• যোগাযোগ
  • অভিযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    বাংলাদেশের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে যেতে চাই:শহীদুজ্জামান কাঁকন 

     dailybangla 
    20th Nov 2025 5:23 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

    তরুণ প্রজন্মকে সামনে রেখে বিএনপি আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট যুদ্ধে যেসব কৌশল প্রয়োগ করছে তারই ধারাবাহিকতা দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন। দলের উজ্জ্বল কীর্তিমান তারকাদের সামনের কাতারে নিয়ে আসার প্রত্যাশা ছিল বিএনপির নেতা-কর্মী, সমর্থক ও দেশবাসীর। কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) সংসদীয় আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার সমৃদ্ধ কটিয়াদীবাসীর প্রথম পছন্দের প্রার্থী শহীদুজ্জামান কাঁকন বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পাবেন এমন প্রত্যাশাই ছিল জনমনে। কিন্তু অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ায় দিন দিন পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে দৈনিক বাংলাদেশের আলো আজ দ্বিতীয় পর্বে একটি পর্যালোচনা ভিত্তিক প্রতিবেদন ও সাক্ষাৎকার প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) সংসদীয় আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী একজন তরুণ প্রজন্মের আইডল ও প্রতিচ্ছবি শহীদুজ্জামান কাঁকন। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি আকাশ মাহমুদ

    দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) সংসদীয় আসনে মাঠে সক্রিয় ছিলেন বিএনপির ৯ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন। পাকুন্দিয়া উপজেলার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিনকে মেনে নিতে পারছেনা সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার সমৃদ্ধ কটিয়াদী উপজেলা বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। পাকুন্দিয়ার তুলনায় কটিয়াদী উপজেলায় প্রায় ১ লাখ ভোটার বেশি। এ আসনে তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রার্থী মনোনয়ন হয়নি। তাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য জাতীয় নির্বাচনে এর একটি বিরূপ প্রভাব পড়বে। সৃষ্ট পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে বিএনপির হাইকমান্ড নতুন করে প্রার্থী মনোনয়ন দেবে বলে তারা বিশ্বাস করেন। এজন্য প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে তারা আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।

    খোঁজ-খবর নিয়ে দেখা গেছে, আঞ্চলিকতা বিবেচনায় ভোটাররা মুখ ফিরিয়ে নিলে এ আসনে বিএনপির প্রার্থীর জয়ী হওয়া কঠিন হয়ে যাবে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, কটিয়াদী-পাকুন্দিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শহীদুজ্জামান কাঁকনকেই দলীয় প্রার্থী হিসেবে চায়। বিএনপির বাইরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও বলছে, শহীদুজ্জামান কাঁকনকে প্রার্থী করা হলে এ আসনে বিএনপির জয় সুনিশ্চিত। সুইডেন প্রবাসী এই নেতা প্রবাসে থেকেও বিপদে-আপদে সব সময় বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের পাশে থেকেছেন। এ ছাড়া তিনি রাজনৈতিক লবিস্ট হিসেবে বিএনপির পক্ষে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন কাঁকন। এবারও তাকে প্রার্থী করা হলে দলীয় সব ভেদাভেদ ভুলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে তার হয়ে কাজ করবেন। কটিয়াদীর সাধারণ মানুষের কাছে জালাল উদ্দিন অপরিচিত মুখ। নেতাকর্মীদের সঙ্গেও তার কোনো যোগাযোগ নেই।

    তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি প্রার্থী মনোনয়নে। যদি প্রার্থী পরিবর্তন না করা হয়, তাহলে কটিয়াদী উপজেলায় আঞ্চলিকতার টানে জামায়াত প্রার্থী বিজয়ী হয়ে যেতে পারেন এমনটিই এখন রাজনীতির মাঠে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।
    এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে চিঠিতে কিশোরগঞ্জ-২ আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। চিঠিতে জেলার ১৩টি উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট ও জেলা ইউনিটের আহ্বায়করা স্বাক্ষর করেছেন। কটিয়াদীবাসীর মতে-জেলা বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুজ্জামান কাঁকন ২০১৮ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় এবার আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়নের অন্যতম দাবিদার। এলাকায় শহীদুজ্জামান কাঁকনের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা ও সুনাম রয়েছে। একজন স্বচ্ছ ইমেজের নেতা হিসেবে এলাকায় তিনি সমাদৃত ও পরিচিত। বিএনপি’র ৩১ দফার প্রচার এবং গণসংযোগ নিয়ে মাঠে আছেন।

