রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণ: চাপের মুখে বিআইডব্লিউটিএ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দিন কাটছে অস্বস্থিতে
চাপের মধ্যে রয়েছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড
রাজনৈতিক লেবেলিংয়ে কর্মকর্তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন
রতন বালো: ৫ আগস্ট ঐতিহাসিক গণঅভ্যূত্থানের পর জাতির জীবনে যে সম্ভাবনা জাগিয়েছিল তা দিনকে দিন অনেকটাই ম্লান হতে বসেছে। স্বপ্ন সারথীরা আগের মতো সোনালী দিনের আলো সেভাবেই জ্বালাতে পারছে না। কোথায় যেন সম্ভাবনার সবকিছু অন্ধকারে ঢেকে দিচ্ছে। ফলে প্রত্যাশিত চাওয়া-পাওয়ার সমন্বয় ক্রমান্নয়ে দূরে সরে যাচ্ছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) তারই বড় উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির হাল হকিকত থেকে সেটি অনেকটাই স্পষ্ট বলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের অভিযোগ।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক বছরের মধ্যে বিআইডব্লিউটিএ নতুন কোন প্রকল্প হাতে নিতে পারেনি বা কাজও হয়নি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন রাষ্টীয় এই প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অনেকটাই চাপের মধ্যে পড়েছে। চলমান কোন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি অনেকটাই ধীর হয়ে পড়ায় নতুন করে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে রাজনৈতিক লেবেলিংয়ে কর্মকর্তারা অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির ক্যাপিট্যাল ডেজিং প্রকল্পের আওতায় চলমান ১২টি প্রকল্পের কাজও ধীরগতি স্পষ্ট হচ্ছে। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত যা এখন ফাইলবন্দী হয়ে পড়েছে। পরিবর্তনের ঢেউয়ের খেসারত দিতে যেয়ে নতুন উন্নয়ন প্রকল্প শুরু করা যায়নি। অভ্যন্তরীণ সূত্রের খবর, চলমান ১২ প্রকল্পের কাজ যার মধ্যে অনেকগুলি নদী নাব্যতা এবং অবকাঠামোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেখানেও ধীরগতি বাসা বেঁধেছে। গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প গুলোর অগ্রগতি ধীরগতিতে চলার মূল কারণ রাজনৈতিক ট্যাগিং। এসব রাজনৈতিক ট্যাগিংয়ের ক্যাম্পেইনের কারণে কর্মকর্তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং ভীতসন্ত্রস্ত।
জানা গেছে, সেই রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকে বিআইডব্লিউটিএ কোনো নতুন উন্নয়ন উদ্যোগ গ্রহণও করতে পারেনি। এমনকি চলমান ১২টি প্রকল্পের অনেকটাই নদীর চলাচল ও অবকাঠামো রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে। যদিও কাজ বন্ধ হয়নি তবে সেটি ধীরগতিতে চলায় রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠানটি অনেকটাই লোকসানের দিকে এগুচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে কর্মচারীদের লক্ষ্যবস্তু করে তাদের মিথ্যে আওয়ামী লীগর ট্যাগ দিয়ে এক ধরনের অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। যারা এই কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদের বেশিরভাগই অনৈতিক সুবিধা দাবি করে থাকেন। তাদের দাবি পূরণ করা না হলে তারা পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগ ট্যাগ দিয়ে চাকুরি ও জীবিকার উপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে। এই মহলটি দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, গোয়েন্দা সংস্থা ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) বিআইডব্লিউটিএ কর্মীদের বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ দায়ের করছেন।
কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব অভিযোগ প্রায়ই মিডিয়া দ্বারা সত্যায়িত রিপোর্ট হিসেবে তুলে ধরা হয়, যা প্রতিষ্ঠানটিতে ভীতি ও কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। বর্তমানে চলমান প্রধান প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে নদীর খাল রক্ষার জন্য বৃহৎ খনন কাজ। এর মধ্যে জামালপুরের ব্রহ্মপুত্র ও ঝিনাই নদী, কুড়িগ্রামের ধরলা নদী, দিনাজপুরের তোলাই ও পুনর্ভবা নদী, টাঙ্গাইলের বাঁশী নদী, গাইবান্ধার ঘাঘট নদী, গাজীপুরের নাগদা নদী এবং কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার বিভিন্ন নদী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
অন্য প্রধান প্রকল্পগুলো হল ঢাকার চারপাশে একটি বৃত্তাকার পথ নির্মাণ, নদীর সীমানা নির্ধারণের জন্য সীমারেখা পিলার স্থাপন এবং ৩৫টি নতুন খনন যন্ত্রকেনার উদ্যোগ প্রক্রিয়াটিতেও বিলম্ব হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী চলমান প্রকল্পগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন এবং সময় মতো সমাপ্তি নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি। তিনি আরো বলেন, কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী পক্ষ মিথ্যে তথ্য ছড়াচ্ছে এবং কর্মকর্তাদের অনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত করে হুমকি দিচ্ছে। এটি আমাদের কাজের গতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। কিছু কিছু সাপ্তাহিক ও দৈনিকে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রচার করছে। তারা চাকুরির ভয় দেখাচ্ছে এবং অনৈতিক সুবিধা চাচ্ছে। তিনি গণমাধ্যমকে তথ্যযাচাই করে প্রকাশ করার আহ্বান জানান।
তিনি আরো বলেন, আমরা সর্বদা স্বচ্ছতার প্রতিবিশ্বাসী। যদি মিডিয়া প্রথমে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, আমরা স্পষ্টতা প্রদান করতে পারি এবং সঠিক তথ্য দিতে পারব। এতে বিভ্রান্তি কমবে এবং কর্মীদের মনোবল ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক একেএম আরিফ উদ্দিনও একই উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং কর্মীদের মনোবল বজায় রাখতে ও জনগণের প্রকল্পসমূহ সময়মতো বাস্তবায়নে গণমাধ্যমের সহায়তা চেয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত জানার জন্য সংশ্লিস্ট প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য অনুরোধ জানান।
এদিকে স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিল করার জন্য ইচ্ছাকৃত ভাবে বিআইডব্লিউটিএ’র বেশিরভাগ কর্মকর্তারা কর্মচারীদের আওয়ামী লীগের সদস্য বলে নানান ভাবে হয়রানি করছে। কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের সঙ্গে তালমিলিয়ে না চললেই এবং তাদের অনৈতিক সুবিধার দাবি পূরণ না করলেই, তখন তারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, গোয়েন্দা ইউনিট এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে এসে আমাদেরই বলেন যে আপনাদের নামে অভিযোগ রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র প্রধান প্রকৌশলী রকিবুল ইসলাম তালুকদার এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন সাড়া দেন না। তবে বিশ্বস্ত একটি সূত্র বলেছে, একটি স্বার্থান্বেষী মহল মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে এবং কর্মকর্তাদের আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত করার হুমকি দিচ্ছে, যাতে তারা অযৌক্তিক সুবিধা আদায় করতে পারে। এটি প্রতিষ্ঠানটিতে এক ধরনের অরাজকতার সৃষ্টি করছে। ফলে আমাদের কাজের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত করছে।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন সাড়া দেন না। তবে সংশ্লিস্ট প্রকৌশলী অথবা জনসংযোগ কর্মকতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
বিআলো/তুরাগ