• যোগাযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    তিন পার্বত্য জেলা: সিন্ডিকেটে ধরাশায়ী নৃগোষ্ঠীরা 

     dailybangla 
    19th Jul 2025 11:57 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

    সাজেক পাহাড়ে ভালো হয়েছে কফি চাষ, দেখতেও চমৎকার!

    আধুনিক ফলের চাষে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি: এম এম শাহ্ নেয়াজ, উপ-পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বান্দরবান

    রতন বালো: পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পাহাড় ভ্যালিতে কফি চাষে বাণিজ্যিক সাফল্যের খবর পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় কৃষক ও উদ্যোক্তারা কফি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন এবং এতে ভালো ফলনও পাচ্ছেন। বিশেষ করে, রাঙ্গামাটির সাজেক ও বান্দরবানের থানচি, রুমা, এবং খাগড়াছড়ির আলুটিলাতে কফি চাষে সফলতা এসেছে।

    পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়িতে কফিচাষে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা। এরইমধ্যে মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে কফি চাষে সাফল্যের খবর ছড়িয়ে পড়েছে। ভবিষ্যতে দেশের কফি বিশ্ববাজারে স্থান করে নেবে এমনটাই আশা সংশ্লিষ্টদের। তবে সিন্ডিকেটে ধরাশায়ী নৃগোষ্ঠীরা সফল কফির ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। সিন্ডিকেটদের ইচ্ছেমত এই উচ্চ ফসল কফি বিক্রি করতে হয় তাদের।

    খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার ৮ মাইল এলাকায় দুই একর জমিতে ১২০০ কফির চারা রোপণ করেছেন যলেশ্বর ত্রিপুরা নামে এক চাষি। কফি চাষে সাফল্য পাওয়া যলেশ্বর ত্রিপুরা বলেন, এরাবিকা’ও ‘রোবাস্টা’ জাতের কফির চারা রোপণ করেছি। তিন বছর বয়সী কফি বাগানে এরই মধ্যে কয়েকটা গাছে কফি ফল এসেছে। আশা করি আগামী বছর বেশিরভাগ গাছে ফল আসবে।

    এ দিকে সাজেক যাওয়ার পথে সরু রাস্তার দুপাশে অনেক স্থানেই পাহাড়ের ঢালে কফিসহ বিভিন্ন ফল চাষ করা হচ্ছে। বিশেষ করে কলা, পেঁপে, আনারসসহ বিভিন্ন ধরনের ফলমূল চাষ করা হয়। এই দৃশ্য সাজেক ভ্রমণের একটি অন্যতম আকর্ষণ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

    সূত্র বলেছে, সাজেক আশেপাশে পাহাড়ি ফল, যেমন- কফি, কলা, পেঁপে, আনারস, ডাব, বরই ইত্যাদি পাওয়া যায়। এই ফলগুলো রাস্তার ধারে স্থানীয় বিক্রেতাদের কাছেও পাওয়া যায়। সুতরাং, সাজেক যাওয়ার পথে রাস্তার দুপাশে ফল চাষ একটি সাধারণ দৃশ্য, যা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

    ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কবলে ধরাশায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলার ১৫টি নৃগোষ্ঠীসহ স্থানীয়রা। বিপুল সম্ভাবনাময় পাহাড়ি এসব জনপদে ভূ-প্রকৃতি, আবহাওয়া ও জলবায়ুর ওপর নির্ভর করে স্থানীয়রা ফল ও সবজি চাষ করে থাকেন। কিন্তু স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত প্রচুর পরিমাণ ফল ও সবজি নিয়ে স্থানীয় চাষিরা চরম সংকটে পড়ে যায়। চাষিদের মতে, অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এ বছর বিশেষ করে সবজির মধ্যে পেঁপের উৎপাদন ভালো হয়েছে । তবে ফসলের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নৃগোষ্ঠীরা।

    বিপুল সম্ভাবনাময় পাহাড়ি জনপদে ভূ-প্রকৃতি, আবহাওয়া ও জলবায়ুর ওপর নির্ভর করে ফল চাষ থেকে শুরু করে উন্নত জাতের সবজি চাষে ঝুঁকেছে তিন জেলার ২৬টি উপজেলার ১৫টি নৃগোষ্ঠীসহ প্রায় ১৬ লাখ ৬৩ হাজার ২১৪ উপজাতি। সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার অপরূপ সুন্দর আর চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত উঁচু-নিচু পাহাড়, পাহাড়ের বুক চিরে প্রবাহিত ঝর্ণা দেখলেই যেন মন ভরে যায়। হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায় মেঘ। শুধু অপরুপ সৌন্দর্যই নয়, তিন জেলার পাহাড়ের তলদেশ থেকে শুরু করে চুড়া পর্যন্ত কমলা, মাল্টা, আনারস, আমসহ নানা ফল ও সারি সারি সবজি চাষেও ঝুঁকছে উপজাতিরা। সবমিলিয়ে কৃষি, পর্যটনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। তেমনি রয়েছে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট।

    বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৫২ কিলোমিটার দূরে নীলগিরি পাহাড়ে যেতে সরু রাস্তার এপাশ ওপাশের পাহাড়গুলো শোভা পাচ্ছে এসব ফলের বাগান। পাহাড়ের তলা থেকে চূড়া পর্যন্ত আম, কলা, আনারস, কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফলগাছে ছেয়ে গেছে এসব পাহাড়।

