বরিশাল মহাশ্মশানে দীপাবলি উৎসব: দুই শত বছরের ঐতিহ্যে প্রদীপের আলোয় আলোকিত শ্মশানভূমি
এইচ আর হীরা, বরিশাল ব্যুরো: উপমহাদেশের অন্যতম বৃহত্তম বরিশাল মহাশ্মশানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুই দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী ‘দীপাবলি উৎসব’ চলছে। শনিবার (১৯ অক্টোবর) সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে নগরীর কাউনিয়া এলাকার এই প্রাচীন মহাশ্মশানটি হাজারো প্রদীপের আলোয় ঝলমল করে ওঠে।
প্রিয়জন হারানোর বেদনা ও স্মৃতিচারণায় শ্মশানজুড়ে সৃষ্টি হয় এক পবিত্র আবহ। আত্মীয়স্বজনরা প্রিয়জনদের সমাধিতে প্রদীপ জ্বেলে, ফুল ও উপহার দিয়ে প্রার্থনা করেন তাদের আত্মার শান্তি কামনায়।
বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সভাপতি অসীম কুমার দাস মুরালি জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী, কালিপূজার আগের দিন ভূত চতুর্দশী তিথিতে পূজা অর্চনা করলে মৃত আত্মারা পরম শান্তি লাভ করে। এ কারণে স্বজনরা এই দিন সমাধি বেদীতে প্রদীপ জ্বেলে প্রার্থনা করেন।
তিথি অনুযায়ী এ বছর দীপাবলি উৎসবের সূচনা হয় রবিবার দুপুর ১টায়, যা চলবে রাত ১টা পর্যন্ত। প্রতিবছর ভূত চতুর্দশীর পূণ্য তিথিতে আয়োজিত এই উৎসব বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজারো দর্শনার্থী ও ভক্তকে টেনে আনে।
তথ্য অনুসারে, প্রায় দুই শত বছরের পুরোনো এই বরিশাল মহাশ্মশানে দীপাবলি উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় ১৯২৭ সালে। প্রায় ৬ একর আয়তনের শ্মশানটিতে রয়েছে সাত সহস্রাধিক কাঁচা-পাকা সমাধি।
ঐতিহ্যবাহী এই শ্মশানে শায়িত আছেন রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের পিতা সত্যানন্দ দাশ, পিতামহ সর্বানন্দ দাশ, বিপ্লবী দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ, কালিচন্দ্র ঘোষ, মনোরমা বসু ও অশ্বিনীকুমার দত্তসহ অসংখ্য গুণীজন।
মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজয় ভক্ত জানান, উৎসবের সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ আয়োজন নিশ্চিত করতে প্রশাসনের সহযোগিতা পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, “শ্মশানের ভেতর ও বাইরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পোশাকধারী ও সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে সহায়তা কেন্দ্র চালু রাখা হয়েছে এবং যাতায়াত সহজ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
বরিশালের এই দীপাবলি উৎসব কেবল একটি ধর্মীয় আচার নয়, এটি এখন পরিণত হয়েছে স্মৃতি, শ্রদ্ধা ও আলোয় ভরা এক অনন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে।
বিআলো/তুরাগ



