প্রয়াত শিল্পীদের স্মরণসভা: এফডিসিতে মিলনমেলায় রূপ নিলো শ্রদ্ধা ও আবেগ
শতাব্দীর নায়ক-নায়িকা থেকে পার্শ্ব চরিত্রের শিল্পীরা একত্র,
“প্রিয় প্রয়াতদের স্মরণে খোলা হলো হৃদয়ের দরজা”
বিনোদন প্রতিবেদক: চলচ্চিত্রের পর্দা আলো করে যাঁরা একদিন কোটি দর্শকের হৃদয় জয় করেছিলেন, তাঁদের অনুপস্থিতি আজ এক গভীর শূন্যতা। সেই প্রিয় মুখগুলোকে স্মরণে রাখতেই অবশেষে আয়োজন করা হলো ‘স্মৃতির আয়নায় কিংবদন্তির দৃশ্য’। রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে বিএফডিসি প্রাঙ্গণে জড়ো হয় শিল্পীরা। একদিকে শোক, অন্যদিকে পুরোনো সহকর্মীদের দেখা পাওয়ার আনন্দ—দুই মিশে সৃষ্টি করল আবেগঘন পরিবেশ।
গত এক বছরে বেশ কয়েকজন গুণী শিল্পী পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা, অভ্যন্তরীণ সংকট আর শিল্পী সমিতির বিভাজনের কারণে এতদিন কোনো স্মরণসভা সম্ভব হয়নি। গণ-অভ্যুত্থানের পর বহু শিল্পী গা ঢাকা দেন। তাই দেরি হলেও আয়োজনটি সবার কাছে হয়ে উঠল বিশেষ।
এফডিসিতে অন্য রকম দৃশ্য

রোববার দুপুরে এফডিসিতে ঢুকলেই চোখে পড়ে পরিচিত সব মুখ। নব্বই দশকের নায়ক-নায়িকা থেকে শুরু করে খলনায়ক, কৌতুকশিল্পী, এমনকি পার্শ্ব চরিত্রের অভিনেতারাও হাজির। কারও চোখে অশ্রু, কারও মুখে দীর্ঘদিন পর সহকর্মীদের দেখার উচ্ছ্বাস। প্রয়াতদের জন্য দোয়া চাওয়া এবং একে অপরের সাথে কুশল বিনিময়ে মুখর ছিল অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ।
সোহেল রানার আবেগঘন বক্তব্য
কিংবদন্তি অভিনেতা সোহেল রানা মঞ্চে দাঁড়িয়ে আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “কে কখন চলে যাব, কেউ শিওর না। হয়তো ভুল করেছি অনেক, সেই ভুলগুলো যেন সবাই ক্ষমা করে দেন। আমার জন্য দোয়া করবেন, যাতে আমি মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে নীতি-আদর্শ নিয়ে সঠিক মুসলমান হিসেবে যেতে পারি।”
তিনি যোগ করেন, “অনেক দিন পর সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা হলো। এই আয়োজন আমাকে নতুন করে আনন্দ দিয়েছে।”
আহমেদ শরীফের প্রশংসা
প্রখ্যাত খলনায়ক আহমেদ শরীফ বলেন, “এমন আয়োজন আগে হয়নি। প্রয়াতদের পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে স্মরণসভা সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এফডিসিতে আসতে আমরা চাই। বর্তমান শিল্পী সমিতিকে আন্তরিক ধন্যবাদ।”
প্রয়াতদের পরিবারের আবেগ
প্রয়াত অভিনেত্রী সুষমার ছেলে জানান, “মানুষ মৃত্যুর একদিন পরই ভুলে যায়। কিন্তু শিল্পী সমিতি আমাদের মাকে স্মরণ করেছে, এটা আমাদের জন্য গর্বের।”
তিনবার জাতীয় পুরস্কারজয়ী নৃত্য পরিচালক মাসুম বাবুলের ছেলে বলেন, “আমার বাবা সিনেমাকে পরিবার থেকেও বেশি ভালোবাসতেন। আজ তাঁকে স্মরণ করেছে সমিতি, এটা আমাদের জন্য আনন্দের। বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালি সময় হয়তো নেই, কিন্তু সবাই চেষ্টা করছে তা ফিরিয়ে আনার।”
আয়োজকদের প্রতিক্রিয়া
শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য রুমানা ইসলাম মুক্তি বলেন, “প্রত্যাশার চেয়ে বেশি শিল্পী অংশ নিয়েছেন। প্রয়াত শিল্পীদের পরিবারের সদস্যরা এসেছেন। সবাই খুশি, এতেই আমাদের কষ্ট সার্থক।”
অভিনেতা সনি রহমান জানান, “আমরা চেষ্টা করেছি সুন্দর একটি অনুষ্ঠান উপহার দেওয়ার। সবার সহযোগিতা না থাকলে এটা সম্ভব হতো না।”
নেপথ্যের কারিগররা
এই আয়োজন সফল করতে নেপথ্যে কাজ করেছেন শিল্পী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি মাসুম পারভেজ রুবেল, সহ-সাধারণ সম্পাদক আরমান, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক জ্যাকি আলমগীর, কোষাধ্যক্ষ কমল পাটেকর, কার্যনির্বাহী সদস্য চুন্নু, রুমানা ইসলাম মুক্তি, সনি রহমান এবং অভিনেতা শিবা শানু।
চলচ্চিত্র জগতের বার্তা
এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হলো, প্রয়াতরা চলে গেলেও তাঁদের অবদান অম্লান। একইসঙ্গে জীবিত শিল্পীদের জন্য এ ছিল পুনর্মিলনের আনন্দঘন মুহূর্ত। আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীদের কণ্ঠে ছিল একটাই প্রত্যাশা—বাংলা চলচ্চিত্র আবারও ফিরুক তার হারানো সোনালি দিনে।
বিআলো/তুরাগ