নেপালে বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে সুশীলা কার্কি
আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: নেপালে জেন জি আন্দোলনের পর সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কির নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছে। নতুন সরকারকে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা সামলানো, ভবিষ্যতের নির্বাচন আয়োজন এবং ধ্বংস হওয়া অবকাঠামো পুনর্নির্মাণের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। দেশ ও বিশ্বপেক্ষায় ভারসাম্যপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখা ও বৈদেশিক সহায়তা অর্জনও সরকারের জন্য বড় পরীক্ষার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূত্র : কাঠমান্ডু পোস্ট
মূলত আন্দোলন ও সরকার পতনের পরে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে একেবারে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। আর এসব কারণে সুশীলা কার্কির অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে অপেক্ষা করছে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রে নানা চ্যালেঞ্জ।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্ট।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কির নেতৃত্বে নেপালে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে, পরে তিন সদস্যের মন্ত্রিসভা দায়িত্বও নিয়েছে। তবে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী কে হবেন তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। জানা গেছে, সাবেক কয়েকজন সচিব ও রাষ্ট্রদূতকে এই পদে আনার চেষ্টা চালানো হলেও এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
অবশ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব যেই নেন না কেন, তাকে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। ২০২৬ সালের ৫ মার্চের নির্বাচনের প্রস্তুতি ও জেন জি আন্দোলনে ধ্বংস হওয়া শত শত অবকাঠামো পুনর্নির্মাণের পাশাপাশি নতুন সরকারকে একাধিক বৈদেশিক চ্যালেঞ্জও সামলাতে হবে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য ভারতের পাশাপাশি চীনের সমর্থন, আর বড় শক্তি যেমন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। একইসঙ্গে ভূরাজনৈতিক সংকট সামলানো এবং পুনর্গঠনের জন্য বৈশ্বিক সহায়তা জোগাড় করাও সরকারের প্রধান কাজ।
অবশ্য সরকার গঠনের পর শপথ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি দেশ-বিদেশ থেকে ব্যাপক সমর্থন ও শুভেচ্ছা পেয়েছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, অতীতে ভুল মূল্যায়ন ও উদীয়মান ভূরাজনৈতিক প্রবণতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারায় দেশ আজকের জটিল পরিস্থিতিতে পড়েছে।
জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শঙ্কর দাস বৈরাগী বলেন, বিদেশনীতি পরিচালনায় সঠিক মূল্যায়ন করতে না পারলে সেটি মৃত্যু ফাঁদের মতো হয়ে ওঠে। বিদেশনীতি দুইমুখী রাস্তা। আমাদের বুঝতে হবে অন্যরা আমাদের কেমনভাবে দেখছে। কিন্তু আমরা বহির্বিশ্বের আচরণ ও বন্ধু রাষ্ট্রের অবস্থান যথাযথভাবে অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছি।
ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার ফর নেপাল অ্যান্ড সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ’-এর নির্বাহী পরিচালক মৃগেন্দ্র বাহাদুর কার্কি বলেন, নতুন প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া শুভেচ্ছাবার্তাগুলো, বিশেষ করে দালাই লামার অভিনন্দন, জনগণের মধ্যে সন্দেহ তৈরি করেছে। এই ভূরাজনৈতিক অস্পষ্টতা দূর করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
আরও কিছু বিশেষজ্ঞ পর্যটন খাতে আস্থা ফেরানোর ওপর জোর দিচ্ছেন। কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু হলেও সাম্প্রতিক আন্দোলনের কারণে এই খাত আবারও ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
কাঠমান্ডু-ভিত্তিক থিংকট্যাংক ‘সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ’-এর পরিচালক নিশ্ছল এন পান্ডে বলেন, নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যটনের প্রধান মৌসুম। আমাদের বিশ্বকে জানাতে হবে— নেপাল আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
রাজনৈতিক বিজ্ঞানী ও ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক সিডি ভট্ট বলেন, নেপাল পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক আস্থা অর্জন করা অপরিহার্য।
তবে সামনে রয়েছে সুশীলা কার্কির অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এক জটিল রাজনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক পথ। নির্বাচনের প্রস্তুতি, অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ, বৈদেশিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক সহায়তা নিশ্চিত করা—এ সবই সরকারের দায়িত্বের অন্তর্গত।
অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা এবং সঠিক কূটনৈতিক কৌশল ছাড়া নতুন সরকার সফল হতে পারবে না। নতুন সরকারের কার্যক্রম কেবল দেশের ভবিষ্যতকে নয়, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যকেও প্রভাবিত করবে।
বিআলো/শিলি