ফরিদপুর মহাসড়কে আবারও অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ
নিজস্ব প্রতিবেদক: ফরিদপুরে ভাঙ্গায় সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে আবারও দুই মহাসড়ক অবরোধ করেছেন এলাকাবাসী। এতে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে মহাসড়ক দুটিকে অবরোধ করেন স্থানীয় এলাকাবাসী। এতে সম্পূর্ণ যান চলাচল বন্ধ রয়েছে মহাসড়ক দুটিতে। মহাসড়ক দুটির একাধিক স্থানে গাছের গুড়ি এবং টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন তারা।
এর আগে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গা গোল চত্বরের আশপাশেসহ ছয়টি স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছ ফেলে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেন স্থানীয় জনতা।
এতে ২১ জেলার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে প্রায় ২৫ কিলোমিটার মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। এ আন্দোলনে নারীদেরকেও অংশ নিতে দেখা যায়।
হাজারো জনতা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের হামিরদী ইউনিয়নের পুকুরিয়া, মাধবপুর বাসস্ট্যান্ড এবং ঢাকা খুলনা মহাসড়কের মুনসুরাবাদ বাসস্ট্যান্ড ও আলগী ইউনিয়নের সুয়াদী এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
এ সময় তারা ‘ভাঙ্গার এক ইঞ্চি মাটিও নগরকান্দার সঙ্গে মিশতে দেয়া হবে না’, ‘রক্ত লাগলে রক্ত নে, ভাঙ্গাবাসীকে মুক্তি দে’ স্লোগানে প্রকম্পিত হয়েছে মহাসড়ক। হাজার হাজার অবরোধকারীদের কারণে সব ধরণের যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এতে কয়েক হাজার যাত্রী চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
আন্দোলনকারীরা জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা কর্মসূচি থেকে সরবো না। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করায় অনেক যাত্রীকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। এ কারণে সন্ধ্যা ৭টা থেকে আগামীকাল বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত অবরোধ স্থগিত করা হয়। আজ সকাল ৮টা থেকে পুনরায় অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
জানা যায়, গত ৪ সেপ্টেম্বর আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০০ সংসদীয় আসনের পুনর্নির্ধারিত সীমানার তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ তালিকায় ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসনের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে কেটে ফরিদপুর-২ আসনে (সালথা-নগরকান্দা) অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিষয়টি নির্বাচন কমিশন হতে প্রকাশের পর থেকে ভাঙ্গা উপজেলাবাসীসহ ওই আসনের কাজ করা রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
সীমানা পুনর্বহালের দাবিতে গত শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে ও সন্ধ্যায় দুই দফায় ৯ ঘণ্টা ভাঙ্গা উপজেলা দিয়ে যাওয়া ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মনসুরাবাদ এবং ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের হামিরদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবরোধ ও টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করা হয়। এদিনও দুটি মহাসড়কের অন্তত ২১টি জেলার সব ধরনের যান চলাচল ৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকে।
এক পর্যায়ে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিজানুর রহমান, ওসি মো. আশরাফ হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে আন্দোলনকারীদের দাবির প্রতি আশ্বস্ত করলে অবরোধ তুলে নেয় জনতা। ওই সময় তিন দিনের আল্টিমেটাম দেন স্থানীয় জনতা। তিন দিনেও কোনো পদক্ষেপ কর্তৃপক্ষ গ্রহণ না করায় মঙ্গলবার থেকে পুনরায় শুরু হয় অবরোধ কর্মসূচি।
আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিক মিঞা জানান, আমাদের দুটি ইউনিয়ন কেটে নেয়ার আগে আমাদের অবগত করার দরকার ছিলো। ভাঙ্গা উপজেলার দুটি ইউনিয়ন পুনরায় ফরিদপুর-৪ আসনে যুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলবে বলে জানান তিনি।
২০১৩ সালের আগে বর্তমান ফরিদপুর-৪ আসনের তিনটি উপজেলার মধ্যে (সদরপুর-চরভদ্রাসন) উপজেলা ছিলো ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসন। এ ছাড়া ভাঙ্গা উপজেলা ছিল ফরিদপুর-৫ আসনের অন্তর্ভুক্ত। পরে ২০১৩ সালে দেশের সংসদীয় আসন সংখ্যা পুনর্বিন্যাসের সময় ফরিদপুরের ৫টি সংসদীয় আসনকে ভেঙে চারটি করা হয়।
উল্লেখ্য, বিএনপির নেতা শহিদুল ইসলামসহ সাতজনের পক্ষ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পাঠানো নোটিশে বলা হয়েছে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রজ্ঞাপন বাতিল না করা হলে হাইকোর্টে রিট করা হবে। তবে ওই দিন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানিয়েছিলেন, আইন অনুযায়ী চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। বিক্ষোভ-আন্দোলন করেও কোনো লাভ হবে না।
বিআলো/শিলি