বাংলাদেশ অ্যাচিভার্স অ্যাওয়ার্ডে সেরা গায়িকা শিল্পী আক্তার রিয়া
গাজীপুরের ছোট শহর থেকে মৈত্রী সম্মেলন মঞ্চে সুরের বিজয়
হৃদয় খান: রঙিন আলো, গানের ঝংকার আর করতালির উচ্ছ্বাসে মুখরিত ছিল রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র। সেই আবেগঘন মুহূর্তে ঘোষণা এলো— “বাংলাদেশ অ্যাচিভার্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫”-এর সেরা গায়িকা শিল্পী আক্তার রিয়া! গাজীপুরের ছোট শহর থেকে উঠে আসা এই কণ্ঠশিল্পী প্রমাণ করলেন, প্রতিভা আর অধ্যবসায় থাকলে স্বপ্ন একদিন সত্যি হয়।
পুরস্কার প্রাপ্তির মুহূর্ত
গত (শনিবার) ২ নভেম্বর ২০২৫, রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় “বাংলাদেশ অ্যাচিভার্স অ্যাওয়ার্ড”-এর বর্ণাঢ্য আয়োজন। সংগীতজগতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ‘সেরা গায়িকা’র সম্মান পান শিল্পী আক্তার রিয়া।
পুরস্কারটি তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন ও জনপ্রিয় অভিনেতা আজিজুল হাকিম।
‘বাংলাদেশ অ্যাচিভার্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’-এর এটি ছিল চতুর্থ আসর। এবারের আসরে শিল্প–সংস্কৃতি, ব্যবসা–বাণিজ্য ও সমাজের বিভিন্ন অঙ্গনে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিদের সম্মাননা জানানো হয়।
অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ও ভাবনায় ছিলেন স্বপ্নীল সজীব।
জুরি বোর্ডে ছিলেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী রোজিনা, কণ্ঠশিল্পী খুরশিদ আলম, নির্মাতা জিনাত হাকিম, কোরিওগ্রাফার ইভান শাহরিয়ার সোহাগ ও সংগীত পরিচালক আল মাসিদ রণ।
তারকাদের উপস্থিতি, নাচ-গান ও উচ্ছ্বাসে মুখর ছিল পুরো আয়োজন।

পুরস্কার জয়ের অনুভূতি গায়িকার অনুভূতি
পুরস্কার হাতে নিয়ে আবেগঘন কণ্ঠে শিল্পী আক্তার রিয়া বলেন, “পুরস্কার পাওয়ার পর আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়। মনে হয়েছে, দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে। কাজের প্রতি মনোযোগ এবং পরিশ্রমের তাগিদও অনেক বেশি বেড়ে যায়। আমি সবসময়ই ভাবি, শ্রোতাদের আরও ভালো কিছু উপহার দিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমার পূর্ণ নাম শিল্পী আক্তার রিয়া — এই নামেই আমি আজ সবাইকে গান শোনাতে চাই, অনুপ্রেরণা দিতে চাই, আর জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সংগীতের সুরে বেঁচে থাকতে চাই।”
সংগীতজীবনের পথচলা
রিয়া জানালেন, “সংগীতে কাজ করার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিল আমার পরিবার। তারা আমাকে বিশ্বাস করেছে, পাশে থেকেছে, সাহস দিয়েছে। আমার প্রথম অ্যালবামের নাম ছিল ‘প্রেমে অনেক ঝাল’। এরপর প্রকাশ হয় ‘কাঙ্গালিনী’। পরে ডুয়েট গান করি ‘আমার দিলের মাঝে’। এই গানগুলোই আমাকে শ্রোতাদের কাছে পরিচিত করে তোলে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “সংগীতজীবনে আমি অনেক গুণী শিল্পীর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। রুনা লাইলা মেম ও সাবিনা ইয়াসমিন মেম ছাড়া প্রায় সবার সঙ্গেই একই মঞ্চে গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। বিশেষ করে গানের রাজা গুরু জেমস, আসিফ আকবর, ইমরান ভাই, প্রিথম ভাই ও মনির খান— তাঁদের সঙ্গে একই মঞ্চে গান গাওয়া আমার জীবনের বড় অর্জন।”
আন্তর্জাতিক পারফরম্যান্স
রিয়া বলেন, “দেশের বাইরে আমি নেপাল, ভারত, থাইল্যান্ড, কাতার, লেবানন, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব ও দক্ষিণ কোরিয়ায় স্টেজ শো করেছি। প্রতিটি দেশের শ্রোতাদের ভালোবাসা আমার জীবনের অমূল্য সম্পদ।
ব্যক্তিজীবন ও শিক্ষা
“আমার জন্ম বগুড়ায়, আর বেড়ে উঠেছি গাজীপুরে। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি টান ছিল, যা পেয়েছি মা-বাবার কাছ থেকে। আমার শিক্ষাজীবন শুরু গাজীপুরে; সেখানেই এসএসসি ও এইচএসসি শেষ করেছি। পরে ঢাকায় চলে আসি। বর্তমানে আমি গুলশান এলাকায় বসবাস করি।”
প্রসঙ্গত, গাজীপুরের এক সাধারণ মেয়ের হাতে আজ সেরার স্বীকৃতি। শিল্পী আক্তার রিয়া প্রমাণ করেছেন, সুরের পথচলায় মেধা ও মনোযোগ থাকলে একদিন সাফল্য ধরা দেয়ই। তাঁর কণ্ঠে নতুন প্রজন্মের সংগীতপ্রেমীরা খুঁজে পান আশা, অনুপ্রেরণা আর ভালোবাসার সুর।
বিআলো/তুরাগ



