বনশ্রীতে নিজ বাসার সামনে অলংকার জুয়েলার্সের মালিককে গুলি, ২০০ ভরি স্বর্ণ লুট
ইবনে ফরহাদ তুরাগ: এটি কোনো ছবির সুটিং নয়, বরং বাস্তব দৃশ্য। ছবিতে দেখা যাচ্ছে রাজধানীর বনশ্রী এলাকার নিজ বাসার সামনে আনোয়ার হোসেন (৪৩) নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করছে সন্ত্রাসীরা। এ সময় তার হাতে থাকা ২০০ ভরি স্বর্ন ও নগদ এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা।
রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রামপুরা থানাধীন বনশ্রী ডি ব্লক ৭ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে। এসময় পাশের ভবন থেকে ছিনতাই ও গুলির দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও করেন প্রতিবেশীরা। রাতেই তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তিনজন মোটরসাইকেল থেকে নেমে ব্যবসায়ী আনোয়ারের কাছ থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি ব্যাগ ছাড়ছেন না। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে একজন তাকে গুলি করেন। পরে ব্যাগ ছিনিয়ে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায় তারা। পরে রাত ১২টার দিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।
গুলিবিদ্ধ আনোয়ারের স্বজনরা জানান, আনোয়ারের ব্যাগে ২০০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ এক লাখ টাকা ছিল। তাদের ধারণা দোকান থেকেই তাকে অনুসরণ করেছিল দুর্বৃত্তরা। এরপর বাসার সামনে পৌঁছামাত্র স্বর্ণ ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
হাসপাতালে দেখতে আসা অলংকার জুয়েলার্সের কর্নধার মুজিবুর রহমান বলেন, বনশ্রীর সি ব্লকের ৫ নম্বর সড়কে ‘অলংকার জুয়েলার্স’ নামে জুয়েলারির দোকান রয়েছে আনোয়ারের। প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি স্বর্ণের ব্যবসা করছেন। ডি ব্লকের ৭ নম্বর রোডে ২০ নম্বর বাড়িতে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় হেঁটে যাতায়াত করেন। প্রতি রাতের মত রোববার রাতেও দোকানে থাকা ২০০ ভরি স্বর্ণের গহনা ব্যাগে নিয়ে হেঁটে বাসায় ফিরছিলেন। ভবনের গেটের কাছে যাওয়া মাত্র তিনটি মোটরসাইকেল তাকে ঘিরে ধরে। এ সময় তাকে কুপিয়ে ও গুলি করে স্বর্ণের ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। তাতে নগদ এক লাখ টাকাও ছিল। শরীরে চারটি গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এছাড়া অন্তত ৬ স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাকে।
রামপুরা থানার ওসি (তদন্ত) মশিউল আলম বলেন, স্বর্ণ ব্যবসায়ী আনোয়ারকে প্রথমে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বনশ্রীর ফরাজী হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ।
বনশ্রীতে রাতভর সম্মিলিত পাহারার উদ্যোগ:
রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় ব্যবসায়ীকে গুলি করে স্বর্ণালংকার ও টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে পুরো এলাকাবাসী। সোমবার রাত থেকেই স্থানীয় যুবকদের সমন্বয়ে রাতভর সম্মিলিত পাহারার উদ্যোগ নিয়েছেন তারা।
এখানকার ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা বলছেন, সরকার যেহেতু আমাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে, সেক্ষেত্রে নিজেদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিজেদেরই নিতে হবে। তাই সোমবার রাত থেকে সবাই মিলে ব্লকভিত্তিক পাহারার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
সম্মিলিত পাহারা দেওয়ার বিষয়ে বনশ্রী এলাকার ছেলে রিদওয়ান খান তার ফেসবুক গ্রুপে লেখেন, ‘আমাদের তো প্রতিদিনই রাত জাগা হয়। একটা বড় টিম হয়ে কাজ করেল এবং পাঁচটা বাইক নিয়ে অন্তত ১০ জন মানুষ একসঙ্গে বনশ্রীতে সারারাত ঘুরলে অনেকটুকু বিপদ কাটবে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘স্বাভাবিকভাবে একজন মানুষ প্রতি রাত জগতে পারবে না, তাই একটা বড় টিম করলে একজন এক রাত করে জাগলেই হয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাকে সবসময় পাবেন। আপনাদের দায়িত্বের ওপর টিম বানানোর কথা ভাবব।’
রিদওয়ান খানের আহ্বানে প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ সাড়া দেন এবং পাহারার কাজে নিজেদের অংশগ্রহণের আগ্রহ জানান। সেই স্ট্যাটাসের কমেন্টে রিদওয়ান খান সবার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ খোলার উদ্যোগের কথাও জানান।
ফারহান নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘সবাই যেহেতু পাহারাদার হওয়ার কথা ভাবছেন, এ ক্ষেত্রে বনশ্রীর প্রতিটা বাসার সামনে তিন থেকে চারজন করে থাকলে এক রোডেই ৫০ থেকে ৭০ জন হয়ে যাবে। কাজেই এত গ্রুপ করার ঝামেলা থাকবে না। একমত হইলে পরবর্তী দিন থেকেই নেমে পড়েন। আমিও আছি।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আকাশ আহমেদ নামে আরেক যুবক লেখেন, ‘বনশ্রীর প্রতিটি রোডে রাত ৯টা থেকে ফজরের নামাজ পর্যন্ত গ্রুপ করে নিজেদের অবস্থান নিতে হবে। এখন থেকে বাড়ি এবং রাস্তায় নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
বিআলো/নিউজ