বেতন সুরক্ষাসহ বদলির ব্যবস্থা চালুর দাবি মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক পরিষদের
নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি ৪২টি বিদ্যালয়ের মতো বাকি বিদ্যালয়গুলোকেও বেতন সুরক্ষা দেওয়া, চাকরিকালের ভিত্তিতে সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেলের ব্যবস্থাসহ বদলির ব্যবস্থা চালুর দাবি জানিয়েছে সরকারিকৃত মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক পরিষদ। আজ শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিতকরণ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ দাবি জানান পরিষদের সভাপতি ছিদ্দিক আহম্মেদ। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থার মানোন্নয়ন এবং শিক্ষক সমাজের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালে সরকারিকৃত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা প্রণীত হয়েছে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য-এখনো এ বিধিমালায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ অসংগতি রয়ে গেছে, যা শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই স্মারক ও তারিখে বিদ্যালয় সরকারিকরণ এবং একই বিধিতে এডহক নিয়োগ পাওয়া সত্ত্বেও বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩৬৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়েছে যাদের অধিকাংশেরই এডহক নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এডহক নিয়োগ পাওয়া এসব বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪২টি সরকারিকৃত স্কুল বেতন সুরক্ষা সুবিধা পেয়েছে এবং পাঁচটি স্কুল অ্যান্ড কলেজকে বেতন সুরক্ষা সুবিধা প্রদানের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় ও সিজিএ অফিস থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো এর বাইরে রয়েছে যা চরমভাবে বৈষম্যের সৃষ্টি করেছে। পরিষদের সভাপতি ছিদ্দিক আহম্মেদ বলেন, আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হলে শিক্ষক সমাজের ন্যায্য অধিকার ক্ষুণ্ন হবে এবং এটি শিক্ষা ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এজন্য সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান সরকারিকৃত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (টেকনিক্যাল) পদটি জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করে জনশক্তিকে জন সম্পদে রূপান্তরিত করা এবং ৪২টি বিদ্যালয়ের মতো বাকি বিদ্যালয় গুলোকেও বেতন সুরক্ষা প্রদান, কার্যকর চাকরিকালের ভিত্তিতে সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেলের ব্যবস্থাসহ বদলির ব্যবস্থা করে শিক্ষক সমাজকে বৈষম্য থেকে মুক্তি দিন এবং শিক্ষকদের ন্যায্য মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সরকারি কিংবা বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলি ব্যবস্থা চালু থাকলেও জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আত্তীকরণ বিধিমালা-২০২৪ এর ১৩নং ধারা মোতাবেক আমাদের এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে যা শিক্ষক সমাজের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করছে এবং ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। সহকারী শিক্ষক (টেকনিক্যাল) পদটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত না থাকায় ভবিষ্যতে কারিগরি শিক্ষা প্রসারে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা দেশের সার্বিক উন্নয়নে হুমকি স্বরূপ। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যদিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলেও আমরা শিক্ষক সমাজ এখনো বৈষম্যের শিকার হচ্ছে যা জুলাই আন্দোলনের স্পিরিটের সঙ্গে যায় না। এসব বৈষম্য নিরসন করে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য আজ আমরা সরকারের কাছে আমাদের ন্যায্য দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
আমাদের দাবিগুলো হলো:আত্তীকরণ বিধিমালা ২০২৪ এর ১০ নম্বর কালো ধারা সংশোধন ও পে-প্রোটেকশন নিশ্চিত করা। চাকরিকাল অনুযায়ী বেতন ভাতা নির্ধারণ ও পদোন্নতি ব্যবস্থা চালু করতে হবে। আত্তীকরণ বিধিমালা ২০২৪ এর বৈষম্যমূলক ১৩ নম্বর ধারা বাতিল করে শিক্ষক কর্মচারীদের বদলির ব্যবস্থা করা। কার্যকর চাকরিকালের ভিত্তিতে আত্তীকৃত শিক্ষকদের গ্রেডেশন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা। সহকারী শিক্ষক (টেকনিক্যাল) পদটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করে ব্লক পোস্ট ধারণা বাতিল করা। আত্তীকরণ বিধিমালা ২০২৪ এর বৈষম্য সৃষ্টিকারী ধারা ৫(৩) নম্বর ধারা বাতিল করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সরকারিকৃত মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আ. কাদির, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম, সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম, মো. মনিরুজ্জামান প্রমুখ। এছাড়া খুলনা বিভাগের সভাপতি মো. এস এম ফারুক আহাম্মদ, সহ-সভাপতি মো. নুরুল আমিন।
বিআলো/ইমরান