বাংলাদেশে তারেক রহমানের দৃস্টিতে চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংকট : ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার
মনিরুজ্জামান মনিরঃ আধুনিক “দক্ষ বাংলাদেশের” রূপকার জনাব তারেক রহমানের দৃষ্টিতে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার মানে শুধু অবকাঠামো নয়, বরং এটি মানুষের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং গুণগত সেবার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সংকট সমাধান এই লক্ষ্য অর্জনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিটি করিডোরে প্রতিদিন জীবন রক্ষা করার সংগ্রাম চলছে। অথচ, এই জীবন রক্ষার কেন্দ্রগুলোতেই লুকিয়ে আছে এক নীরব ও মারাত্মক হুমকি- চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চরম দুর্বলতা। প্রায় ১৮ কোটি মানুষের চিকিৎসা চাহিদা মেটাতে যেখানে স্বাস্থ্যব্যবস্থা হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে চিকিৎসা বর্জ্য নিরাপদ ব্যবস্থাপনার অভাব জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর এক গুরুতর বিপর্যয় ডেকে আনছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় ২০০ টন চিকিৎসা বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার মধ্যে ৪০ টনের বেশি সংক্রামক ও ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য। দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশের কোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালেই এই বর্জ্যগুলো পৃথকভাবে সংগ্রহ, জীবাণুমুক্তকরণ এবং পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে নিষ্পত্তির কার্যকর ব্যবস্থা নেই। ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, রক্তমাখা গজ, সার্জিক্যাল মাস্ক থেকে শুরু করে প্যাথলজিক্যাল বর্জ্য পর্যন্ত সবকিছু একসঙ্গে মিশে যাচ্ছে সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে। ফলে, হাসপাতালগুলোই সংক্রমণের হটস্পটে পরিণত হচ্ছে।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সংক্রমণ বেড়ে চলেছে আশঙ্কাজনক হারে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে প্রায় ১২-১৫% রোগী হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট নতুন সংক্রমণে আক্রান্ত হন। এতে রোগীর চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, হাসপাতালের চাপ বাড়ছে এবং স্বাস্থ্যকর্মী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও আশেপাশের জনগণও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। শহরের বস্তি এলাকা এবং বর্জ্য ডাম্পিং সাইটগুলোতে শিশুরা পর্যন্ত এই বিপজ্জনক বর্জ্যের সংস্পর্শে এসে সংক্রমিত হচ্ছে।
২০০৮ সালের মেডিকেল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড প্রসেসিং রুলস থাকলেও বাস্তবায়ন প্রায় নেই বললেই চলে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মনিটরিং দুর্বল, সক্ষমতা সীমিত এবং জবাবদিহিতার অভাব প্রকট। ফলে হাসপাতালগুলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে তৃতীয় শ্রেণির কাজ হিসেবে বিবেচনা করছে এবং অপরিকল্পিতভাবে বর্জ্য নিষ্পত্তি করছে।
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল – বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের নেতৃত্বে স্বাস্থ্যখাত সংস্কারকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। বিএনপির ৩১ দফা রাষ্ট্র মেরামতের এজেন্ডায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে যেন কেউ চিকিৎসার অভাবে মারা না যায়’। সুতরাং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মত গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক কাঠামোগত দুর্বলতায় যেন কেউ সংক্রমিত না হয় সেই দিকে সর্বোচ্চ দৃষ্টি রাখতে হবে।
চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শুধু হাসপাতালের দায়িত্ব নয়, এটি জনস্বাস্থ্য ন্যায়বিচারের প্রশ্ন। তারেক রহমানের দৃষ্টিতে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার মানে শুধু অবকাঠামো নয়, বরং এটি মানুষের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং গুণগত সেবার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সংকট সমাধান এই লক্ষ্য অর্জনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
বাংলাদেশ যদি ২০৩০ সালের মধ্যে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন করতে চায়, তাহলে চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে এখনই জাতীয় অগ্রাধিকারের তালিকায় আনতে হবে। এখন আর অপেক্ষা করার সময় নেই—এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে, নতুবা এই নীরব সংকট একদিন জাতীয় দুর্যোগে রূপ নেবে।
বিআলো/ইমরান