    অপরদিকে কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়ার বিএনপির মাঠ নেতা-কর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বিস্তর অভিযোগ অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে অবিলম্বে অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানিয়ে নেতা-কর্মীরা বলেন, ৫ আগস্টের পর কিশোরগঞ্জ জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন আর্থিক সুবিধা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের জামিনে সহযোগিতা করেছেন। এ ছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা-মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত ডিআইজি আব্দুল কাহার আকন্দের সঙ্গেও তার রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। সাবেক আইজিপি ও আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য নুর মোহাম্মদের সঙ্গে তার ওঠাবসা ছিল ওপেন সিক্রেট। পাকুন্দিয়ায় কাহার আকন্দের পক্ষে জালাল উদ্দিন একাধিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেন এবং সেখানে কাহার আকন্দকে প্রধান অতিথি করে প্রশংসা করেন। এ বিষয়ে তার নিজস্ব ফেসবুক আইডিতেও পোস্ট ছিল, যা এলাকায় ভাইরাল হয় এবং এই প্রার্থী সম্পর্কে মানুষের সন্দেহ ও ক্ষোভ আরো বাড়িয়ে তুলেছে।

    গত ১১ নভেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলা ইউনিট কার্যালয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কিশোরগঞ্জ জেলা ইউনিট কমান্ডের যৌথ সভায় কিশোরগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর বিএনপির মনোনীত প্রার্থী জালাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে সাতটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপন করেন মুক্তিযোদ্ধারা। বিএনপির সাবেক এমপি আক্তারুজ্জামান রঞ্জন, কটিয়াদী উপজেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন খান দিলীপসহ গ্রহণযোগ্য-সমাদৃত রাজনীতিবিদরা অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিনের বিরোধীতা করে কিশোরগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি জানান।

    শহীদুজ্জামান কাঁকন কটিয়াদীর ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির দলীয় তরুণ প্রজন্মের প্রার্থীদের মধ্যে তিনি উচ্চশিক্ষিত ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বেশ আগেই। ২০১৮ সালে শহিদুজ্জামান কাঁকন কিশোরগঞ্জ-২ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন পেয়েছিলেন। আওয়ামী সরকারের একদলীয় শাসনব্যবস্থায় বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে নিশ্চিত বিজয়ের সম্ভাবনা নিয়েও দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি অনুগত থেকেছেন কাঁকন। দৈনিক বাংলাদেশের আলোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারপূর্ব একান্ত আলাপচারিতায় শহীদুজ্জামান কাঁকন বলেন, তরুণ প্রজন্মের আশা আকাক্সক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে জনগণের ভোটের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করাই আমার মূল অঙ্গীকার। একটি সমৃদ্ধ ও ন্যায়ভিত্তিক এবং মানবিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চাই।

    শহীদুজ্জামান কাঁকন ১৯৭০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম এবং রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মরহুম অ্যাডভোকেট মো. নুরুজ্জামান (চাঁন মিয়া) কিশোরগঞ্জ-২ আসনে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি কিশোরগঞ্জ সদর পৌরসভার প্রথম পৌর চেয়ারম্যান, কিশোরগঞ্জ জেলা বার কাউন্সিল ও কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সভাপতি এবং কিশোরগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

    মা নুরুন্নাহার জামান কিশোরগঞ্জ সদর পৌরসভার কমিশনার এবং কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত কাউন্সিলর ও কিশোরগঞ্জ জেলা মহিলা সমিতির সভাপতি ছিলেন। শহিদুজ্জামান কাঁকনের রাজনৈতিক ও পারিবারিক ঐতিহ্য এখানেই শেষ নয়। এরও আগে তার দাদা মরহুম অ্যাডভোকেট মৌলভী মো. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন তৎকালীন ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া-হোসেনপুর) মেম্বার। পরবর্তীতে তিনি কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া-হোসেনপুর সংসদীয় আসনের এমপি নির্বাচিত হন।

