• যোগাযোগ
  • সংবাদ দিন
  • ই-পেপার
    • ঢাকা, বাংলাদেশ

    বিমান বাংলাদেশ: আকাশ জয়ের স্বপ্নে বিভোর 

     dailybangla 
    20th Aug 2025 3:52 am  |  অনলাইন সংস্করণ

    ১৯৭২ সালে মাত্র ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা আয় দিয়ে যাত্রা
    গত ১৮ বছরে বিমানের পুঞ্জীভূত মোট মুনাফা হয়েছে ৫৮৯ কোটি টাকা, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৯৩৭ কোটি টাকা অনিরীক্ষিত মুনাফা অর্জন
    আর্থিক সাফল্যের জন্য যাত্রী ও গ্রাহকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ড. মো. সাফিকুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও

    রতন বালো: ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ ৫৩ বছরের যাত্রায় বিমান সবমিলিয়ে ২৬ বছর লাভের মুখ দেখেছে। ২০০৭ সালে করপোরেশন থেকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরের পর গত ১৮ বছরে বিমানের পুঞ্জীভূত মোট মুনাফা হয়েছে ৫৮৯ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সটি বলছে, ১৯৭২ সালে মাত্র ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা আয় দিয়ে যাত্রা করা বিমান যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের সীমিত অবকাঠামো ও সম্পদের মধ্যে ধীরে ধীরে আধুনিক ও প্রতিযোগিতামূলক এয়ারলাইন্সে পরিণত হয়েছে।

    অতীতে রাষ্ট্রায়ত্ত লোকসানি প্রতিষ্ঠান হিসেবে খ্যাত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড অবশেষে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৯৩৭ কোটি টাকা অনিরীক্ষিত মুনাফা অর্জনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠার ৫৩ বছরের ইতিহাসে এক অনন্য রেকর্ড গড়েছে। এই সাফল্যের জন্য বিমানের সম্মানিত যাত্রী ও গ্রাহকদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ।

    বিমান মনে করে যাত্রী ও গ্রাহকসেবার উন্নত সেবার পাশাপাশি আস্থা ও সমর্থন এই রেকর্ড মুনাফা অর্জনে সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। এর বাইরে দক্ষ পরিচালনা পর্ষদ তাদের দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন। এই যৌথ উদ্যোগ বিমান বাংলাদেশকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলেছে। উল্লেখযোগ্য যে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আগে বিমানের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জিত হয় ২০২১-২২ অর্থবছরে, যার পরিমাণ ছিল ৪৪০ কোটি টাকা।

    ২০১৫ সালে ২৭১ কোটি টাকা লাভ করে প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে দাঁড়ানোর সূচনা করে। এ লাভের কারণে দেশের কর্পোরেট বিজনেস লেভেলে সেরা মডেল হিসেবে সংস্থাটি আবির্ভূত হয়ে নতুন সম্ভাবনার দিক উন্মোচন করে। এভাবেই লোকসানি প্রতিষ্ঠািনটি এক সময় ঘুরে দাঁড়ায়। যার উপর ভর করে নতুন বছরে আরো সফলতার প্রত্যয়ে আকাশ জয়ের স্বপ্ন দেখছে বিমান বাংলাদেশ।

    সদ্য স্বাধীন আবার যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে অনেক স্বপ্ন নিয়ে ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি বিমানের যাত্রা শুরু। এই সংস্থাটি পরবর্তী নানা প্রতিকূলতার কারণে কখনো লাভের মুখ দেখার সুযোগ হয়নি। নানাবিধ প্রতিকূলতায় দীর্ঘ লোকসানের ঝাপি এখন অনেকটাই পূরণ হতে চলেছে। নতুন ব্যবস্থাপনার ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব গুণে এখন টেকসই লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে বিমান। যাত্রী সন্তুষ্টি নিশ্চিত করনে বিশ্বখ্যাত বোয়িং কোম্পানির নতুন প্রজন্মের নিজস্ব ৬টি নতুন উড়োজাহাজ বহরে যোগ করে বিমান এখন আলোচনার শীর্ষে।

