি। হাতেগোনা কয়েকজন মাস্ক পরলেও বেশিরভাগের ক্ষেত্রে তা অনুপস্থিত।
ট্রেনের সাধারণ নন-এসি বগিতে গাদাগাদি করে ঢাকায় আসছেন স্ট্যান্ডিং টিকিটের যাত্রীরা। কেউই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। দুপুর ১২টায় রাজশাহী থেকে ঢাকায় আসা আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী পঙ্কজ কবির বলেন, তিনি পুরো রাস্তা দাঁড়িয়ে এসেছেন। গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আসলেও মুখে মাস্ক নেই। জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কোনও নির্দেশনা পাননি।
রংপুর থেকে আসা যাত্রী মিস বন্যা বলেন, মাস্ক পরার বিষয়ে কিছু জানেন না। তাই পরেননি। শুধু তাই নয় টিকিট চেকের দায়িত্বে থাকা টিটিদের কারও মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। ট্রেনে খাবারও বিক্রি হচ্ছে খোলামেলা।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মো. সাজেদুল ইসলাম বলেন, যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অচিরেই মাস্ক পরাসহ সচেতনতা কার্যক্রম শুরু হবে বলে তিনি জানান।
যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদে ঢাকামুখী মানুষের চাপ:
ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগ দিতে ঢাকায় ফিরছেন প্রিয়জনের সঙ্গে গ্রামে ঈদ করতে যাওয়া মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর অন্যতম প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ এলাকা ঘুরে ঢাকামুখী মানুষের ভিড় দেখা গেছে। ঈদের পর আজই ঢাকায় ফেরা যাত্রীর চাপ সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদসহ আশেপাশের এলাকার সড়ক ও মহাসড়কে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাত্রী পূর্ণ একের পর এক বাস এসে থামছে। বাস থেকে নেমে যাত্রীরা বাসার পথ ধরছেন লোকাল বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা কিংবা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে। যাত্রাবাড়ী-সায়দাবাদ এলাকা এখন লাগেজ, ব্যাগ, বস্তা বহনকারী গ্রাম থেকে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের আনাগোনায় মুখর। অনেককেই গ্রামে কোরবানি দেওয়া গোশত বহন করতেও দেখা গেছে।
যাত্রাবাড়ী ও সায়দাবাদে ঢাকামুখী মানুষের চাপ পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোর হওয়ার আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন গন্তব্য থেকে বিপুল সংখ্যক বাস যাত্রী নিয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করতে শুরু করে। এখন পর্যন্ত রাজধানীতে ফিরতে সড়কে যানজট কিংবা বড় কোন সমস্যার কথা শোনা যায়নি।
বরিশাল ও খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে যাত্রীরা এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে পোস্তগোলা সেতু পার হয়ে জুরাইন, দোলাইপাড়, যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদে নামছেন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম, সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে যাত্রীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড, মেডিক্যাল, রায়েরবাগ, শনির আখড়া, কাজলা, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ এসে নামছেন। অনেকেই বাসে এসে সায়েদাবাদে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ওপরে নামছেন। ফ্লাইওভারের ওপরে নামা যাত্রীদের সায়েদাবাদ অংশের ঢাল বেয়ে নিচে নামতে দেখা গেছে।
চাঁদপুর রুটে চলাচল করা পদ্মা এক্সপ্রেসের চালক মো. শাহ আলম বলেন, আজকে যাত্রীর চাপ সবচেয়ে বেশি। পুরো গাড়ি ভরে যাত্রী নিয়ে এসেছি। আগামী কয়েক দিন এ চাপ থাকবে। গত শনিবার সারাদেশে মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে এবার সরকারি কর্মচারীরা টানা ১০ দিনের ছুটি পেয়েছেন। গত ৫ জুন শুরু হওয়া ঈদের ছুটি আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত কাটাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
বিআলো/তুরাগ