    শুধু নীলগিরিই নয়, নীলাচল পর্যটন কেন্দ্র, বগালেক, রিজুক ঝর্না, শৈলপ্রপাত, সাঙগু নদী, স্বর্ণমন্দিরসহ সব পর্যটন কেন্দ্রে যেতেই এসব ফলের বাগান চোখে পড়ার মতো। সবুজের সমারোহ হাতছানি দিয়ে ডাকছে এখানে।

    খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে সাকেজ পাহাড়। এ পাহাড় সমতল ভূমি থেকে ৩ হাজার ফুট উচু।
    জানা গেছে, আম, কাঁঠাল, কলা, আনারস, কমলা, মাল্টাসহ চলতি মৌসুমে তিন জেলায় ৮০ লাখ ৩৩ হাজার ২৪১ মেট্রিক টন এসব জাতের ফল উৎপাদনের টার্গেট নিয়ে ৫০ হাজার ৫৩৩ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে ফলের আবাদ করা হয়েছে।

    প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে স্থানীয়দের ফলের চাহিদা পূরণ করে পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারবে বলে কৃষি কর্মকর্তারা মনে করছেন এবং পাহাড়ি জনপদে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে বলে স্থানীয়দের অভিমত।

    কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে আরো জানা গেছে, ১২ হাজার ৫১৮ হেক্টর আম চাষের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২২৮ হাজার ৮০৬ মেট্রিক টন, ১২ হাজার হেক্টর পেঁপে চাষের উৎপাদন ৩ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন, ২১ হাজার ৭৮০ হেক্টর কলা আবাদে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫১ হাজার ৮৯৪ মেট্রিক টন, ৬ হাজার ৬০ হেক্টর কমলা চাষের উৎপাদন ধরা হয়েছে ৬০ হাজার ৭২০ মেট্রিক টন, ১২ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে আনারস চাষের উৎপাদন ধরা হয়েছে ২১২ হাজার ৭৭৫ মেট্রিক টন, ৬০০ হেক্টর মাল্টা চাষে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন, ৫০০ হেক্টর কাজু বাদাম চাষের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ মেট্রিক টন।

    এ ছাড়া পার্বত্য জনপদ বান্দরবানের ১ হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমিতে স্থায়ী উন্নত আদা চাষে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন, ১ হাজার ৮৩৭ হেক্টর হলুদ চাষে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ৫৬০ মেট্রিক টন।
    বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বর্তমান উপ-পরিচালকের নাম এম এম শাহ্ নেয়াজ এর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, সীমিত জমিতে হেক্টর প্রতি ফলন বৃদ্ধির কলাকৌশল প্রয়োগসহ ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি উন্নয়নের প্রাথমিক পর্যায় থেকেই কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

    তিনি বলেন, যেহেতু এখানকার ভূ-প্রকৃতি, আবহাওয়া ও জলবায়ু ফল বিশেষ করে আম, কাঁঠাল, কলা, আনারস, কমলা, তেতুল ইত্যাদি ফসল চাষের জন্য উপযোগী, সেহেতু লাগসই প্রযুক্তির মাধ্যমে এই ফসল আবাদ সম্প্রসারণের নজর দেওয়া হচ্ছে।

    মুঠোফোনে রশিদ আহমদ নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, পাহাড়ি জনপদে ফলের বিপুল সম্ভাবনা থাকার পরেও উপজাতি কৃষক এসব ফলের ন্যায্যমূল্য পায় না। বিভিন্ন জাতের ফল থেকে শুরু করে সবজির বাম্পার ফলন হলেও দাম না পাওয়ায় অনেকেই হতাশ। এ দিকে সিন্ডিকেটের কারণে জেলা সদরসহ ৭টি উপজেলায় এসব ফল ও সবজি বিক্রি করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে উপজাতিদের ।

    কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, গত বছরের চেয়ে প্রায় এক হাজার ২০০ মেট্রিক টন শিম উৎপাদন বেড়েছে বান্দরবানে। বিগত বছর ৪৮১ হেক্টর জমিতে শিম উৎপাদন হয়েছিল ছিল ৬ হাজার ৮১৯ মেট্রিক টন। এবার ৪৯৫ হেক্টর জমিতে প্রায় ৮ হাজার মেট্রিক টন শিম উৎপাদন হয়।

    খাগড়াছড়ির রুইলুই পাড়ার উপজাতি অং চাং জানান, এ বছর পেঁপে আবাদ বেশি হয়েছে। পাশাপাশি কফির আবাদও হয়েছে ভালো,ফলনও ভাল। কিন্তু স্থানীয় বাজারে মূল্য কম। সব ব্যবসায়ীদের সিন্ডকেট দখলে নিয়েছে। এসব ব্যবসায়ীদের কাছে কম মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে। নইলে পাঁকা পেঁপে এক দুদিনেই পঁচে যায়। ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি না করলে, সাজেকে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কাছে বিক্রি করতে হয়। কিন্তু সেটা পরিমানে খুব কম। অনেকটা বাধ্য হয়ে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে হয়।

    বিআলো/তুরাগ

    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    August 2025
    M T W T F S S
     123
    45678910
    11121314151617
    18192021222324
    25262728293031