    গত ২০১৫সালে রেকর্ড সংখ্যক যাত্রী পরিবহন করেছে বিমান।
    বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগ (উপসচিব) এর মহাব্যবস্থাপক এ, বি, এম, রওশন কবীর এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৯৩৭ কোটি টাকা অনিরীক্ষিত মুনাফা অর্জনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠার ৫৩ বছরের ইতিহাসে এক অনন্য রেকর্ড গড়েছে।

    এই সাফল্যের জন্য বিমানের সম্মানিত যাত্রী ও গ্রাহকদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানানো হচ্ছে, যাদের আস্থা ও সমর্থন এই রেকর্ড মুনাফা অর্জনে সবচেয়ে বড় শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করেছে। এই সাফল্য এসেছে দক্ষ সম্পদ ব্যবস্থাপনা, কার্যকর কৌশল গ্রহণ এবং যাত্রীসেবার ধারাবাহিক উন্নয়নের মাধ্যমে। সদ্য বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আগে বিমানের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মুনাফার মুখ দেখে ২০২১-২২অর্থবছরে, যার পরিমাণ ছিল ৪৪০ কোটি টাকা।

    লোকসানি থেকে মুনাফায় উত্তরণ: ১৯৭২ সালে মাত্র ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা আয় দিয়ে যাত্রা শুরু করা বিমান, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের সীমিত অবকাঠামো ও সম্পদের মধ্যে থেকে ধীরে ধীরে আজকের আধুনিক ও প্রতিযোগিতামূলক এয়ারলাইন্সে পরিণত হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিমান ১১,৬৩১.৩৭ কোটি টাকা আয় করেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে, বিমান প্রথম বারের মতো ১০ হাজার কোটির বেশি আয়কারী কোম্পানিতে পরিণত হয়। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ ৫৩ বছরের যাত্রায় বিমান মোট ২৬টি বছরে লাভ করেছে। ২০০৭ সালে করপোরেশন থেকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরের পর গত ১৮ বছরে বিমানের পুঞ্জীভূত মোট মুনাফা হয়েছে ৫৮৯ কোটি টাকা যা এই সংস্থার স্থিতিশীলতা ও দীর্ঘমেয়াদি সফলতার প্রমাণ।

    এদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিমানের বহরে ২১টি উড়োজাহাজ ছিল, যার মধ্যে বর্তমানে ১৯টি নিজস্ব মালিকানাধীন উড়োজাহাজ রয়েছে। যার মধ্যে অত্যাধুনিক ও জ্বালানি-সাশ্রয়ী চারটি বোয়িং ৭৮৭-৮ এবং দুটিবোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার। বিমানের আরও একটি বড় শক্তি হলো এর নিজস্ব বহর রক্ষণাবেক্ষণে সক্ষমতা, লাইন মেইনটেন্যান্স থেকে শুরু করে বড় ধরনের চেক পর্যন্ত সবই দেশেই সম্পন্ন করতে পারে, যা ব্যয় সাশ্রয়ি, দ্রুত সেবা প্রদান এবংআন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

    ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিমানের কার্যক্রমে যাত্রী পরিবহন হয়েছে ৩.৪ মিলিয়ন (১০ লাখ =১ মিলিয়ন হলে ৩.৪ গুণ। অর্থাৎ এটি ৩৪ লাখ মানুষের সমান)। কার্গো পরিবহন ৪৩,৯১৮ টন, এবং কেবিন ফ্যাক্টর শতকরা ৮২ ভাগ-এ উন্নীত হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি। এছাড়াও চলতি সালের জানুয়ারি মাসে বিমানের ইতিহাসে সর্বোচ্চ টিকিট বিক্রির রেকর্ড অর্জিত হয়েছে, যা বাজারে বিমানের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা ও যাত্রীদের আস্থার প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে। দ্রুত লাগেজ সরবরাহ, উন্নত ইন-ফ্লাইট সেবা এবং বিমানবন্দর প্রক্রিয়ার আধুনিকায়ন যাত্রী সন্তুষ্টি দিকে এক নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে।

