সুপ্রিম কোর্টের রায় বাস্তবায়নে অনীহা: ৫ শতাধিক ব্যাটালিয়ন আনসারের মানবেতর জীবন
৩১ বছরেও কাটেনি ব্যাটালিয়ন আনসার আঁধার
আমরণ অনশন কর্মসূচিতে অনেকেই অসুস্থ
২৭ আগস্ট পর্যন্ত ৫৯ দিন যাবৎ আন্দোলন চলমান রয়েছে
রতন বালো: ১৯৯৪ সালে চাকরিচ্যুত হওয়া শতাধিক ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্য দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে ন্যায় বিচারের অপেক্ষায় আছেন। তারা গত ২৯ জুন থেকে খিলগাঁও আনসার ও ভিডিপি সদর দপ্তরের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন, যা ২৭ আগস্ট পর্যন্ত ৫৯ দিন ধরে চলমান রয়েছে।
আন্দোলনকারীরা জানান, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০২২ সালের ২ আগস্ট তাদের পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছেন (মামলা নং ১৭৫ ও ১০৪৫৮/২০১৫)। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কার্যকর পদক্ষেপ নেননি। ২০১৩ সালে চাকরি ফিরে পেতে তারা মামলা করেন। ২০১৮ সালের ২ মার্চ হাইকোর্ট তাদের পক্ষের রায় দেন, রাষ্ট্রপক্ষের আপিলেও ২০২৩ সালে রায় বহাল থাকে।
তৃতীয়বারও উচ্চ আদালত তাদের চাকরি পুনর্বহালের নির্দেশ দেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনও গড়িমসি চালাচ্ছে। মহাপরিচালকের কাছে লিখিত দরখাস্ত জমা দেওয়ার পরও তা গ্রহণ করা হয়নি। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দরখাস্ত পাঠাতে হয়েছে। ফলে ৩১ বছরেও চাকরি ফিরে পাননি।
মানবিক ও স্বাস্থ্যঝুঁকি:
আমরণ অনশন চলাকালীন বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আন্দোলনকারীরা জানান, দীর্ঘদিনের অবহেলা এবং বিচার না হওয়ায় তাদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বেড়েছে। বাজারের দুর্ভোগ ও জীবনধারণের অস্থিরতার কারণে পরিবার-পরিজনসহ তাদের জীবন এখন মানবেতর পর্যায়ে।
আন্দোলন ও দাবি:
- সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী পুনর্বহাল কার্যকর করা হোক।
- ৫ শতাধিক চাকরিচ্যুত ব্যাটালিয়ন আনসারের মানবিক জীবন ও মৌলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।
- আন্দোলনরতদের উপর অযথা নিষেধাজ্ঞা ও মিথ্যা অভিযোগ থেকে মুক্তি দেওয়া হোক।
আন্দোলনকারীরা বলেন, কিছু অফিসার তাদের আন্দোলনকে ভুলভাবে বিদ্রোহের মর্যাদা দিতে চেষ্টা করেন, যা বাস্তবে ছিল না। তারা সরকারের বিরুদ্ধে নয়, শুধুমাত্র বিচারের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন চাইছেন।
প্রশাসনের উদাসীনতা:
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর পরিচালক (প্রশাসন) মুহাম্মদ সাজ্জাদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, “এটি আমার দায়িত্ব নয়, আদালতের বিষয়।” অপর পরিচালক (অপারেশন্স) মুহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকীও সরাসরি কথা বলতে অস্বীকার করেন। সকল তথ্য সাংবাদিকদের মুখপাত্রের মাধ্যমে জানাতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চাকরিচ্যুত ব্যাটালিয়ন আনসারদের আন্দোলন মানবিক ও আইনি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দীর্ঘ ৩১ বছরেও সুপ্রিম কোর্টের রায় বাস্তবায়িত না হওয়ায় ৫ শতাধিক সদস্য ও তাদের পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। দীর্ঘমেয়াদী অবহেলা এবং প্রশাসনের গড়িমসির কারণে তাদের ন্যায্য দাবির প্রতিফলন এখনও কার্যকর হয়নি।
বিআলো/তুরাগ