প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য প্রবেশগম্যতা বড় বাধা
প্রতিবন্ধী নারীদের অন্তর্ভুক্তি ও অধিকার বাস্তবায়নে আইন সংস্কারের দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে প্রতিনিয়ত প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা বাড়ছে। জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী হওয়ার পাশাপাশি দৈব দুর্বিপাক-দূর্ঘটনাসহ নানা কারণে অনেক সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ প্রতিবন্ধীতার স্বীকার হচ্ছেন। আর এই প্রতিবন্ধীদের জন্য নাগরিক সুবিধা এবং আইন কাগজে কলমে থাকলেও তার কোন প্রয়োগ নেই। ফলে প্রতিবন্ধীরা এক রকমের মর্যাদাহীন হয়ে সমাজে বসবাস করেন।
এরমধ্যে সবচেয়ে নাজুক হলো নারী প্রতিবন্ধীদের অবস্থান। যোগ্যতা থাকা স্বত্ত্বেও অনেক প্রতিবন্ধী নারীকে শুধু প্রতিবন্ধী বলেই কাজ দেওয়া হয় না। আবার কাজ পেলেও প্রবেশগম্যতা সহজ নয় বলে নানা বাধার সৃষ্টি হয়। প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য প্রবেশগম্যতা বড় বাধা। গতকাল বৃহস্পতিবার ‘প্রতিবন্ধী নারীদের অন্তর্ভুক্তিমূলক অধিকার ও সেবাসমুহ’ বিষয়ক সেমিনারে প্রতিবন্ধী নারীরা আলোচনায় অংশ নিয়ে তাদের ভোগান্তি ও অবহেলার বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
প্রতিবন্ধী নারীদের উন্নয়ন ফাউন্ডেশন উইমেন উইথ ডিজ্যাবিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (ডব্লিউডিডিএফ) এর আয়োজনে ও উইমেন্স ফান্ড এশিয়ার (ডব্লিউএফএ) আর্থিক সহযোগিতায় রাজধানী ঢাকার ডেইলি স্টারের আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে এটি অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যালবার্ট মোল্লা। ডাব্লিউডিডিএফ-এর চেয়ারপারসন ও কর্মসূচি পরিচালক শিরিন আক্তারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন প্রধান অতিথি ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সায়েদুর রহমান খান, বিশেষ অতিথি ব্যারিষ্টার সারা হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তানিয়া হক, এডিডি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক গোলাম ফারুক হামিম, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র (বিএনএসকে) সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু।
এছাড়া প্যানেল আলোচক হিসেবে সেমিনারে উপস্থিতি ছিলেন বাংলাদেশে সোসাইটি ফর চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাস (বি-স্ক্যান) প্রতিষ্ঠাতা এবং মহা সচিব সালমা মাহবুব, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) রাইটস অ্যান্ড গর্ভানেন্স-এর কর্মসূচি সমন্বয়ক নাজরানা ইয়াসমিন হিরা এবং বাংলাদেশ সু-ি প্রমকোর্টের অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডাব্লিউডিডিএফ-এর শারমিন আক্তার দোলন। সেমিনারের গুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডব্লিউডিডিএফের নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টি।
মূল প্রবন্ধে এবং আলোচনায় প্রতিবন্ধী নারীদের প্রবেশগম্যসহ আইন সংস্কার ও বাস্তবায়ন জোরদার করার সুপারিশ করা হয়। বলা হয়, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ ও বিধিমালায় প্রতিবন্ধী নারীদের সুনির্দিষ্ট চাহিদা ও ঝুঁকির বিষয়টি আরো বিশদভাবে অন্তর্ভুক্ত করে আইন ও বিধিমালার সময়োপযোগী সংস্কার ও আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা যা প্রতিবন্ধী নারীদের সম্মানজনক জীবনযাপন ও সমাজে পূর্ণ অংশগ্রহণের পথ সুগম করবে।
এছাড়া প্রতিবন্ধী নারীর সঠিক সংখ্যা নিরূপণ, প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা বিস্তার, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর এবং কর্মোপযোগী প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা উন্নয়নের বিষয়ে জোর দিয়ে বলা হয়, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির কোটা বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধী নারীদের অগ্রাধিকার, প্রতিবন্ধী নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ সৃষ্টি, উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রোগ্রামে অগ্রাধিকার, ব্যবসা শুরু ও সম্প্রসারণে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিতে হবে। মূল প্রবন্ধে অ্যালবার্ট মোল্লা প্রতিবন্ধী নারীদের বর্তমান অবস্থান, তাদের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন। এসব বাধা থেকে উত্তরণের জন্য করণীয় তুলে ধরা হয় প্রবন্ধে। তিনি বলেন প্রতিবন্ধী নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার মাত্র ১১.৩৪%।
জাতীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি জরিপ ২০২১ অনুযায়ী প্রতিবন্ধী নারীদের প্রায় ৯৩% কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত (পুরুষদের হার যেখানে ৫৯%)। প্রধান অতিথির বক্তব্যে সায়েদুর রহমান খান বলেন, বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধীদের জন্য অনেকগুলো উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে প্রতিবন্ধীদের জন্য মধ্যে একটা আলাদা সেল গঠন করা হয়েছে। এই সেলে সবার নাম অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ফলে প্রতিবন্ধীদের ভাটা তৈরিতে এটি সহায়ক হবে।
তিনি বলেন, প্রতিবন্ধীরা যেন ঘরে বসে যুক্ত হতে পারেন সে জন্য অ্যাপ তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী নারীদের জন্যও সরকার কাজ করছে। এছাড়া তাদের আর্থিক বিষয়টি মাথায় রেখে সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি প্রতিবন্ধী বিষয়ক সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দেন। সেমিনারে নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সে অন্যদিকে ভালো। যার হার্টে সমস্যা তার পায়ে জোর আছে। এভাবে বিবেচনা করে যদি আমরা সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে কাজে লাগাতে পারি তাহলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এবং জাতির জন্য তারা একটা বিরাট শক্তি হতে পারে। তিনি নারীদের প্রতি বিশেষ করে প্রতিবন্ধী নারীদের প্রতি সমাজে বিদ্যমান বৈষম্যমূলক ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের প্রতি তাগিদ এবং নারীদের উন্নয়নের জন্য যে আইনগুলো আছে সেগুলোর বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আশরাফুন নাহার মিষ্টি বলেন, সেমিনারের আলোচনার ভিত্তিতে আগামীতে আমরা খুব শিঘ্রই প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করব।
বিআলো/তুরাগ