• যোগাযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    পাটের রাজধানী ফরিদপুর: ২ হাজার কোটি টাকার পাট উৎপাদন 

     dailybangla 
    05th Aug 2025 12:12 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

    রতন বালো: এদিকে বিশ্বে পাট উৎপাদনে শীর্ষ দেশ ভারত হলেও দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। চীনের অবস্থান তৃতীয়। কিন্তু বিশ্বে অন্যতম সেরা পাট উৎপাদনকারী দেশ হয়েও আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে বারবার মার খাচ্ছি। ফলে কৃষকরা পাট চাষে অনেকটাই আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। পাটের এই দুরবস্থার জন্য শেরে বাংলা একে ফজলুল হক এক সময় আক্ষেপ নিয়ে দারুন মন্তব্য করেছিলেন।
    তিনি পাটের দাম নিয়ে যে মন্তব্য করেছিলেন তা স্মরণ করা যেতে পারে। পাটের দাম নিয়ে আক্ষেপ করে বলেছিলেন ‘পাটের যে দাম নাম ইছস’ মানে ‘দাম কমিয়ে দিচ্ছিস’ আর ‘৫ টেহায় দেশটা বেচুম কার কাছে?’ মানে হল, যদি পাটের দাম না বাড়ে, তাহলে ৫ টাকায় দেশ বিক্রি করে দিতে হবে, যা একটি রূপক অর্থ বহন করে।

    এর মাধ্যমে তিনি পাটের দাম কমে গেলে দেশের অর্থনীতি কতটা খারাপ অবস্থার সম্মুখীন হবে, তা বোঝাতে চেয়েছেন। সেই পাট যা দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি ছিল সেটি এখন ধুঁকছে। এককালের সোনালী আঁশ এখন কৃষকের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সময় পাটকে বলা হতো সোনালি আঁশ। এজন্য নারায়ণগঞ্জসহ খুলনা অঞ্চলে গড়ে তোলা হয় পাটকল। নারায়ণগঞ্জের আদমজীকে কেন্দ্র করে পাটশিল্প এতোটাই বিস্তৃত ছিল যে, এলাকটিকে প্রাচ্যের ডান্ডি বলে অভিহিত করা হতো। পাটের সেই সুদিন আজ নেই। এখন পাট সোনালি আঁশের পরিবর্তে গলার ফাঁস বলে পরিচিতি হয়ে উঠেছে। তারপরেও পাট চাষ থমকে গেছে এমনটি নয়। কৃষক আজও পাটকে নিয়ে সোনালি স্বপ্ন বুনে চলেছে। যদিও পাট তার সুদিন হারিয়েছে।
    চলতি মৌসুমে হঠাৎ বৃষ্টিতেই পাট চাষীদের মুখে যেন হাসি ফুটেছে। পাট জাগ দেওয়া নিয়ে পানি সংকটের দুশ্চিন্তায় ছিলেন কৃষক। ‘পাটের রাজধানী’ খ্যাত ফরিদপুর জেলায় এ মৌসুমে পাট আবাদ হয়েছে ৮৬ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে। ফলন হয়েছে তুলনামূলক ভালো। তবে আবাদে ব্যয় বেড়েছে বহুগুণ, দাবি চাষিদের।
    কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় এবার দুই হাজার কোটি টাকার পাট উৎপাদিত হয়েছে। নয়টি উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর জেলা। এই জেলায় রয়েছে পদ্মা, আড়িয়াল খাঁ, মধুমতির মতো নদী। জেলার চরভদ্রাসন ব্যতীত বাকি আটটি উপজেলাতেই পাট চাষ করা হয় ব্যাপক হারে।

    কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, এ জেলার পাটের আবাদ হয় মোট আবাদি জমির ৭৫ শতাংশের বেশি জমিতে। আর এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক কৃষাণ-কৃষাণি। ফরিদপুরের সালথা নগরকান্দা উপজেলা সূত্রে জানা গেছে, জেলার সর্বত্রই এখন যেন পাট নিয়ে ব্যস্ত চাষিরা। কেউ ক্ষেত থেকে পাট কাটছেন, কেউ আঁটি বেঁধে মাথায় করে জাগ দেওয়ার জন্য পানির কাছে নিচ্ছেন, কেউ আবার জাগ দেওয়া পাট তুলে আঁশ ছাড়িয়ে ভালোভাবে পানিতে ধুয়ে শুকানোর কাজ করছেন।
    পাট চাষে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত পাঁচ লক্ষাধিক কৃষাণ-কৃষাণি : চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তুলনামূলক নিচু জমিতে এবার পাটের ফলন ভালো হয়নি, তবে উঁচু জমির চিত্রটা ভিন্ন। পাট আবাদে চাষিদের ব্যয়ও বেড়েছে অনেক, বপনের শুরুর দিকেই বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চাষিদের সেচ নির্ভর হতে হয়েছে। গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত অর্থ।