    দক্ষ কূটনীতিক শহিদুজ্জামান কাঁকন মাতৃভাষার পাশাপাশি ইংরেজি রুশ, সুইডিস, জার্মান, হিন্দি ও উর্দু ভাষায় পারদর্শী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পূর্ণ করে তিনি সুইডেন উপসালা ইউনিভার্সিটি থেকে সমাজবিজ্ঞানে এম. এস. এস ডিগ্রি অর্জন করে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ও এম.এস.এস ডিগ্রি অর্জন করেন।

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুজিব হল ছাত্রদল শাখার সভাপতি এবং ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শহীদুজ্জামান কাঁকন ১৯৮৬ সালে ডাকসু নির্বাচনে সংগ্রাম পরিষদের বিপরীতে ছাত্রদলের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন। শিক্ষাজীবন শেষ করার পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। প্রবাসে ও জাতীয় রাজনীতিতে ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ ছেড়ে তিনি নিজ জন্মস্থান কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপিতে সম্পৃক্ত হন। কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি বিগত আন্দোলন সংগ্রামে দৃঢ় নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।

    ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশ ও উন্নত বিশ্বের রাষ্ট্রের সরকার এবং কূটনীতিকদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকায় শহিদুজ্জামান কাঁকন বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের একদলীয় শাসনব্যবস্থা, গণতন্ত্রহীনতা, বিএনপি ও সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন-গুম-খুনের ইতিহাস তুলে ধরার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অসামান্য অবদান রাখেন। লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে দলের পক্ষে লবিস্ট হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে।

    শহীদুজ্জামান কাঁকন এসকেটিএফ এর অফিসার্স এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ইউরোপ-কিশোরগঞ্জ এসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিএনপি’র পক্ষে ইউরোপের দেশগুলোতে আওয়ামী লবিস্টদের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জিং ভূমিকা পালন করছেন। সুইডেন-বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিগত আওয়ামী সরকারের ফ্যাসিজমের ইতিহাস তুলে ধরতে সক্ষম হন। সুইডেন সরকারের একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবেও কাজ করে প্রসংশিত হন শহীদুজ্জামান কাঁকন।

    দৈনিক বাংলাদেশের আলো : বিএনপি’র রাজনীতিতে আপনার সূচনা পর্বটি বলবেন কী?
    শহীদুজ্জামান কাঁকন : আমি একটি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক আদর্শের ধারক পরিবারের সন্তান। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শকে বুকে ধারণ করেই আমার রাজনীতিতে আসা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের রাজনীতির মাধ্যমেই আমার রাজনীতির পদচারণা। ছাত্রজীবনে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করেছি। এরপর কিশোরগঞ্জ জেলাসহ কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়ায় ছাত্রদলের প্রায় সকল কর্মসূচিতে আমার নেতৃত্ব এবং অংশগ্রহণ ছিল। বলতে পারেন এটিই আমার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা পর্ব।
    দৈনিক বাংলাদেশের আলো : বিগত সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে আপনার ভূমিকা নিয়ে কিছু বলবেন কী?
    শহীদুজ্জামান কাঁকন : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ঘোষিত সকল আন্দোলন এবং কর্মসূচিতে আমার নেতৃত্বে দলের সকল স্তরের কর্মী-সমর্থকরা হাসিনার ফ্যাসিস্ট পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। হরতাল অবরোধ কর্মসূচিতে অনেকবারই ঢাকা-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ, মানিকখালি রেলপথের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, কটিয়াদীতে সড়ক অবরোধ, ঢাকা-কিশোরগঞ্জ হাইওয়ের কেন্দ্রস্থল পুলেরঘাট বাজারে সর্বাত্মক অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেই আমি। এসব কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও পুলিশের যৌথ হামলায় আমিসহ বিএনপির অসংখ্য নেতা-কর্মী আহত ও গ্রেপ্তার হই। ঢাকার নয়াপল্টনে আন্দোলনের সময়ও আমি গ্রেপ্তার হই। দীর্ঘ ১৭ বছরে বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে অসংখ্য নেতা-কর্মীদের মত আমিও বহুবার গ্রেপ্তার হয়েছি। এসব নির্যাতনের ঘটনাগুলো দেশের সকল গণমাধ্যমেও এসেছে।
    দৈনিক বাংলাদেশের আলো : আপনার রাজনৈতিক জীবনের স্মরণীয় কোন ঘটনা সম্পর্কে জানাবেন কী?

