শর্তানুসারে প্যানেলে নিয়োগের দাবিতে বিআরইবি-তে প্রার্থীদের মানববন্ধন
জহুরা খানম আখি, সংবাদদাতা, খিলক্ষেতঃ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি রাষ্ট্রের তৃণমূল পর্যায়ে শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রধান রুপকার স্বরূপ। কিন্তু যখন এই পল্লী বিদ্যুত সমিতির গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহের নিয়োগে দুর্নীতি, কর্মচারীদের নানা ভাবে শোষণ ও মালামাল ক্রয়ে অনিয়ম দেখা দেয় তখন রাষ্ট্রযন্ত্র বিকল হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের গুটি কয়েক কর্মকর্তার হাতে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জিম্মি। দেশের গুরুত্বপূর্ণ দৈনিক পত্রিকা ও প্রিন্ট মিডিয়াতে তাদের অপকর্মের কথা বারবার প্রকাশিত হওয়ার পরেও অদৃশ্য কোনো কারনে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়না। তারা বছরের পর বছর একই অপরাধে ছাড় পেয়ে দূর্নীতির এক সিন্ডিকেট তৈরি করে ফেলেছে।
এই সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমার্ধে দরপত্রে ব্যপক দূর্নীতির অভিযোগ প্রমাণসহ উপস্থাপন করে একটি জননন্দিত বেসরকারি টিভি চ্যানেল। এছাড়াও চুক্তিভিত্তিক লাইন ক্রু পদে নিয়মিত করনে, চাকুরির নিয়োগের গোপন প্যনেল লিস্টের মাধ্যমে নিজেদের পছন্দের লোক নিয়োগ ও বিভিন্ন পদে বদলীতে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত মানবসম্পদ বিভাগের এই সব কর্মকর্তা। সর্বশেষ ২০২৩ সালে সহকারী জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার পদে আমরা প্রিলি, রিটেন ও ভাইভা দেওয়া ২০৭ জন অপেক্ষমাণ প্রার্থীগন হাজারো মেধাবী শিক্ষার্থীর মাঝে প্রতিযোগিতা করে এই পর্যন্ত এসেছে।
২০২৩ সালের ঐ সার্কুলার ও নিয়োগ বিধিতে উল্লেখ ছিল যে, মোট শূন্যপদের বিপরীতে প্যানেল থেকে নিয়োগ দেওয়া হবে। বর্তমানে দেশের ৮০ টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে বিপুল পরিমাণ সহকারী জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার (অঔঊ) পদ ফাঁকা আছে যা ৮০ টি সমিতির লোকবলের চাহিদা পত্রের মাধ্যমে জানা যায়, লোকবল সংকটে গ্রাহক সেবা ব্যাপকভাবে ব্যহত হচ্ছে কিন্তু তারপরও ২০৭ জন অপেক্ষমাণ প্রার্থীকে নিয়োগ প্রদান না করে নতুন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নানান অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন দূর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তা।
যেমন-মোঃ আসাফউদ্দৌলা (নির্বাহী পরিচালক), মোঃ মাহফুজুল হক (পরিচালক,প্রশাসন), মোঃ ইকরামুল হাসান (উপ-পরিচালক)। বিগত ২০১৯ ও ২০২১ সালের সার্কুলার এ মোট শূন্যপদের বিপরীতে প্যানেল থেকে একাধিকবার নিয়োগ দেওয়া হলেও বর্তমানে ২০২৩ সালের সার্কুলারে প্যানেল থেকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। যেখানে বিগত ২০১৯ সালে সার্কুলারে উল্লেখিত ১২৪ টি পদের বিপরীতে পর্যায়ক্রমে সর্বমোট নিয়োগ দেয়া হয় ৩৪৬ জনকে এবং ২০২১ সালে ৮৩ টি পদের বিপরীতে ২৪০ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। অথচ ২০২৩ সালের সার্কুলারে শূন্য পদের বিপরীতে প্যানেল থেকে নিয়োগ দেবার কথা উল্লেখ থাকা সত্যেও নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না।
অপেক্ষমাণ প্রার্থীদের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান কে এই ব্যাপারে অবহিত করা হয় এবং কয়েকবার মানবসম্পদ বিভাগে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শুণ্য পদের বিপরীতে নিয়োগের জন্য বার বার অনুরোধ করা হলে তারা গত ১৭ এপ্রিল, ২০২৩ সালে জারিকৃত জনপ্রশাসন মন্ত্রনয়ালয়ের একটি প্রজ্ঞাপন দেখায় যেটা ছিলো জাতীয় বেতন গ্রেডের ১৩-২০তম নিয়োগ বিধির ক্ষেত্রে। অথচ সহকারী জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার পদের গ্রেড জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী ১০ম এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে ১২ তম যার কারনে কোনো দিক থেকেই উক্ত প্রজ্ঞাপনের আওতাভুক্ত নয়। এমনকি সহকারী জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার পদের সার্কুলার প্রকাশিত হয় ১৪ ফেব্রয়ারি, ২০২৩ তারিখে কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের প্রজ্ঞাপন জারি হয় ১৭ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে। যা ঐ সার্কুলার প্রকাশের পরে প্রজ্ঞাপন জারি হয়। সুতরাং প্যানেলে নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনরত প্রার্থীগণ উক্ত প্রজ্ঞাপনের আওতায় পড়েনা। পরবর্তীতে তারা স্বীকার করেন যে অপেক্ষামাণ তালিকা থেকে নিয়োগ দিতে এই প্রজ্ঞাপন কোনো বাধা নয়।
এরপর আবারো কয়েক ধাপে যোগাযোগ করা হলেও তাদের কাছে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি বলে মন্তব্য করেন আন্দোলনরত প্রার্থীগণ। বরং তাদের প্রতিনিধি দলের সদস্যদের অফিসে আলোচনার জন্য ডেকে নিয়ে সদস্যদের মোবাইল ফোন বন্ধ করতে বলে এবং তা করার পর বিভিন্ন ভুল তথ্য দিয়ে হয়রানি, ভয় দেখানো, নিয়োগ প্রদানে ইচ্ছে করে সময়ক্ষেপন করে বিষয় ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে।
এমতাবস্থায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত শর্তানুসারে প্যানেল থেকে নিয়োগের দাবিতে ভাইভা দেয়া প্রার্থীগণ বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি), খিলক্ষেত, ঢাকা অফিসের সামনে গত বুধবার এবং বৃহস্পতিবার মানববন্ধন করেছেন।
বিআলো/তুরাগ