পঙ্ক্তি নিপীড়নের চিত্রকল্প
রমেশ শ্রেষ্ঠ
প্রভাত কবিকে জিজ্ঞেস করল:
কেন আঁকলে না আজ কোনো পঙক্তি?
কবি উত্তর দিল:
অক্ষরের ক্ষেত্র
বিকিয়ে গেছে
অসততার কাছে।
বাতাস সুরস্রষ্টাকে জিজ্ঞেস করল:
কেন প্রস্ফুটিত হলো না কোনো নতুন সুর?
সুরস্রষ্টা বলল:
হৃদয়ের ভূমিধস
গিলে ফেলেছে
সব সুরের ঝরনা।
পাখিরা গায়ককে জিজ্ঞেস করল:
কেন প্রতিধ্বনিত হলো না কোনো গান?
গায়ক বলল:
কণ্ঠের নদী
ক্ষুধার বন্ধনে
রুদ্ধ হয়ে গেছে।
আকাশ শিল্পীকে জিজ্ঞেস করল:
কেন জেগে উঠল না ক্যানভাস?
শিল্পী বলল:
সৃজনশীলতার চোখ
রাত্রির অন্ধকার কূপে তলিয়ে গেছে।
তবুও যদি আমি বন্ধক রাখা জীবনে
নিষ্পেষিত হই,
ভূমিধসের ধ্বংসস্তুপে চাপা পড়ি,
বা শ্বাসরোধ করা ফাঁসে জড়াই,
আমি আলো ছড়িয়ে দেব
নিশীথের কূপে ঢেলে দেব আলো,
নিশির শিকড় উপড়ে ফেলব।
আমি আকাঙ্খা করি
প্রভাতের লাল রক্তে স্নাত হতে,
আমি প্রতীক্ষা করি
আমার পতাকার উচ্চতা
আমারই দু’হাতের শক্তিতে মাপতে।
নদীর উৎসব
নদী, নিজের বুকে কবিতা লেখে,
হৃদয়ের গভীরে হালচাষ করে
পৃথিবীর বুকে রেখে যায় নিঃশব্দ গান
সেই গান,
যা দিগন্তকে অবলম্বন করে দাঁড়িয়ে থাকে।
পাহাড়ের কপালে উঠে
ঘামের অক্ষরে তারা লিখে বনজ গল্প,
তারা হাত ধরে শস্যক্ষেতে
যারা নিঃসঙ্গ কুটির থেকে উঠে আসে,
দারিদ্র্যকে ধুয়ে ফেলতে চায়,
জাগিয়ে তোলে নবীন নদীদের হৃৎস্পন্দন,
যারা এখনো মাতৃগর্ভে বেড়ে উঠছে।
তারা পথের দিকে চোখ রেখে
ইন্দ্রধনুর সন্তানদের আকাশের ছাদ বানিয়ে দেয়,
নিজেদের কপালের ভাঁজ মুছে,
বুঝিয়ে দেয় জীবনের পথ
যে পথ অতিক্রম করতেই হয়।
তারা জলের ক্ষীণধারা মুছে দিয়ে
নিঃস্ব চোখের জল মুছে নেয়,
বুঝিয়ে দেয় কিভাবে জীবনকে
ধারাবাহিকতার সুরে বেঁধে রাখতে হয়।
ওহ, কোথায় সেই নদীগুলো?
তাদের দীর্ঘ বেণী
একটা ছন্দের মতো দোল খায়,
তাদের চোখ সমুদ্রের মতো গভীর,
তাদের হাসি
পবিত্র পর্বতের মতো মোহনীয়।
সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে এক অন্তঃস্ত¡া সত্য,
সেখানেই খুঁজতে হবে নদীকে।
নদী
নিজের বুকে কবিতা লেখে,
শোকের সুরেও বুনে দেয়
আনন্দের মহাফলক।
কবির জীবনী : কবি রমেশ ধ্বজ শ্রেষ্ঠ। ১৯৬৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নেপালের একজন সুপরিচিত কবি ও শিল্পী। তার কবিতায় চিত্রকল্পের ব্যবহারের জন্য তিনি বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। তিনি বহু কাব্য ও গান সংকলন প্রকাশ করেছেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন দেশে চিত্রকলা প্রদর্শনী করেছেন। তিনি বহু সংকলনের সম্পাদনাও করেছেন। নেপালি সাহিত্য ও শিল্পকলায় তার অবদানের জন্য তিনি বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার কবিতা বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তার নিপীড়নের চিত্রকল্প এবং নদীর উৎসব এই কবিতা দুটো নেপালি ভাষা থেকে ইংরেজীতে অনুবাদ করেছেন নেপালের বিখ্যাত অনুবাদক মহেশ পেীডেল। লেখক, সমালোচক, অনুবাদক, সমালোচক এবং ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি নেপাল একাডেমির অনুবাদভিত্তিক সাময়িকী ‘রূপান্তরণ’ এর নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই কবিতা দুটো ইংরেজী থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন বাংলাদেশের কবি ও কথাসাহিত্যিক এবং আন্তর্জাতিক পেন বাংলাদেশের যুগ্ম সম্পাদক তালুকদার লাভলী ।