পরিণত বাংলাদেশে আর বিভেদ চায় না মানুষ : ছাত্রদলের সমাবেশে তারেক রহমান
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫৪ বছরে পা রেখেছে এবং এখন একটি পরিণত রাষ্ট্রে রূপ নিয়েছে। তিনি বলেন, এই পরিণত বাংলাদেশে মানুষ আর বিভেদ দেখতে চায় না।
গত রবিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি’ উপলক্ষে ছাত্রদলের আয়োজিত সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এ কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশের জনগণই বিএনপির পাশাপাশি বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক শক্তির প্রকৃত উৎস।
ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের সাহসিকতার প্রশংসা করে তারেক রহমান বলেন, গত বছরের জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রদলের শত শত নেতা-কর্মী আহত ও গ্রেপ্তার হন। শুধুমাত্র ওই সময়েই ছাত্রদলের দুই হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, তোমাদের মতো সাহসী সন্তানরা যেখানে আছে, সেই সংগঠনকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। তিনি বলেন, সাহস ও সততার সঙ্গে এগিয়ে গেলে দেশের জনগণ তোমাদের সঙ্গে থাকবে।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি এখন কথামালার রাজনীতি নয়, বরং জনগণের জীবনমান উন্নয়নের রাজনীতিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। তিনি বলেন, বিভেদ-প্রতিহিংসার রাজনীতি আর নয়, দেশের জনগণ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গুণগত রাজনীতি দেখ চায়।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষাগত দক্ষতা অর্জনের বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্বে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শিক্ষার্থীদের কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে। বিএনপি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে স্কুল পর্যায় থেকেই কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছিল জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, জনগণের রায়ে দেশের ক্ষমতার দায়িত্ব পেলে বিএনপি শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ই-কমার্স নিয়ে কাজ করবে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আইসিটি ও কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দেবে। খেলাধুলা ও আর্ট কালচারকে শিক্ষা কারিকুলামে নিয়ে আসবে।
সমাবেশে তরুণদের কাছে ধানের শীষের জন্য ভোট চান তারেক রহমান। তরুণ ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তারুণ্যের প্রথম ভোট, ধানের শীষের জন্য হোক।
এর আগে রোববার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয়েছে। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই সমাবেশ করছে ছাত্রদল। সমাবেশকে কেন্দ্র করে শাহবাগ মোড়ে টিএসসির দিকে মুখ করে মঞ্চ তৈরি করা হয়। শাহবাগ মোড় থেকে একদিকে মৎস্য ভবন, অন্যদিকে কাঁটাবন মোড় এবং সামনের দিকে চারুকলা ইনস্টিটিউট পর্যন্ত নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতাকর্মী আসে এই সমাবেশে। সকাল থেকে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। খণ্ড খণ্ড মিছিল এসে মেলে সমাবেশস্থলে। থেমে থেমে নেতাকর্মীরা স্লোগান দেন। কারও হাতে জাতীয় পতাকা, আবার কারও হাতে দলীয় পতাকা ছিল।
ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমানের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এই ছাত্র সমাবেশ শুরু হয়। এরপর বক্তব্য দেন ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক শ্যামল মালুম।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় সমাবেশমঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ছাত্রদলের সাবেক নেতারা।
অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন. বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে আর কোনোদিন রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, আমাদের সামনে নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এই বাংলাদেশকে নতুন করে তৈরি করার। সারাদেশ থেকে তরুণ এখানে এসেছেন। এটা অত্যন্ত আনন্দের দিন। একই সঙ্গে কষ্টের দিন। গত বছর এই দিনে আমাদের দেশের মানুষকে হত্যা করছিল আওয়ামী লীগ।
গণঅভ্যুত্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু ৩৬ দিনের আন্দোলন নয়, গত ১৬ বছর ধরে আমাদের নেতাকর্মীরা জীবন দিয়েছেন, শুধুমাত্র সুন্দর একটা বসবাসযোগ্য আবাস ভূমি হিসাবে বাংলাদেশকে দেখার জন্য।
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, অনেক চেষ্টা করা হচ্ছে আমাদের বিভক্ত করার জন্য। আমাদের পাশের দেশ শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে। সেখান থেকে মাঝে মাঝে হুমকি দিচ্ছে। দেশকে অস্থিতিশীল তৈরির চেষ্টা করছে। বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে কোনোদিন রাজনীতি করার সুযোগ দেব না।
ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আর কোনোদিন এ দেশে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে রাজনীতি করতে দেব না। এ বিষয়ে সমাবেশ থেকে আমাদের শপথ নিতে হবে। কারো কাছে মাথা নত না করার শপথ নিতে হবে। আমরা নিজেরাই নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হিসেবে গড়ে তুলবো।
২০২৪ সালের ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে আয়োজিত এক সমাবেশেছাত্র-জনতার প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে ৯ দফা প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ছাত্রদলের এ ৯ দফা প্রতিশ্রুতির মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং একটি গণতান্ত্রিক ও জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠনে সহায়তা করা। সমাবেশে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রকিবুল ইসলাম রাকিব এ প্রতিশ্রুতির কথা জানান।
প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ১. শিক্ষাঙ্গনে নির্যাতন ও সন্ত্রাস বিলোপ: ছাত্রদল গেস্টরুম নির্যাতন, গণরুম সংস্কৃতি এবং শিক্ষার্থীদের ওপর যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক নিপীড়ন স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে কাজ করবে। ২. নিরাপদ ক্যাম্পাস ও আবাসন: শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসে নিরাপদ আবাসন, পুষ্টিকর খাদ্য, বাসযোগ্য কক্ষ এবং শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে ছাত্রদল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ৩. নারীর সমান অংশগ্রহণ: শিক্ষাক্ষেত্রে এবং রাষ্ট্রগঠনের সকল পর্যায়ে নারীর সমান অংশগ্রহণ এবং তাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য জোরালো উদ্যোগ নেওয়া হবে। ৪. দুর্নীতিমুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা: বেকারত্ব দূর করতে কর্মমুখী ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা চালুর পাশাপাশি, প্রশ্নফাঁস রোধ এবং সব ধরনের পরীক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্নীতি ও জালিয়াতিমুক্ত করতে ছাত্রদল সোচ্চার ভূমিকা পালন করবে। ৫. ছাত্র সংসদ নির্বাচন: শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সকল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য ছাত্রদল জোরালো ভূমিকা রাখবে। ৬.গণতন্ত্র সুরক্ষা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা: দেশে যেন আর কখনো স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদ গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে না পারে, সে লক্ষ্যে ছাত্রদল মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার এবং ভোটাধিকার সুরক্ষায় আপামর ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে যাবে। ৭. ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৬৯,১৯৭৫ এর ৭ নভেম্বর, ১৯৯০ এবং ২০২৪ সনের গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভাবধারার সাংস্কৃতিক চর্চা বেগবান করার লক্ষ্যে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলবে ছাত্রদল।
বিআলো/ইমরান