    শহীদুজ্জামান কাঁকন : আপনারা জানেন, বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ১৭ বছরই ছিল একদলীয় শাসনব্যবস্থা। এর মধ্যেও আমাদের দল বিএনপি চেয়েছিল গণতন্ত্রের আবহও ঠিক রাখা। এরই অংশ হিসেবে ২০১৪ সালে বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আমি কটিয়াদী উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি এবং বিপুল ভোটে বিজয়ী হই। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের অনুগত প্রশাসনের কর্মকর্তারা আমার ঐ ফলাফল ছিনতাই করে নিজেদের জনবিচ্ছিন্নপ্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করে। এরপর নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তকেই ফলাফল হিসেবে প্রকাশ করে। আওয়ামী ফ্যাসিস্টের দোসর হয়ে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের এমন নেক্কারজনক ভূমিকার কারণে আমার সুনিশ্চিত বিজয় হাইজ্যাক করা হয়েছিল বলে আমি সেদিন অনেক মর্মাহত হয়েছিলাম।

    দৈনিক বাংলাদেশের আলো : আপনার নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামাজিক খাতে কোন ঘাটতি বা সংকট দেখছেন কী?
    শহীদুজ্জামান কাঁকন : বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার টানা দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতা ভোগ করলেও আমার নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়নের ব্যাপক ঘাটতি রয়ে গেছে। তৃণমূলের সমস্ত রাস্তাঘাট জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। আমার দল বিএনপি যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় এবং আমি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হই তাহলে আমার প্রধান ও প্রথম লক্ষই হবে জনদুর্ভোগের মতো কাজগুলো দ্রুত সমাধান করা। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে কিশোরগঞ্জ জেলার অন্যান্য এলাকা থেকে আমার নির্বাচনী এলাকা কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া অনেক পিছিয়ে আছে। ইনশাআল্লাহ, আমি কটিয়াদী-পাকুন্দিয়ার জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে অগ্রসরমান চিন্তার ধারক ও এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের পরামর্শ এবং সহযোগিতা নিয়ে একটি উন্নয়নের রোডম্যাপ তৈরি করে বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।
    দৈনিক বাংলাদেশের আলো : কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) সংসদীয় আসনে আপনার উন্নয়ন ও জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম সম্পর্কে কিছু বলবেন কী?

    শহীদুজ্জামান কাঁকন : আপনারা হয়তো অবগত আছেন, আমি দীর্ঘদিন যাবত এলাকার জনগণের জন্য কাজ করে আসছি, বিভিন্নভাবে সেবা প্রদান করার চেষ্টা করছি। আমি নির্বাচিত হলে এলাকার জনসাধারণ ও প্রশাসনের সবাইকে সঙ্গে নিয়েই মাদক-জুয়া, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা ও নানামুখী সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলব। এছাড়া রক্তদান কর্মসূচি, শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তিসহ নানাবিধ উন্নয়ন ও জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ নিব। পাশাপাশি এলাকাবাসীর প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী নতুন নতুন কর্মসূচি গ্রহণের পরিকল্পনাও আমার আছে।
    দৈনিক বাংলাদেশের আলো : জুলাই আন্দোলন পরবর্তী বিএনপি এবং জামায়াতের মধ্যে দূরত্ব ও বৈরিতা তৈরি হয়েছে। দৃশ্যমান এ বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
    শহীদুজ্জামান কাঁকন : আপনারা জানেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময় জামায়াতে ইসলাম বাংলাদেশ প্রকাশ্য রাজনীতি শুরু করে। এরপর বহুদিন ধরে চারদলীয় জোটে জামায়াত অন্যতম অংশীদার ছিল। সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সহযোগিতা এবং পরবর্তী সময় বিএনপি সরকারের মন্ত্রিসভায় তারা স্থান করে নেয়। দীর্ঘদিনের এই সম্প্রীতি ও মৈত্রীর অতীত ভুলে গিয়ে জুলাই আন্দোলন পরবর্তী সময়ে সংসদীয় ৩০০ আসনে জামায়াত তাদের দলীয় প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেন। এই বিষয়টি বিএনপিসহ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার বিরোধী যুগপদ আন্দোলনরত কোন রাজনৈতিক দলই ভালোভাবে নেয়নি। আমি মনে করি, জামায়াতের এই নতুন নেতৃত্ব তাদের পূর্বসূরীদের দেখানো পথ থেকে সরে গেছে। জামায়াতের এই একলা চলো নীতি সমমনাদের আস্থা হারানোর কারণ হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। তারা যে নতুন জোট গঠনের চিন্তা-ভাবনা করছে তা সফল নাও হতে পারে।

