বাইডেনের সঙ্গে ড. ইউনূসের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক আজ
কাঞ্চন কুমার দে: জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক আসছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস। সম্মেলনের ফাঁকে আজ মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত তিন দশকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের কোনো রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কোনো বৈঠকের নজির নেই। এমনকি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলার ফাঁকে কোনো দেশের শীর্ষ নেতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দ্বিপক্ষীয় সাক্ষাৎ প্রায় বিরল। কিন্তু এবার ড. ইউনূসের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বৈঠক প্রায় চূড়ান্ত। সব ঠিক থাকলে নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দুপুরে (বাংলাদেশ সময় ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নেতা বৈঠকে বসবেন।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ইউনূস-বাইডেন বৈঠকের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয় বলে ঢাকা ও নিউ ইয়র্কের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে
ড. ইউনূস আগামীকাল ২৩ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে সব সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সংবর্ধনায় দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লিয়েনের সঙ্গেও বৈঠক করবেন ড. ইউনূস। এছাড়া, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করবেন।
এদিকে, গত শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ৭৯তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ সংক্রান্ত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৭৯তম জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে (ইউএনজিএ) যোগ দিতে ২৩ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হবেন। ২৭ সেপ্টেম্বর তার উচ্চ পর্যায়ের সাধারণ বিতর্কে বক্তৃতা দেওয়ার কথা রয়েছে। তার বক্তৃতায় তিনি বাংলাদেশে গত দুই মাসে গণ-অভ্যুত্থানের কথা তুলে ধরবেন এবং একটি গণমুখী, কল্যাণধর্মী ও জনস্বার্থমূলক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রতি তার অঙ্গীকার পুনরুল্লেখ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের পাশাপাশি তিনি জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের (ন্যাম) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক, কমনওয়েলথ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক, ইসলামিক কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (ওআইসি) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) বার্ষিক মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। আমরা রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি উচ্চ-পর্যায়ের সাইড ইভেন্টের আয়োজন করছি।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরো বলেন, বাংলাদেশ বহুপক্ষীয় কূটনীতি, বিশেষ করে জাতিসংঘের মাধ্যমকে তার জাতীয় স্বার্থ রক্ষার মূল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচনা করে। তিনি বলেন, জাতিসংঘের এজেন্ডায় অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রতিটি বিষয় বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সব প্রাসঙ্গিক ইভেন্টে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এবারের সাধারণ বিতর্কের প্রতিপাদ্য ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয় বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শান্তি, টেকসই উন্নয়ন ও মানবিক মর্যাদার জন্য একসঙ্গে কাজ করা।
বিআলো/তুরাগ