পাবনার ভাঙ্গুড়ায় হাত বাড়ালেই মাদক, বাড়ছে অপরাধ, ক্ষোভে ফুঁসছে সাধারণ মানুষ
পাবনা প্রতিনিধি: পাবনার ভাঙ্গুড়ায় প্রতিদিনের দৃশ্য এখন আর অদ্ভুত নয়—হাত বাড়ালেই মিলছে গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন ও দেশীয় মদসহ নানা ধরনের মাদক। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যেই চলছে মাদকসেবন। কিশোর-তরুণ থেকে প্রাপ্তবয়স্করাও মরণনেশায় জড়িয়ে পড়ছে। ফলে এলাকায় চুরি, ছিনতাই, মারামারি ও অন্যান্য অপরাধের মাত্রা বাড়ছে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন উদাসীন এবং পুলিশ কার্যত নিষ্ক্রিয়। পুলিশের চোখের সামনেও মাদক বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু কার্যকর কোনো অভিযান দেখা যাচ্ছে না। একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “প্রতিদিন সন্ধ্যার পর নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গায় প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হয়। পুলিশ জানে, সবাই জানে, কিন্তু কেউ কিছু করে না। অভিযোগ করলে উল্টো ভয়-ভীতি দেখানো হয়।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভাঙ্গুড়ায় অন্তত ১৫–২০ জন প্রভাবশালী বড় মাদক ব্যবসায়ী এবং অসংখ্য খুচরা বিক্রেতা সক্রিয়। প্রভাবশালী মহলকে ‘ম্যানেজ’ করে তারা গড়ে তুলেছেন বিশাল মাদক নেটওয়ার্ক। ভাঙ্গুড়া পৌরসভা ও আশপাশের এলাকায় অন্তত অর্ধশতাধিক স্থানে নিয়মিত মাদক বিক্রি হচ্ছে। প্রকাশ্যে মাদক বিক্রির স্পটগুলোর মধ্যে রয়েছে—ভাঙ্গুড়া সিএনজি স্ট্যান্ড, বড়াল ব্রিজ মাছবাজার, চৌবাড়িয়া দক্ষিণপাড়া, ভদ্রপাড়া, কালীবাড়ি বাজার, পালপাড়া, আদর্শ গ্রাম, হালুয়াঘাট ব্রিজ, সারুটিয়া রেলগেট, জগাতলা বাজার, বড়াল ব্রিজ রেলস্টেশন, চড় ভাঙ্গুড়া পূর্বপাড়া, শাহনগর, কৈডাঙ্গা রেলব্রিজ, নুরনগর, অষ্টমনিষা ঘোষপাড়া, দিলপাশার, খানমরিচসহ আরও অনেক জায়গা।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাদক ব্যবসায় জড়িত অনেকেই তালিকাভুক্ত। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকলেও অধিকাংশই জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও আগের ব্যবসায় ফিরে যাচ্ছেন। ছোটখাটো বিক্রেতা মাঝে মাঝে গ্রেপ্তার হলেও মূল হোতারা রয়ে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। মাদকসেবীরা নেশার টাকা জোগাতে চুরি ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন, যা সামাজিক অস্থিরতা বাড়াচ্ছে।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব লিখন সরকার বলেন, “এখন ভাঙ্গুড়ায় মোড়ে মোড়ে যেমন মুদির দোকান আছে, তার চেয়েও সহজে মাদক পাওয়া যায়। প্রশাসনের উদাসীনতা ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে মাদকের বিস্তার হয়েছে।”
পৌর বিএনপির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “সচেতন মহল ঐক্যবদ্ধভাবে মাদক নিয়ন্ত্রণে না এলে প্রশাসন এককভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারবে না।”
উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব প্রভাষক জাফর ইকবাল হিরোক বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে ভাঙ্গুড়ার আনাচে-কানাচে মাদক ছড়িয়ে পড়েছে। যুবক, কিশোর, ছাত্র—সবাই এতে জড়াচ্ছে। প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা নেই। জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজ ঐক্যবদ্ধ হলে মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।”
ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “মাদকের বিষয়ে কোনো ছাড় নেই। মাদক নির্মূলে পুলিশ সর্বদা তৎপর। নিয়মিত সভা-সমাবেশ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলছে। এ মাসেও একজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যেই জড়িত থাকুক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।”
চাটমোহর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আরজুমা আকতার বলেন, “মাদকের বিষয়ে কোনো ছাড় নেই। নিয়মিত অভিযান চলছে এবং আমরা সম্পূর্ণভাবে বদ্ধপরিকর। বড় হোক বা ছোট, যেই মাদক ব্যবসায়ী হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। যদি পুলিশের কেউ অনৈতিক সুবিধা নিয়ে থাকে, প্রমাণ মিললে তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিআলো/তুরাগ



