• যোগাযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    প্রধান প্রকৌশলীর পদ বাগিয়ে নিতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে নানা তৎপরতা 

     dailybangla 
    17th Jan 2025 12:41 am  |  অনলাইন সংস্করণ

    নিজস্ব প্রতিবেদক: শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে প্রধান প্রকৌশলীর পদ বাগিয়ে নিতে নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে সুবিধাভোগীরা। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও সুবিধাভোগী এসকল কর্মকর্তাদের ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে আছেন প্রকৌশলী আফরোজা বেগম।

    জানা যায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিএনপি পরিবারের সন্তান হিসেবে বৈষম্যের শিকার হন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আফরোজা বেগম। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানপরবর্তী বাংলাদেশেও তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করে রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অভ্যন্তরে। আলোচনা চলছে কর্মকর্তাদের টেবিলে টেবিলে।

    অনেকেই বলাবলি করছেন, আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তাদের রোষানলের শিকার হয়েছেন তিনি। দেশের বাজেটের অপেক্ষাকৃত বেশি বরাদ্দ শিক্ষা খাতে। আর সে বরাদ্দের বেশিরভাগই খরচ হয় শিক্ষা অবকাঠামো উন্নয়নে। যার দায়িত্ব পালন করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। এ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর পদটি বৈধ-অবৈধভাবে আয়ের জন্য ‘সোনার হরিণ’।

    আগামী ১৯ জানুয়ারির মধ্যে ‘হরিণ’ ধরতে চলছে চতুর্মুখী তদবির। কেউ চায় পদোন্নতিসহ পদ, কেউ চায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, আবার ফের সুপারসিট করে বাগাতে চায় পদটি। পদপ্রত্যাশীদের ইচ্ছাপূরণে যারা তদবিরে নেমেছেন, তাদের তালিকায় আসছে সমন্বয়ক, রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী এবং আমলাদের নাম।

    জানা গেছে, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রায়হান বাদশার বিরুদ্ধেও রয়েছে অনিয়ম, দুর্নীতি ও দায়িত্বে অবহেলার নানা অভিযোগ। ছিলেন বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের সদস্যও। দায়িত্ব নেওয়ার পরও তার বিরুদ্ধে উঠেছে অনিয়মের নানা অভিযোগ। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ভালো পদায়নসহ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের বেশ কয়েকজন প্রকৌশলী গঠন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ। এই পরিষদের সদস্য ছিলেন রায়হান বাদশা। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনি অবস্থান পাল্টে, রুটিন দায়িত্ব নেন প্রধান প্রকৌশলীর। এছাড়া ২০০৭ সালে ভবন নির্মাণে অনিয়ম, কাজ শেষের আগেই ঠিকাদারকে বিল দেওয়ায় সাজাপ্রাপ্ত হন। এরপর যেখানেই চাকরি করছেন, সেখানেই তার বিরুদ্ধে উঠে অনিয়মের অভিযোগ।

    নির্বাহী প্রকৌশলী থাকাকালীন ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের নতুন ছাত্রীনিবাসের নির্মাণকাজ শেষ হলেও কলেজ কর্তৃপক্ষকে সেটি বুঝিয়ে দেওয়ার আগেই তড়িঘড়ি করে ঠিকাদারকে চূড়ান্ত বিল পরিশোধ করা এবং ভবনটি অব্যবহৃত অবস্থায় ফেলে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। তদন্ত করে ২০০৭ সালের দিকে দুই বছরের জন্য তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে সেই বরখাস্ত প্রত্যাহারের পর একসময় তাকে ঢাকা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। রায়হান বাদশাহকে নিয়ে অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব অভিযোগের কোনোটিই সঠিক নয়। প্রভাবশালীরা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সদস্য ছিলেন এবং তিন মাসের মধ্যে বিলুপ্ত হয় বলেও জানান এই প্রকৌশলী।

    নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্তত ১০ জন নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, এই কর্মকর্তা ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঢাকা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন ও দায়িত্ব পেয়েছিলেন। ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সুবিধাভোগী হিসেবেও তিনি পরিচিত। রায়হান বাদশা প্রায় ১০ বছর গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরে কর্মরত ছিলেন। প্রতিটি কাজের জন্য কোটি কোটি টাকা তিনি ঠিকাদারদের অ্যাডভান্স দিতেন ও বখরা নিতেন। তিনি ময়মনসিংহে জেলা থাকাকালে দুর্নীতির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন। যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

    শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, ইইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদ ও প্রধান প্রকৌশলীর পদ দুটোই শূন্য। যাচাই-বাছাইয়ের জন্য গেছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) ও সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডে (এসএসবি) রায়হান বাদশা সম্পর্কে নেতিবাচক রিপোর্ট প্রদান করায় তাকে চাকরিচ্যুত করার জায়গায় ওএসডি করা হয়। এদিকে জালাল চৌধুরী ও নজরুল হাকিম এদের দুর্নীতির ফাইলগুলো মওকুফ করার ব্যবস্থা করেন পতিত সরকারের প্রধান প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার।

    কয়েকজন নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, এই পদোন্নতির উদ্যোগের কারণে ইইডিতে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া অনেক কর্মকর্তার দীর্ঘদিন পদোন্নতি হচ্ছে না। দরপত্র ও ড্রয়িং অনুমোদনেও দেরি হচ্ছে। সবমিলিয়ে ইইডিতে অস্থিরতা ও স্থবিরতা বিরাজ করছে।

