বিদ্যালয়ের জায়গা দখলমুক্ত না হওয়ায় শিক্ষানবিশ ছাত্রীদের নিরাপত্তা হুমকিতে
মু. জিল্লুর রহমান জুয়েল: পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার বকুলবাড়িয়া ইউনিয়নের গুয়াবাড়িয়া এ বি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের রেকর্ডভুক্ত জমি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ দখলে থাকায় বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে শিক্ষানবিশ ছাত্রীদের নিরাপত্তা চরম ঝুঁকিতে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রেকর্ডভুক্ত জমির ওপর অদৃশ্য ক্ষমতার বলে অবৈধভাবে পান–বিড়ি ও সিগারেটের দোকান বসানো হয়েছে। এসব দোকানকে কেন্দ্র করে বখাটে যুবকদের আড্ডাস্থলে পরিণত হওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষানবিশ পরিবেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। প্রায়ই ছাত্রীদের নানা ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হতে হলেও আত্মসম্মান ও সামাজিক লজ্জার কারণে তারা প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারছে না বলে অভিভাবকদের অভিযোগ।
বিদ্যালয় সূত্রে আরও জানা যায়, প্রধান শিক্ষক মো. মোশাররফ হোসেন ছাত্রীদের নিরাপত্তা ও সুশিক্ষার স্বার্থে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের উদ্যোগ নিলে অবৈধ দখলদার পান–বিড়ির দোকানদারদের সরে যেতে অনুরোধ করেন। এতে উল্টো তিনি নানা ধরনের হয়রানির শিকার হন।
বিষয়টির স্থায়ী সমাধানের জন্য চলতি বছরের ১৮ জুলাই উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে বকুলবাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা মুহাম্মদ ফজলুল ওয়াহাব মিয়া তদন্ত শেষে ৩১ আগস্ট ২০২৫ ইং তারিখে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গুয়াবাড়িয়া এ বি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের রেকর্ডভুক্ত ৪৪৮ নম্বর খতিয়ানের ২৫৫৫ নম্বর দাগের জমিতে জোরপূর্বক অবৈধভাবে দুটি দোকানঘর স্থাপন করে ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে—
মো. শাহাবুদ্দিন মোল্লার ১৫×১৩ ফুটের একটি দোকানঘর এবং মো. আবু সাইদ বক্কার সরদারের ১৩×১০ ফুটের একটি দোকানঘর রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিদ্যালয়ের সীমানার ভেতরে এসব দোকানঘর থাকায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা যাচ্ছে না। পাকা রাস্তার পাশে অবস্থিত বালিকা বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে দ্রুত দোকানঘর দুটি উচ্ছেদ করে প্রাচীর নির্মাণ একান্ত জরুরি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
পরবর্তীতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তদন্ত প্রতিবেদনটি পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠান। ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ইং তারিখে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের (রাজস্ব শাখা) রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর এএসএম নুরুল আখতার নিলয় ১৫ দিনের মধ্যে বিদ্যালয়ের দখলকৃত জায়গা উচ্ছেদ বা দখলমুক্ত করার জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)–কে নির্দেশ প্রদান করেন।
তবে নির্দেশনার দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে স্থানীয় জনগণ, অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা জানান, তারা আশা করছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং বর্তমান জেলা প্রশাসক বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে দ্রুত অবৈধ দখল উচ্ছেদসহ বিদ্যালয়ের নিরাপদ শিক্ষানবিশ পরিবেশ নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
বিআলো/এফএইচএস