    বিমান কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বিমান আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মান কঠোরভাবে অনুসরণ করে ধারাবাহিকভাবে প্রশংসনীয় সেফটি রেকর্ড বজায় রাখার উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছে। জাতীয় সংবাদ মাধ্যম ও এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিমানের বহর আধুনিকায়ন, লাভজনক আন্তর্জাতিক রুট সম্প্রসারণ এবং উন্নত গ্রাহকসেবা প্রদানের প্রশংসা করেছেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নতুন ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন, দক্ষ অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ, কার্যকর সম্পদ বণ্টন এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ যা চলতি বছরের রেকর্ড মুনাফায় বড় ভূমিকা রেখেছে। তারপরেও একটু হতাশা রয়েই গেছে বিশেষ করে মুনাফার এই সময়ে পুঞ্জীভূত মুনাফা অনেকটাই কম।

    পুঞ্জীভূত মুনাফার বিষয়ে যা বলছে কর্তৃপক্ষ: বিমানের ৯৩৭ কোটি টাকা মুনাফার সময়ে হতাশ করেছে পুঞ্জীভূত মুনাফার হার। কেন এমন বৈসাদৃশ্য সে বিষয়ে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. মো. সাফিকুর রহমান এর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, পুঞ্জীভূত মুনাফা কমের কারণ? এই প্রশ্নের উত্তরে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, যে ২৬ বার বিমান লাভ করতে পেরেছে, সেখান থেকে লোকসান বাদ দিয়ে পুঞ্জীভূত মুনাফার হিসাব কষা হয়েছে। সবশেষ অর্থবছরের মুনাফার হিসাবও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

    তিনি জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিমানের বহরে ২১টি উড়োজাহাজ ছিল, যার মধ্যে ১৯টি বর্তমানে নিজস্ব মালিকানাধীন। এর মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক ও জ্বালানি-সাশ্রয়ী চারটি বোয়িং ৭৮৭-৮ এবং দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার। এবারের আর্থিক সাফল্যের জন্য যাত্রী ও গ্রাহকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিমান বলছে, তাদের আস্থা ও সমর্থনই এ রেকর্ড মুনাফা অর্জনে সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। এই সাফল্য এসেছে দক্ষ সম্পদ ব্যবস্থাপনা, কার্যকর কৌশল গ্রহণ এবং যাত্রীসেবার ধারাবাহিক উন্নয়নের ফল হিসেবে। এখানেই থেমে থাকতে চাইছে না বিমান। তারা আগামীর পথরেখা নিশ্চিত করেছে। যেখানে নতুন নতুন লাভজনক দেশের বিমান বন্দর তথা গন্তব্যের দিকে পাখির চোখ রাখছে। তাদের ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় রয়েছে নতুন জনপ্রিয় গন্তব্যে রুট সম্প্রসারণ, যাত্রীসেবা ও পরিচালনায় ডিজিটাল রূপান্তর এবং কার্গো সেবা শক্তিশালীকরণ। যার মাধ্যমে চলমান মুনাফার হার বাড়িয়ে নেওয়া যায়। একই সঙ্গে বিমানের লক্ষ্য জাতীয় গৌরবকে ধারণ করে বিশ্বমানের সেবা, নির্ভরযোগ্যতা এবং সম্মানিত যাত্রীগণের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ। এর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার একটি শীর্ষস্থানীয় এয়ারলাইন্সে পরিণত হওয়া। সেই সঙ্গে বিশ্বের সেরা এয়ারলাইন্সে নিজের নাম নথিভুক্ত করা। দক্ষ পরিচালনা পর্ষদ থাকলে এই লক্ষ্য অর্জন কেবলই সময়ের ব্যাপার।

    বিআলো/তুরাগ

    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    August 2025
    M T W T F S S
     123
    45678910
    11121314151617
    18192021222324
    25262728293031