বিশ্বব্যাংক সহায়িত হিট প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের
ইবি প্রতিনিধি: দেশের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাস্তবায়িত ৪ হাজার কোটি টাকার হায়ার এডুকেশন অ্যাকসেলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (হিট) প্রকল্পে স্বজনপ্রীতি, রাজনৈতিক প্রভাব ও অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষকবৃন্দ।
রবিবার (১০ আগস্ট) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন তারা। উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. মোহা. মিজানুর রহমান, অধ্যাপক ড. মো. গোলাম মাওলা, অধ্যাপক ড. গাজী মো. আরিফুজ্জামান খান, অধ্যাপক ড. এ.টি.এম. মিজানুর রহমান, অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক ড. মো. জাহিদুল ইসলাম ও ড. মুহা. শরিফুল ইসলাম।
শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, হিট প্রকল্পে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও উচ্চ সাইটেশনধারী গবেষকদের বাদ দিয়ে “লো-প্রোফাইল” ও কম সাইটেশনধারী শিক্ষকদের প্রজেক্ট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৪০% নির্বাচিত গবেষকের মোট সাইটেশন সংখ্যা ১০০-এর নিচে এবং ৫০০ সাইটেশনের কম এমন গবেষকের হারও প্রায় ৪০%। অনেক ক্ষেত্রে পিএইচডি ডিগ্রি নেই বা আন্তর্জাতিক মানের প্রকাশনা নেই এমন ব্যক্তিরাও অনুদান পেয়েছেন।
তারা দাবি করেন, প্রজেক্ট নির্বাচনে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষকদের বিকল্প পদ্ধতিতে প্রজেক্ট রিভিউয়ার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং তারাই প্রকল্প অনুমোদন নিশ্চিত করেছেন। এমনকি ভিন্ন বিষয়ের শিক্ষক দিয়ে অন্য বিষয়ের প্রজেক্ট মূল্যায়ন করানো হয়েছে, যা নিয়মবহির্ভূত।
অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত গবেষকদের বাদ দিয়ে কম গবেষণা ও সাইটেশনধারী গবেষক নির্বাচন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে প্রকৃত গবেষকরা বঞ্চিত হয়েছেন।
অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, যাদের পিএইচডি নেই বা উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক প্রকাশনা নেই, তারাও অনুদান পেয়েছেন। অথচ যোগ্য প্রার্থীরা বাদ পড়েছেন।
শিক্ষকদের অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে, রিভিউ প্রক্রিয়ার গুণগত মানের অভাব ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব, ইউজিসির ব্লাইন্ড পিয়ার রিভিউ প্রক্রিয়ার দাবি মিথ্যা, নিয়মবহির্ভূত প্রেজেন্টেশন মূল্যায়ন, বিভাগ ও অঞ্চলভিত্তিক বৈষম্য, শিল্প সহযোগী ছাড়াই ইন্ডাস্ট্রি প্রজেক্ট অনুমোদন, প্রকল্প জমাদানের সময় বর্ধিত করে অনৈতিক সুযোগ প্রদান, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার প্রভাব, চূড়ান্ত বাছাই বোর্ডে তাচ্ছিল্যমূলক আচরণ, অর্থের অপচয়।
শিক্ষকদের তিন দফা দাবি, ১. অনিয়মের অভিযোগে বিদ্যমান সব প্রজেক্ট বাতিল, ২. ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান, প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক আসাদুজ্জামান ও পরামর্শক অধ্যাপক মোজাহার আলীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, ৩. নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে নতুন করে রিভিউ ও প্রকল্প নির্বাচন।
হিট প্রকল্পের পরিচালক নিয়োগে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোলায়মান। ২০২৪ সালের ১৪ মার্চ ইউজিসি তাকে নিয়োগ দেয়, কিন্তু রাজনৈতিক মতবিরোধের কারণে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর মৌখিক নির্দেশে একদিনের মধ্যেই তার নিয়োগ বাতিল করা হয়।
বিআলো/এফএইচএস