বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী আসিফ ইকবাল পেলেন বিসিআরএ সম্মাননা
১৩ বছর বয়সে গিটারে আলোড়ন, আজ বিশ্বমুখী স্বপ্ন
হৃদয় খান: নব্বই দশকের শুরুতে যখন দেশে ব্যান্ড সঙ্গীতের জোয়ারে তরুণরা ভাসছে, সেই সময় এক কিশোর কনসার্টে রিদম গিটার বাজিয়ে শ্রোতাদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। তখন ১৯৯১ সালে তার বয়স মাত্র ১৩। এত অল্প বয়সে দেশে আর কেউ গিটার বাজায়নি। সেই কিশোর আর কিশোর নেই, এখন তিনি পরিণত। দেশে-বিদেশে গান করছেন। তার নাম আসিফ ইকবাল আহমেদ। তাকে সবাই তামিম নামেই জানেন।
আসিফ ইকবাল একাধারে গায়ক, গিটারিস্ট, পিয়ানো ও ড্রাম বাদক, কম্পোজার, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার। আশির দশকের শুরুতে বাবা-মায়ের চাকরির সুবাধে তার ছোটবেলা কাটে আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবীতে। ’৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানের ইসলামীয়া ইংলিশ স্কুলে পড়াশোনা করেন। তারপর দেশে ফিরে বাকি পড়াশোনা শেষ করেন। আবুধাবীতে থাকাকালীন তিনি ৯ বছর ইন্সট্রুমেন্টাল কম্পোজিশনের ওপর প্রশিক্ষণ নেন।
গানের প্রতি তার দুর্বার আকর্ষণের পাশাপাশি তিনি বহুমুখী কার্যক্রমে নিজেকে জড়ান। দেশে-বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন এবং দেশে সরকারি চাকরিও করেন। বিশ্বের বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন তিনি। ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু, আরবী, সেতসোয়ানা, তাগালোগ ভাষায় তিনি পারদর্শী।
এতসব ব্যস্ততার মধ্যেও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী আসিফ ইকবাল আহমেদ গান থেকে দূরে সরে যাননি। সঙ্গীতে বিটিভির উচ্চ গ্রেডে তালিকাভুক্ত এই শিল্পী আবার গানে সরব হয়েছেন। ২০০৯ সালে ঈদুল ফিতরে রেজ রেকর্ড প্রতিষ্ঠান থেকে তার নিজের লেখা, সুর ও কম্পোজিশনে প্রকাশ করেন প্রথম অ্যালবাম ‘তুমি’। সফট-মেলোডি ধারার গানগুলো শ্রোতাদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে। আসিফ জানান, তিনি মেলোডি-রোমান্টিক গান গাইতে বেশি পছন্দ করেন। তার গানের মধ্যে নস্টালজিক দিকটি রাখতে চান।
তিনি বলেন, এখন বিশ্বজুড়ে আশি-নব্বই দশকের গানের ধারাটা ফিরে এসেছে এবং নতুন প্রজন্মের কাছেও তা জনপ্রিয়। তার নতুন গানেও সেই ধারাটি যুক্ত করতে চান। তিনি জানান, নতুন করে তিনটি গান তৈরি করেছেন। একটি গানে তার সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছেন কণা। আগামী জানুয়ারিতে গান তিনটির মিউজিক ভিডিওর শুটিং করতে থাইল্যান্ড যাবেন। একটি গানে মডেল হবেন কলকাতার চিত্রনায়িকা রাইমা সেন। গানগুলো স্পটিফাইতে প্রকাশ করা হবে।
আসিফ ইকবাল একটি চমকপ্রদ তথ্যও দেন। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত একটি সঙ্গীত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান তার একটি ইংরেজি গান প্রকাশ করবে। গানটি তিনি নিজেই লিখেছেন এবং সুর করেছেন। তিনি জানান, কোন প্রতিষ্ঠানটি গানটি প্রকাশ করবে তা এখনই বলতে চান না।
তবে এটি হবে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশের কোনো গায়কের গাওয়া প্রথম ইংরেজি মৌলিক গান। মিউজিক প্রতিষ্ঠানটি তার ‘তুমি’ শিরোনামের গানটি শুনে তাকে ইংরেজি গান করার প্রস্তাব দেয়। গানটি আন্তর্জাতিকভাবে বাজারজাত করবে এবং আসিফের জন্য ইউরোপে ছয় মাসব্যাপী সঙ্গীত ট্যুরের আয়োজন করবে। এছাড়া তিনি আরও তিনটি ইংরেজি গান তৈরি করেছেন।
আসিফ ইকবাল যে ক্ষেত্রে হাত দিয়েছেন সফল হয়েছেন। দীর্ঘদিন গান থেকে দূরে থাকলেও এখন গানে মনোযোগ দিয়েছেন। গান নিয়ে তার দর্শন হচ্ছে—বাংলাদেশের গানকে বিশ্বে ব্যাপকভাবে পরিচিত করা। গান বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে—এই লক্ষ্য ও পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি।
বিআলো/তুরাগ



