‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে অচল দেশ, আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা শিক্ষার্থীদের
নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে বুধবার সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। দিনভর চলা এ কর্মসূচিতে রাস্তাঘাট ও রেলপথ অবরোধের ফলে কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে দেশব্যাপী জনজীবন।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করা হয়।
বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানান, বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সারাদেশে পুনরায় ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করা হবে।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে আমাদের মিছিল শুরু হবে এবং দেশজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে শিক্ষার্থীরা সড়ক ও রেল অবরোধ করবেন।
রাজধানীর শাহবাগ, ফার্মগেট, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, গুলিস্তান, সায়েন্সল্যাব, মহাখালীসহ অন্তত ২৫টি পয়েন্টে শিক্ষার্থীরা প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান নেন।
বেলা ১২টার দিকে কারওয়ান বাজার সংলগ্ন রেলপথ অবরোধ করায় প্রায় এক ঘণ্টা রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকে।
এছাড়া ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, ইডেন কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পৃথকভাবে অবরোধে অংশ নেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রুয়েট ও রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীরা নগরীর প্রধান সড়ক অবরোধ করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা দেওয়ানহাটসহ বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করেন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, পাবিপ্রবি, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, হাবিপ্রবি, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও একইসঙ্গে অবরোধে অংশ নেন।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেন। এ সময়ে কোনো পরিবর্তন না আনার নির্দেশ দেন আদালত এবং পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন ৭ আগস্ট।
এরপর প্রধান বিচারপতি শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। এদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। মানুষকে দুর্ভোগে না ফেলে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করছি।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন জানান, স্থিতাবস্থার ফলে ২০১৮ সালের কোটা বাতিল পরিপত্রই কার্যকর থাকবে। এখন আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই।
১ জুলাই থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে শিক্ষার্থীরা কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, বুধবার টানা চতুর্থ দিনের মতো তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ছাত্র ধর্মঘট পালন করেন।
বিআলো/এফএইচএস