ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইস্পাত কঠিন ঐক্য ধরে রাখুন: কিশোরগঞ্জে ভার্চুয়ালি তারেক রহমান
নিউজ ডেস্ক: আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইস্পাত কঠিন ঐক্য ধরে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ শনিবার কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে নেতাকর্মীদের প্রতি এ আহ্বান জানান তিনি। তারেক রহমান বলেন, ‘স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও একটি অদৃশ্য শক্তি ধীরে ধীরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, যেকোনো মূল্যে বিএনপির নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যদি আমরা ইস্পাত কঠিন ঐক্য ধরে রাখতে পারি, তবে জনগণের রায় ধানের শীষের পক্ষেই আসবে।
দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দলের নাম ব্যবহার করে কেউ যেন ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করতে না পারে বা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন, দেশের সংস্কার নিয়ে কারও সঙ্গে বিএনপির কোনো মতভিন্নতা বা আপত্তি নেই। তবে সরকার প্রতিষ্ঠিত হতে হবে জনগণের রায়ে। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে উচ্চারণ করেন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দেশের উন্নয়নের জন্য বসে থাকার সময় নেই। বিএনপি উড়ে এসে জুড়ে বসেনি : এ দেশে যা কিছু ভালো, সবকিছু দিয়েছে বিএনপি। আর সেই বিএনপির বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে, মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমরা সেই দল, যারা উড়ে এসে জুড়ে বসেনি। লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা গড়ে উঠেছি। গতকাল শনিবার কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, নির্বাচনের মধ্যদিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে তা কাজে লাগানোর জন্য বিএনপি প্রস্তুত। ফখরুল আরো বলেন, একাত্তরে ভিন্ন অবস্থানে থাকা দল, এমনকি যাদের কালকে জন্ম হয়েছে তারাও বিএনপিকে নিয়ে কথা বলে, কিন্তু এই দল (বিএনপি) হলো ফিনিক্স পাখির মতো, এ দলকে ভেঙে ফেলার ষড়যন্ত্র হয়েছে, কিন্তু সফল হয়নি। বরং ষড়যন্ত্রকারীরাই পালিয়ে গেছে। মহাসচিব বলেন, যেকোনো নেতার নামে স্লোগান নয়, স্লোগান হবে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নামে। তিনি আরো বলেন, শহীদ জিয়া ছিলেন বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিলেন। এর আগে শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র চারটি পত্রিকা চালু রেখে সব পত্রপত্রিকা বন্ধ করে দেন।
তরুণদের এ কথাটা জানা দরকার। শহিদ জিয়ার স্বপ্ন ছিল একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের, আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য তিনি বিএনপিকে প্রতিষ্ঠা করেন। বাকশাল থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিয়ে আসেন। কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে ও মাজহারুল ইসলামের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম। বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ, কোষাধ্যক্ষ এম রাশিদুজ্জামান মিল্লাত, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ ওয়ারেছ আলী ও আরেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ।
রাজনৈতিক স্বার্থে রাষ্ট্রকে ‘ঝুঁকির মুখে’ ঠেলবেন না: রাজনৈতিক স্বার্থে রাষ্ট্রকে ‘ঝুঁকির মুখে’ ঠেলে না দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আসুন, আমরা কোনো সংকট সৃষ্টি না করি এবং সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি। গতকাল শনিবার রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ‘তারুণ্যের রাষ্ট্রচিন্তার তৃতীয় সংলাপ-মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সালাহউদ্দিন এসব কথা বলেন। আলোচনা সভাটির আয়োজন করে ‘অপর্ণ আলোক সংঘ’।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে আলোচনা প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, কোনো বিষয়ে যদি ঐকমত্য না হয়, তবে প্রচলিত বিধিবিধান অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। এখানে যেন আমরা পরস্পর জবরদস্তি না করি। যে পরিবর্তনগুলো আনা হচ্ছে, সেগুলো রাতারাতি সম্ভব হবে না, এর জন্য সময় এবং পর্যায়ক্রমিক প্রক্রিয়া প্রয়োজন। অন্তর্বর্তী সরকারে ছাত্র প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ছাত্র প্রতিনিধিদের সরকারে আসাটা আমার মনে হয় সঠিক বিবেচনায় সিদ্ধান্ত হয়নি। ছাত্ররা বরং একটি ‘প্রেসার গ্রুপ’ হিসেবে কাজ করতে পারতো, যা জাতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সাহায্য করতো। বর্তমানে যারা ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে আছেন, তাদের প্রতিদিন দায়ী হতে হচ্ছে।
জাতীয় পার্টির নেত্রী রওশন এরশাদের একটি মন্তব্য টেনে সালাহউদ্দিন বলেন, রওশন এরশাদ বলেছিলেন, ‘মাননীয় স্পিকার আপনি বলে দেন, আমি সরকারি দল না বিরোধী দল’। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের চর্চা না হয়, সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ইসলামী দলের বর্তমান যুগপৎ আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আলোচনার টেবিলে আলোচনা চলমান থাকা অবস্থায় মাঠে আন্দোলন করাটা স্ববিরোধী। গণমাধ্যমের সংবাদের সূত্র ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, পত্রিকায় আজকে হেডলাইন দেখলাম, কোথাও বলছে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সরকার গঠন করবে, বিএনপি বিরোধী দলে যাবে। এ সিদ্ধান্ত কি জনগণ নাকি গণমাধ্যম নিয়েছে? যারা এত বেশি আত্মবিশ্বাসী যে তারা সরকার গঠন করবে, তারা কেন নির্বাচনে অংশ নিতে ভয় পায়? এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে।
অন্তর্বর্তী সরকার প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, কিছু মহল এই সরকারকে ‘অর্ধ-সাংবিধানিক’ বলে প্রশ্ন তুলছে। এই ধরনের প্রশ্ন তুলে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করা হলে এর সুবিধাভোগী হবে কোনো অসাংবিধানিক শক্তি বা পতিত স্বৈরাচার। তাই রাজনৈতিক স্বার্থে রাষ্ট্রকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে না দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
বিআলো/ইমরান