• যোগাযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা: প্রাসঙ্গিকতা ও গুরুত্ব 

     dailybangla 
    18th May 2025 10:55 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

    বাংলাদেশ এক অভূতপূর্ব ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের জন্য সৌভাগ্যের বিষয় হলো ছাত্র-জনতার সমর্থনে বর্তমান প্রধান বিচারপতির মতো একজন মেধাবী, জ্ঞানী, প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্বকে আমরা বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে পেয়েছি। সঙ্গত কারণে একটি স্বাধীন, শক্তিশালী বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষের মনে আশাবাদের সৃষ্টি হয়েছে।

    একই সঙ্গে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর একটি ঐতিহাসিক নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটি গঠিত হয়েছে। ওই নির্বাচিত নির্বাহী কমিটি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির অগ্রাধিকার ভিত্তিক সংস্কার বিষয়গুলো বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনে প্রতিবেদন আকারে দাখিল করে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিচার বিভাগে যে মহাপ্রলয় ঘটেছে এবং বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে তা দ্রুত দূর করে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা এবং বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে একটি স্বাধীন, শক্তিশালী, আধুনিক, দক্ষ ও প্রগতিশীল বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক।

    বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪-এ প্রদত্ত অভিভাষণে যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দৃষ্টিপাত করেছেন সেসব বিষয়গুলোকে দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণের নিমিত্তে আমরা প্রধান বিচারপতির সহযোদ্ধা হিসেবে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত নির্বাহী কমিটি এবং আমাদের সহযোগী জেলা আইনজীবী সমিতি, কক্সবাজারের যৌথ উদ্যোগে বুধবার (১৪ মে) ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা : প্রাসঙ্গিকতা ও গুরুত্ব’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

    আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনসহ অন্যান্য কমিশন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের অধ্যাপক আলী রিয়াজ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ছাড়া প্রকৃত গণতন্ত্র সম্ভব নয় মর্মে মন্তব্য করেন। প্রকৃতপক্ষে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা ছাড়া বিচার বিভাগে প্রকৃত স্বাধীনতা সম্ভব নয়। অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গৃহীত রাষ্ট্র সংস্কারকে স্থায়ী ও অর্থবহ করে তুলতে স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার অপরিহার্যতা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ সম্প্রতি এক বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন, “কোনো সেক্টরেই সংস্কার কার্যক্রম স্থায়িত্ব পাবে না, যদি বিচার বিভাগের সংস্কার না ঘটে।” সত্যিকার অর্থে, বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণের স্বার্থে মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন একান্ত আবশ্যক। এজন্যই পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। আজকে আমরা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার তাৎপর্য, বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার বর্তমান বাস্তবতা এবং এর বাস্তবায়নে করণীয় নিয়ে আলোচনা করব।

    সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় কর্তৃক তার প্রাক্কলন চূড়ান্ত করতঃ অর্থ বিভাগের নিকট প্রেরণ করবে এবং অর্থ বিভাগ তদনুসারে তহবিল বরাদ্দ প্রদান করবে। বিচার বিভাগের সমুদয় কার্যক্রমকে একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামোতে এনে এটিকে দু’ভাগ করতে হবে। সাচিবিক, নীতি নির্ধারণী ও মৌলিক প্রকৃতির কাজসমূহ সচিব, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের মাধ্যমে এবং অপরাপর কার্যক্রমসমূহ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে করতে হবে।

    বিচার বিভাগের সব ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নের জন্য একটি Strategic Plan তৈরি করা অত্যাবশ্যক। ওই Strategic Plan-এ বিচার বিভাগের বিষয়ভিত্তিক স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাসমূহ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাসমূহের কোনটি কি উপায়ে বা কি পদ্ধতিতে এবং কোন পরিকল্পনা কোন বিভাগ/দপ্তরের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত হবে তার ক্যাটাগরি ভিত্তিক কর্মকৌশল উল্লেখ থাকবে।

    প্রস্তাবিত পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অনুবিভাগে এরূপ একটি অধিশাখা থাকবে যেটি স্বতন্ত্রভাবে বিচার বিভাগের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের ডিপিপি/টিপিপি তৈরি করবে এবং এতদসংক্রান্ত বিষয়ে তারা পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করবে। এ অধিশাখাটি শুধু দেশীয় প্রকল্প নয়, বিদেশি সহায়তাপুষ্ট বা দাতাগোষ্ঠীর অর্থায়নে বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্প গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বা দাতাগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবে।

    বাংলাদেশের বিচার বিভাগের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ভারতীয় দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা যেতে পারে। সমগ্র ভারতে বিচার বিভাগের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য পৃথক একটি ফিন্যান্স কমিশন গঠিত হয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে ১৪ তম ফিন্যান্স কমিশন এ বিষয়ে কাজ করেছে। বর্তমানে ১৫ তম ফিন্যান্স কমিশনের কাজ চলছে। ১৪ তম ফিন্যান্স কমিশন বিচার বিভাগের স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি অবকাঠামো এবং অন্যান্য উন্নয়নে বিস্তারিত সুপারিশমালা (Proposal of Department of Justice to 14th Finance Commission) পেশ করেছে।

    ওই সুপারিশমালা অনুসারে সমগ্র ভারতে বিচার বিভাগের যাবতীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কমিশনের ওই সুপারিশমালা বাস্তবায়নে রাজ্য সরকারগুলো যাতে অব্যাহতভাবে বাজেট বরাদ্দ রাখে তার জন্য রাজ্য সরকারগুলোকেও নির্দেশনা দিয়েছে। ভারতের মতো আমাদের পরিকল্পনা কমিশন বিচার বিভাগের যাবতীয় অবকাঠামো সমস্যার একটি ম্যাপিং করে প্রয়োজনীয় সুপারিশমালা পেশ করতে পারে। ওই সুপারিশ অনুসারে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আলোকে অবকাঠামোগত সুবিধা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায়।

    আমাদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা একটি মৌলিক স্তম্ভ, যা সুশাসন, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের নিশ্চয়তার অন্যতম প্রধান বাহক। একটি কার্যকর ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ ছাড়া কোনো রাষ্ট্রে প্রকৃত ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। বিচার বিভাগ পৃথকীকরণসহ বাংলাদেশের বিচার বিভাগের বড় বড় অর্জনসমূহ আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট থেকে পেয়েছি। তাই আমরা আশাবাদী পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগের এখতিয়ার সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করে বিচার বিভাগে বিরাজমান দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার অবসান হবে।

    লেখক: নিশাত সুলতানা

    অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, কক্সবাজার
    ও সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন

    বিআলো/তুরাগ

    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    August 2025
    M T W T F S S
     123
    45678910
    11121314151617
    18192021222324
    25262728293031