    মুঠোফোনে কথা হয় সালথা উপজেলার সাইফুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেনসহ বেশ কয়েক জন চাষির সঙ্গে। তারা বলেন, এ মৌসুমে এক মণ পাট বাজারে নেওয়া পর্যন্ত খরচ হচ্ছে চার হাজারের মতো। এখন আপনারাই বলুন, কত টাকা বিক্রি করতে পারলে আমরা বেঁচে থাকতে পারবো। পাটচাষিদের দাবি, মণপ্রতি বিক্রয় মূল্য পাঁচ হাজার টাকার কম হলে গুনতে হবে লোকসান। তারা বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার পাট কাটার সময় ভালো বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ কারণে পানি নিয়ে চিন্তা নেই। আশা করছি, ভালো রঙ আসবে পাটে।
    এ বছর বৃষ্টিপাত হওয়ায় জাগ দেওয়ার পানির সংকট হয়নি : ফরিদপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের মুটোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ফরিদপুরের পাললিক বেলে-দোআঁশ ও এঁটেল-দোআঁশ মাটি পাট চাষের জন্য বেশ উপযোগী। পাট চাষের জন্য উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়া প্রয়োজন। ফরিদপুরের জলবায়ু এই বৈশিষ্ট্যগুলোর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বলেই পাট উৎপাদনে এ জেলা দেশের মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে। এ জন্য এ জেলাকে পাটের রাজধানী বলা হয়।
    ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শাহাদুজ্জামানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলছেন, চাষিরা পাটের ভালো রঙ পাবেন এবার। পাট পচনের সময় অতিবৃষ্টিপাত হচ্ছে, এ জন্য পাটের রঙ ভালো হবে। এ জন্য বাজারদর সন্তোষজনক হবে। এই কৃষি কর্মকর্তা আরো জানান, এবারের মৌসুমে দুই লক্ষাধিক মেট্রিক টন পাট উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যার বাজার মূল্য হবে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি।

    পাট ক্রেতাদের কথা : মুঠোফোনে কথা হয় রাজবাড়ী জেলার জামালপুর পাট বাজারের ব্যবসায়ী পঞ্চানন দাসের সঙ্গে। তিনি যেমনটি বলছিলেন। পাট ওঠার আগেই কৃষকরা তা বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। নানাবিধ খরচের যোগান দিতেই তারা বাধ্য হয়ে নামমাত্র দামে পাট বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। চাষীরা বাধ্য হয়েই কমদামে পাট বিক্রি করে দিয়েছেন। বর্তমানে মাত্র ১০-১২ শতাংশ কৃষকের হাতে পাট মজুদ আছে। বাকিটা ছোট ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়েছেন।
    ফরিদপুরের সালথা উপজেলার ছোট বাহিরদিয়া গ্রামের চাষি ইসরাত মাতুব্বর বলেন, আমাদের এলাকার বেশিরভাগ কৃষক পাট কাটার পরপরই কম দামে বিক্রি করে দিয়েছেন। পরে বিক্রির জন্য অনেকে কয়েক মন পাট ধরে রেখেছেন। সম্প্রতি তিনি তিন হাজার ৮০০ টাকা মন দরে তিন মন পাট বিক্রি করেছেন। আগামী বছর আবার পাট চাষে উৎসাহিত হয়েছেন তিনি। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা মাগুরার রাউতারা গ্রামের কৃষক নব কুমার কুণ্ডু বলেন, এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। প্রায় ৫০ মণ পাট পেয়েছি। একই পরিমাণ জমিতে আগে ৯৬ মন পাট পেয়েছিলাম। তিনি জানান, এ বছর ফলন ও পাটের আঁশের মান অনেক ভালো। তাই বেশি দাম পাওয়া যাচ্ছে।

    ফরিদপুরের হাট কৃষ্ণপুর গ্রামের চাষি জাহিদ শেখ বলেন, সার, সেচ ও শ্রমিকের খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রতি বিঘা পাট চাষে খরচ হয়েছে ২৭ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা। তিনি আরো বলেন, এ বছর এক মণ পাট উৎপাদনে খরচ হয়েছে তিন হাজার টাকা। বর্তমানে যে দাম পাচ্ছি তাতে কিছুটা লাভ হচ্ছে। তবে দাম কমলে ভবিষ্যতে পাট চাষ কঠিন হবে।
    ফরিদপুরের পাট অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. জাহিদুল ইসলাম এর মুটোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যদিও পাট চাষের প্রথম দিকে তাপমাত্রার জন্য চারা ভালো হয়নি, তবে পাট জাগ দেওয়ার সময় বেশি বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা এ বছর ভালোমানের পাট পেয়েছেন। তাই দাম ভালো।
    পাটকলের মালিক ও করিম গ্রুপের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন মিয়ার মুটোফোনে যোগাএযাগ করা হলে তিনি বলেন, কারখানার মালিকরা কৃষকদের ন্যায্য দাম দিতে চান। তারা ন্যায্য দাম পেলে পাট উৎপাদনে উৎসাহিত হবেন। মালিকরা পাট পণ্য রপ্তানি ও কারখানা চালু রাখতে পারবেন।

    বিআলো/ইমরান

    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    August 2025
    M T W T F S S
     123
    45678910
    11121314151617
    18192021222324
    25262728293031