প্রতিষ্ঠানের কর্মীর বাবা হওয়ার খবরে বাংলাদেশে ছুটে আসেন মালয়েশিয়ান ব্যবসায়ী দম্পতি
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি: সুদূর মালয়েশিয়া থেকে নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মীর বাবা হওয়ার খবর পেয়ে বাংলাদেশে ছুটে আসেন মালয়েশিয়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মুজ্জাফফার শাহ বিন আব্দুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী নোরলিজা মোহদ নোর। কর্মী সোলাইমানের প্রতি ভালোবাসা, বিশ্বাস ও আস্থার সম্পর্কেই তারা শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী ইউনিয়নের পিরুজালী গ্রামে তাঁর বাড়িতে পৌঁছান।
সোলাইমান পিরুজালী গ্রামের পিয়ার আলির ছেলে। তিনি জানান, ২০০৭ সালে জীবিকার তাগিদে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। শুরুতে তাঁর প্রবাসজীবন ছিল কষ্টসাধ্য। পরে মুজ্জাফফার শাহের প্রতিষ্ঠানে যোগ দিলে তাঁর জীবনে পরিবর্তন আসে। সততা, পরিশ্রম ও দায়িত্বশীলতার কারণে ধীরে ধীরে মালিকের আস্থা অর্জন করেন তিনি। কর্মী–মালিকের সম্পর্ক সময়ের সঙ্গে পারিবারিক বন্ধনে রূপ নেয়।
সোলাইমান বলেন, তিন মাস আগে তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহ জন্ম নেয়। প্রায় ১৮ বছর পর বাবা হওয়ার খবর জানালে ব্যস্ততার মাঝেও মালয়েশিয়ান ব্যবসায়ী দম্পতি বাংলাদেশে চলে আসেন। তাঁদের আগমনে গ্রামে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। সোলাইমান নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামবাসীকে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেন। ব্যবসায়ী দম্পতি শিশুটিকে কোলে নিয়ে আদর করেন, সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
তিনি বলেন, নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি এটি—মালিক এত দূর থেকে তাঁর জন্য ছুটে এসেছেন। গ্রামের মানুষ যেভাবে সম্মান দেখিয়েছে, তাতে তিনি অত্যন্ত গর্বিত।
ব্যবসায়ী মুজ্জাফফার শাহ বলেন, তিনি বাংলাদেশে এসেছেন তাঁর “ভাই” সোলাইমানের সঙ্গে দেখা করতে। সোলাইমান ১৬ বছর ধরে তাঁর জীবনের অংশ হয়ে আছেন। তাঁর নবজাতক সন্তান আব্দুল্লাহকে দেখে তিনি আনন্দিত। তিনি বলেন, এই গ্রামের মানুষ অত্যন্ত সদয়, শান্তিপ্রিয় ও আতিথেয়তাশীল। সোলাইমানের বিয়ের সময়ও তিনি এ গ্রামে এসেছিলেন। গ্রামবাসীর অনুরোধে তিনি স্থানীয় মসজিদের উন্নয়নে ১১ লাখ টাকা অনুদান দেন।
গ্রামের যুবক রবিউল ইসলাম বলেন, সোলাইমান আমাদের গ্রামের গর্ব। তিনি দেখিয়েছেন সততা ও ভালোবাসা মানুষকে কত দূর নিয়ে যেতে পারে। বিদেশি মালিক তাঁর বাড়িতে যেভাবে স্বাভাবিকভাবে মিশেছেন, তা সত্যিই বিস্ময়কর।
রাবিয়া বেগম বলেন, এমন একজন বিদেশি ব্যবসায়ী আমাদের গ্রামে আসবেন—কল্পনাও করিনি। তিনি ও তাঁর স্ত্রী খুবই আন্তরিক, সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলেছেন।
কলেজ ছাত্র স্বাধীন মিয়া বলেন, একজন শ্রমিকের প্রতি মালিকের এমন বিশ্বাস ও সম্মান আমাদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। এটি গ্রামের ইতিহাস হয়ে থাকবে।
স্থানীয়দের মত, শ্রমিক–মালিকের এমন আন্তরিকতা থাকলে কাজের পরিবেশ যেমন উন্নত হবে, তেমনি দেশের অর্থনীতিও আরও শক্তিশালী হবে। সোলাইমান এবং তাঁর মালিকের সম্পর্ক দেখিয়ে দেয়—বিশ্বাস ও মানবিকতার ওপর সত্যিকারের উন্নয়ন দাঁড়িয়ে থাকে।
বিআলো/ইমরান



