বিশ্বের নাগরিক উদ্যোগে অবরোধ ভাঙার চেষ্টায় সমুদ্রে অর্ধশতাধিক নৌযান
অনলাইন ডেস্ক: গাজায় অবৈধ নৌ-অবরোধ ভাঙতে সমুদ্রে যাত্রা করেছে অর্ধশতাধিক নৌযান। “গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা” বা “গ্লোবাল ফ্রিডম ফ্লোটিলা” নামে পরিচিত এই উদ্যোগকে অনেকে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নাগরিক-নেতৃত্বাধীন নৌ-অভিযান হিসেবে উল্লেখ করছেন। তবে এর ভবিষ্যৎ সাফল্য নির্ভর করছে দখলদার ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়ার ওপর, কারণ ইতোমধ্যেই ইসরায়েলি বাহিনী ৩৯টি নৌকা আটক করেছে।
২০২৫ সালের মাঝামাঝি আন্তর্জাতিক নাগরিক সংগঠন ও মানবাধিকারকর্মীদের উদ্যোগে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা গঠিত হয়। জুলাই মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করা এই বহরে যোগ দেয় ৪৪টি দেশের প্রায় ৫০০ অংশগ্রহণকারী। মোট ৪০টিরও বেশি নৌযান ছিল ফ্লোটিলায়, এর মধ্যে একটি ইতালীয় কার্গোতে বহন করা হচ্ছিল প্রায় ৪৫ টন ত্রাণসামগ্রী—খাদ্য, ওষুধ ও জরুরি প্রয়োজনীয় দ্রব্য।
“সুমুদ” শব্দের অর্থ হলো ‘অটলতা’ বা ‘অবিচল সহনশীলতা’। ফিলিস্তিনি সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে বেছে নেওয়া এই নামের মাধ্যমেই ফ্লোটিলা অংশগ্রহণকারীরা জানাতে চেয়েছেন—অবরোধ ও দমননীতির মধ্যেও মানবিক সহায়তা গাজার মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
ফ্লোটিলার আয়োজক সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন, গ্লোবাল মুভমেন্ট টু গাজা, মাগরেব সুমুদ ফ্লোটিলা ও সুমুদ নুসান্তারা। আয়োজকেরা জানিয়েছেন, এ উদ্যোগ সম্পূর্ণ অহিংস ও নাগরিক-নেতৃত্বাধীন, যার লক্ষ্য মানবিক বার্তা পৌঁছে দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের আলোচনায় গাজা অবরোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।
অন্যদিকে ইসরায়েলি সরকার একে উস্কানিমূলক এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছে। তারা দাবি করছে, আন্তর্জাতিক জলসীমা অতিক্রম করে গাজায় প্রবেশের যে কোনো চেষ্টা প্রতিরোধ করার আইনি অধিকার ইসরায়েলের আছে। ফলে ফ্লোটিলা আটকে দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা কেবল একটি মানবিক সহায়তা কার্যক্রম নয়; এটি সমকালীন আন্তর্জাতিক রাজনীতির জন্যও এক প্রতীকী পরীক্ষা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের নাগরিকরা এই অভিযানের মাধ্যমে যে বার্তা দিতে চাইছে তা হলো—মানবাধিকার ও খাদ্য-চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদাকে রাজনৈতিক অবরোধ দিয়ে আটকানো উচিত নয়।
বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের উদ্যোগ ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক নীতির গতিপথে প্রভাব ফেলতে পারে। একদিকে মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইন রক্ষার প্রশ্ন, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও দখলদার নীতির সংঘর্ষ—এই দুই মেরুতেই এখন আবর্তিত হচ্ছে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার বিতর্ক।
বিআলো/এফএইচএস