    সূত্র বলেছে, প্রধান প্রকৌশলীর রুটিন দায়িত্বে থাকা রায়হান বাদশা বিশাল অঙ্ক দাবি করায় তাকে সরানো হয়। আর পতিত সরকারের দোসরপুষ্ট হয়ে কাজ করার জন্য তাকে এই দায়িত্বে বসানো হয়েছিল।

    জানা যায়, ২০২২ সালে প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্বে ছিলেন প্রকৌশলী শাহ্ নইমুল কাদের। তিনি তার সর্বোচ্চ পদের মেয়াদ বাড়ানোর লোভে গঠন করেন ‘শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ’। এ পরিষদের আহ্বায়ক কমিটিতে কোনো আলোচনা ছাড়াই অন্তর্ভুক্ত করেন প্রকৌশলী আফরোজা বেগমের নাম। যদিও আফরোজা বেগম তখন ময়মনসিংহ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে কমিটিতে নাম রাখার বিষয়ে আপত্তি তোলেন প্রকৌশলী আফরোজা। প্রতিবাদের মুখে তার নাম আহ্বায়ক কমিটির তালিকা থেকে বাদ দিতে বাধ্য হন প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার।

    এরপর ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন দেলোয়ার মজুমদার। এর মধ্যে ময়মনসিংহ সার্কেল থেকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে চার বছর সাত মাস পর ২০২৩ সালের ১২ জুলাই প্রধান কার্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন আফরোজা বেগম। তবে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদে তার নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে প্রতিবাদ করায় তাকে কোনো কাজ না দিয়ে ছয় মাস বসিয়ে রাখা হয়। এরপর সবকিছু ঠিকঠাক চললেও আবার বিদায়ী বছরের ২০ নভেম্বর তাকে ওএসডি করা হয়।

    আফরোজা বেগম বলেন, আমি বৈষম্যের শিকার হয়েছি। দায়িত্বে থাকা অবস্থায় সব সময় ন্যায়ের পথে থেকে জনস্বার্থে কাজ করার চেষ্টা করেছি। জন-আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিশ্রুত কর্মী এবং সর্বোচ্চ পেশাদারত্বের সঙ্গে ৩১ বছর দায়িত্ব পালন করে চলেছি। জনস্বার্থে কাজ করতে গিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে দক্ষতা ও ন্যায়পরায়ণতা রক্ষা করেছি। আমার বিষয়ে আনীত অভিযোগ মনগড়া, বানোয়াট, অসত্য এবং হীনস্বার্থ চরিতার্থে করা, যা সত্যের অপপ্রলাপ মাত্র।

    তিনি বলেন, আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নই। ২০১২ সালে আইইবি’র নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। সব সময় বিভাগীয় সুনামের প্রতি লক্ষ্য রেখেছি। চাকরি জীবনের শেষে এসে আমি বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পদায়নে মানসিকভাবে বিড়ম্বনার সম্মুখীন ও মর্মাহত এবং সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এজন্য নিয়মিত সম্মানজনক পদে পদায়নের জন্য অনুরোধ জানান তিনি।

    নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন, আফরোজা বেগমকে ওএসডি করে রাখায় তারা বিস্মিত হয়েছেন। কারণ বিগত সরকারের সময়ে তিনি ঢাকায় পদায়নের চেষ্টা করেও আসতে পারেননি। তাকে দীর্ঘদিন ময়মনসিংহ সার্কেলে রাখা হয়। আবার পরে ঢাকায় বদলি হয়ে এলেও ছয় মাস তাকে বসিয়ে রাখা হয়। তারা বলেন, অফিস অর্ডারের বাইরে আফরোজা বেগম কখনো কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেননি। কয়েকজন সুবিধাভোগী কর্মকর্তার রোষানলে পড়ে তিনি বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। তাকে ওএসডি করানোয় তারা সুবিধা পেয়েছেন। এ ঘটনায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ভেতরে ভেতরে অসন্তোষ থাকলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় কেউ প্রকাশ্যে কথা বলার সাহস দেখাচ্ছেন না।

    এদিকে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী পদ ছাড়াও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদটি এক বছরাধিকাল যাবৎ শূন্য রয়েছে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় অবকাঠামো নির্মাণের কাজে নিয়োজিত এ দপ্তরের শীর্ষ পদটি ফাঁকা থাকায় স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা।

    প্রকৌশলী আফরোজা বেগম দীর্ঘ ৩১ বছরের চাকরি জীবনে চট্টগ্রামে সহকারী প্রকৌশলী পদে তিন বছর, নারায়ণগঞ্জে সহকারী প্রকৌশলী পদে দুই বছর, লক্ষ্মীপুর নির্বাহী প্রকৌশলী পদে প্রায় এক বছর, ময়মনসিংহ এ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে চার বছর সাড়ে ছয় মাস সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন। চাকরি জীবনের বেশিরভাগ সময় ডিজাইন শাখায় নিজেই স্ট্রাকচারাল ডিজাইন ও ড্রইং সততার সঙ্গে কাজ করেছেন। সারা দেশে বিভিন্ন ক্যাটাগরির অগণিত বিল্ডিং ডিজাইনের মধ্যে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি বিল্ডিং, হোস্টেলসহ (তিনটি স্থাপনা-বিল্ডিং) উল্লেখযোগ্য।

    বিআলো/তুরাগ

    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    August 2025
    M T W T F S S
     123
    45678910
    11121314151617
    18192021222324
    25262728293031