প্রতারণার জাল বুনছেন আফরোজা আক্তার শারমিন: টার্গেটে প্রভাবশালী পুরুষরা
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে হোটেল রুম
কীভাবে ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করছেন শারমিন?
মো. জুবায়ের আলম: রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বারিধারা, বনানী থেকে শুরু করে পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার—সবখানেই ছড়িয়ে আছে এক নারীর প্রতারণার জাল। নাম আফরোজা আক্তার শারমিন। অভিযোগ উঠেছে, তিনি সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার বানিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রভাবশালী ও বিত্তশালী পুরুষদের কাছ থেকে।
প্রতারণার কৌশল
শারমিনের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানার শান্তিরকান্দা গ্রামে। বাবা নজরুল মিয়া, মা সাহিয়া। পেশায় গুলশানের একটি স্পা সেন্টারের কর্মী হলেও মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক ভুয়া আইডি ব্যবহার করে টার্গেট তৈরি করেন তিনি। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলেন। এরপর সুযোগ বুঝে তাদের নিয়ে যান বিলাসবহুল হোটেল কিংবা অভিজাত ফ্ল্যাটে। সেখানেই অন্তরঙ্গ মুহূর্তে জড়িয়ে পড়া পুরুষদের ভিডিও ধারণ করেন গোপনে। আর সেই ভিডিওকে হাতিয়ার করে শুরু হয় ব্ল্যাকমেইল।
ব্ল্যাকমেইল ও জবরদস্তি
শুধু ভিডিওই নয়—অভিযোগ অনুযায়ী, শারমিন ও তার সহযোগীরা জোরপূর্বক নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেন ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে। পরে অশ্লীল ভিডিও ফাঁসের ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নেন মোটা অঙ্কের টাকা। অস্বীকার করলে চালানো হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
বিদেশে দেহব্যবসা, দেশে প্রতারণা
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিদেশে থাকার সময়ও শারমিন দেহব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দেশে ফেরার পর বসুন্ধরার এক বান্ধবীর সহায়তায় নতুন করে গড়ে তোলেন প্রতারণার সিন্ডিকেট। ধীরে ধীরে এর সঙ্গে যুক্ত হয় তার মা, খালা ও একটি প্রভাবশালী সন্ত্রাসী চক্র।
একাধিক বিয়ে ও গ্যাং
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শারমিন একাধিকবার বিয়ে করলেও সংসার টেকেনি। প্রাক্তন স্বামীদের নাম ব্যবহার করে এবং সমাজে প্রভাবশালী মহলকে জিম্মি করে তিনি প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এলাকায় তার একটি গ্যাংও সক্রিয়, যারা মামলা-হামলার আতঙ্ক দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।

ভুক্তভোগীর বর্ণনা
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী জানান— “প্রেমের সম্পর্কের অভিনয় করে আমাকে গুলশানের একটি বাড়িতে নিয়ে যান শারমিন। পরে তার সন্ত্রাসী বাহিনী ঘিরে ফেলে। ভয় দেখিয়ে আমার কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা আদায় করে।”
অভিযুক্তের প্রতিক্রিয়া
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শারমিন ফোনকল রিসিভ করেননি। তবে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলতে গিয়ে অভিযোগ অস্বীকার করেন। উল্টো গণমাধ্যম কর্মীদেরই হুমকি দেন বলে জানা যায়।
পুলিশের অবস্থান
বাজিতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুরাদ হোসেন বলেন— “আফরোজা আক্তার শারমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সমাজের উদ্বেগ
সুশীল সমাজের দাবি, এই প্রতারণা চক্রকে দ্রুত আইনের আওতায় না আনা হলে আরও অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তারা মনে করছেন, প্রতারক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
বিআলো/তুরাগ