    বিএনপি গণমানুষের দল। ইসলামী আদর্শ ও জাতীয়তাবাদী দর্শনের সমন্বয় হচ্ছে বিএনপি’র রাজনৈতিক স্ট্রাটেজি। আমি আশা করি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অচিরেই তাদের ভুল বুঝতে পারবে এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঐতিহ্যবাহী চারদলীয় জোটের আবহে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আবার বিএনপির কাছেই ফিরে আসবে। এটি সম্ভব হলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রাম আরো মসৃণ হবে। আমি বিশ্বাস করি, দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বিএনপি যথা সময়ে, উপযুক্ত ভূমিকা পালন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবেই।

    দৈনিক বাংলাদেশের আলো : জুলাই আন্দোলন ও জুলাই যোদ্ধাদের নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
    শহীদুজ্জামান কাঁকন : একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পাই। পরবর্তীতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে জাতি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা দেখেছে। জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন ১৭ বছরের ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারকে বিতাড়িত করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ তৈরি করে। এই আন্দোলনকে বিজয়ের শিখড়ে নিয়ে যেতে বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ছিল। জুলাই আন্দোলনের বিজয় নিয়ে কোন দলের একক কৃতিত্ব দাবি করা অযৌক্তিক। আমরা ৩৬ জুলাই আন্দোলনের সকল শহীদদের প্রতি যেমন শ্রদ্ধা-সম্মান জানাই। ৫২ ও ৭১ শহীদদের মতো তারাও জাতির শ্রেষ্ঠ সূর্যসন্তান। জুলাই যুদ্ধারা নতুন এক বাংলাদেশ গড়ার ওয়েকআপ কল দিয়েছেন। আগামীতে এই জুলাই যোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়েই বিএনপি এবং সমমানা দলগুলো দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে এবং একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। আমার নেতা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফায় এটির পূর্ণ রূপরেখাও রয়েছে জাতির সামনে।

    দৈনিক বাংলাদেশের আলো : পিআর পদ্ধতি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী?
    শহীদুজ্জামান কাঁকন : দেখুন, তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতিতে এই ধরনের পদ্ধতি শুধু আলোচনায় সীমাবদ্ধ। এর কোন কার্যকর ভিত্তি ও যৌক্তিকতা আমি দেখতে পাচ্ছি না। সবকিছুর ঊর্ধ্বে আমার দল যে সিদ্ধান্ত নেবে, আশা করি দেশবাসীও আমাদের সঙ্গেই থাকবেন। আমি মনে করি, পিআর পদ্ধতি জনমতকে উপেক্ষা করার মতো একটি বিষয়।

    দৈনিক বাংলাদেশের আলো : আপনি কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন ও জনকল্যাণে বিশেষ কোন পরিকল্পনা আছে কী?
    শহীদুজ্জামান কাঁকন : আমি কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের জনগণকে আমার একটি পরিবার বলেই মনে করি। তাদের সুখ-দুঃখকে আমার সুখ-দুঃখই মনে করি। কটিয়াদী-পাকুন্দিয়ার বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এনে আমার দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় এবং আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণের ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই তাহলে সর্বস্তরের জনসাধারণের সঙ্গে আমার সেতুবন্ধন আরো নীবিড় করে তুলব। আমি নির্বাচনী এলাকার জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখব, তারা যেন সমস্যা-সম্ভাবনায়, সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে তাদের পরিবারের একজন হিসেবে আমাকে সার্বক্ষণিক কাছে পায় সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করব। সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলো নিজের সমস্যা মনে করে সমাধানের সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাব। আমি আমার মেধা ও যোগ্যতার মাধ্যমে কটিয়াদী-পাকুন্দিয়ার উন্নয়ন ও জনকল্যাণে সারাদেশে একটা দৃষ্টান্ত রেখে যেতে চাই।

    বিআলো/ইমরান

    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    November 2025
    M T W T F S S
     12
    3456789
    10111213141516
    17181920212223
    24252627282930