ব্যবসায়ি সিন্ডিকেটের কবলে কুরবানির চামড়া
রতন বালো: মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হওয়ায় এখানে প্রতিবছর কোরবানির ঈদে কমবেশি এক কোটি পশু কোরবানি হয়। এ বছর দেশব্যাপী কোরবানি হয়েছে ৯১ লাখের বেশি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৪ লাখ ৯ হাজার। তার আগের বছরও এক কোটির বেশি পশু কোরবানি হয়েছিল। অর্থাৎ শুধু ঈদের তিন দিনেই এক কোটি চামড়া পাওয়া যায়। এর ওপর সারা বছর তো পশু জবাই হয়।
দেশের দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানিপণ্য চামড়া, যা এখন নানা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। বিদেশের বাজার সংকুচিত হয়ে আসছে। শুধু কি তাই? কাঁচা চামড়ার জন্য প্রসিদ্ধ এই দেশে এখন বিদেশ থেকে চামড়া আমদানি করতে হচ্ছে। এ জন্য বছরে ব্যয় হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। এদিকে প্রতিবছর চামড়ার দর কমছে। তারপরেও কেউ কোনো ধরনের পশুর চামড়া ফেলে দেয় না।
অবশ্য চলতি বছর কোন কোন এলাকায় চামড়া ফেলে দেয়ার খবরও পাওয়া গেছে। হালদা নদীতে চামড়া ফেলার অভিযোগে মামলা দায়ের করার মতো সংবাদও মিলেছে। যদিও সরকার চলতি মৌসুমে চামড়া সংরক্ষণে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকার চামড়া সরক্ষণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২০ কোটি ব্যয়ে ১১ হাজার ৫৭১ টন লবণ কিনে ৬৪ জেলার বিভিন্ন মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে বিনামূল্যে বরাদ্দ দেয়। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সরকারের দেওয়া লবন বেশিরভাগ এলাকাতে পৌঁছেনি। আবার অনেকে সেই লবন বিক্রি করে টুপাইস কামিয়ে নিয়েছে ফলে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। চামড়া সিন্ডিকেট এই সুযোগে অনেকটাই সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিগত সময়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানন্ত্রী, মন্ত্রী, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাসহ অনেক কর্মকর্তা জেলের ঘাণি টেনেছেন।
তবে বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কেউ জেল খেটেছেন এমন উদাহরণ নেই বললেই চলে। যদিও সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়িয়ে তুলতে এই সিন্ডিকেট সক্রিয় থেকেছে। কোন জবাবদিহিতা না থাকা বা জেল জরিমানার ভয় এড়িয়ে যাওয়ায় দেশে নতুন এক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। তাদের দাপট দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। এই সিন্ডিকেটের কারণে অসহায় সাধারণ এবং কমপুঁজির ব্যবসায়ীরা।
লবন বরাদ্দের তালিকা:
গত ২৭ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক চিঠিতে জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে লবণ কেনার জন্য বরাদ্দের নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাব রক্ষককে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তালিকা অনুযায়ী লবণ মিল মালিকদের কাছ থেকে জেলা প্রশাসকেরা লবণ সংগ্রহ করেন। আবার তালিকায় নাম থাকলেও কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের লবণ না পাওয়ার অভিযোগও আছে।
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার আবু বকর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. ইউছুপ বলেন, তারা এবার চামড়া সংগ্রহ করেছেন ৪৭৯টি। ঈদের দিন বিকেলে সংগ্রহ শেষে রাতেই আড়তদারদের কাছে চামড়া বিক্রি করেন। তিনি বলেন, আমরা আড়াই মণ লবণ পেয়েছি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। তবে চামড়া সংরক্ষণের দরকার পড়েনি। যারা চামড়া নিয়েছে, তাদের চামড়ার সঙ্গে লবণও দিয়ে দিয়েছি। যাদের লবণ দিয়েছি, তার মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠান চামড়া সংরক্ষণ করেনি বলে জানিয়েছে। তারা সেসব লবণ পাশের মাদ্রাসায় যেখানে বেশি চামড়া সংগ্রহ হয়েছে, সেখানে হস্তান্তর করেছেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, লবন দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করে এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন রাখার পর ১ হাজার ২’শ থেকে ১৩’শ টাকা দরে বিক্রি করা যাবে। সেখানে এ নিয়ম নীতিকে উপেক্ষা করা হয়েছে। ফলে চামড়া শিল্প ধ্বংস করার এক চক্রান্ত ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ইচ্ছে মত ৫’শ থেকে ৬’শ টাকা দরে চামড়া কিনেছেন। আবার অনেকে চামড়া বিক্রেতারা চামড়ার সঠিক মূল্য না পেয়ে ক্ষোভে তারা তা নদীবক্ষে নিক্ষেপ করেছেন।
চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় এতিমখানা কমদ মোবারকের এক কর্মকর্তা বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে প্রয়োজন না থাকলেও লবণ নিতে বলা হয়েছিল। আমাদের যেহেতু দরকার হবে না, তাই আমরা নিইনি। এবার চট্টগ্রামে ৯৮ লাখ ৪২ হাজার টাকায় ৬৪০ টন লবণ দেওয়া হয়।
জোর করে লবণ বরাদ্দের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম বলেন, যাদের লবণ দিয়েছি, তার মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠান চামড়া সংরক্ষণ করেনি বলে জানিয়েছে। তারা সেসব লবণ পাশের মাদ্রাসায় যেখানে বেশি চামড়া সংগ্রহ হয়েছে, সেখানে হস্তান্তর করেছে।
খাগড়াছড়িতে বরাদ্দ লবণ দেওয়া হয়েছে ৫৭টি প্রতিষ্ঠানকে। জেলার জব্বারিয়া আলিম মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, আমাদের মাদ্রাসায় চার টন লবণ দেওয়া হয়েছিল, কিন্ত আমরা চামড়া সংরক্ষণ করিনি। এ প্রসঙ্গে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, চাহিদার ভিত্তিতে লবণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ যেহেতু আসছে তাহলে বিষয়টি রিভিউ (পর্যালোচনা) করতে হবে।
ফেনীতে লবণ পেয়েও অনেক প্রতিষ্ঠান চামড়া সংরক্ষণ করেনি। অনেকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় লবণ নেয়নি। লবণ নিয়েছে এমন বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান চামড়াসংরক্ষণ না করেই বিক্রি করেছে। চামড়া সংরক্ষণ করেছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুবই কম।
চামড়া সংরক্ষণ খুবই কম:
ফেনীতে লবণ পেয়েও অনেক প্রতিষ্ঠান চামড়া সংরক্ষণ করেনি। অনেকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় লবণ নেয়নি। লবণ নিয়েছে এমন বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান চামড় সংরক্ষণ না করেই বিক্রি করেছে। চামড়া সংরক্ষণ করেছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাখুবই কম।
ফেনীর দাগনভূঞার তালতলী কওমি মাদ্রাসার মুহতামিম কামরুল আহসান বলেন, চামড়া সংরক্ষণের জন্য ৬২ বস্তা লবণ তাদের জোর করে দেওয়া হয়। কিন্তু চামড়া সংরক্ষণ না করেই তারা বিক্রি করেন। প্রতিটি লবণের বস্তা বিক্রি করেন ৩০০ টাকা দরে।
ফুলগাজীর নুরপুর দারুল উলুম মহিউসুন্নাহ মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষা পরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে তাদের লবণ নিতে বলা হলেও চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় তারা নেননি। তবে প্রয়োজন থাকলেও লবণ পায়নি এমন প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
ফেনী সদরের শর্শদিদারুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুল করিম বলেন, তারা এবার এক হাজার চামড়াসংগ্রহ করেছেন। কিন্তু তাদের লবণ দেওয়া হয়নি। কেউ এ বিষয়ে যোগাযোগও করেনি।
ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, চামড়া সংরক্ষণ করার উদ্দেশেই লবণ দিয়েছে সরকার। তবে লবণ নিয়েও কারও কারও চামড়া সংরক্ষণ না করার বিষয়ে শুনেছেন। লবণ না পেলেও তালিকায় নাম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে সারাদেশে কোরবানি হয়েছে ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৪টি পশু। গত বছরের তুলনায় যা ১২ লাখ ৭২ হাজার ১৮৪টি কম। তাই এ বছর বাজারে চামড়ার তেমন সরবরাহ নেই। এরপরেও সিন্ডিকেট ও অসাধু ব্যবসায়ীরা পিছিয়ে নেই। তারা পাটের পর চামড়া শিল্পকে ধ্বংস করার ছক আটছে।
কথা হয় রাজধানীর শাজাহানপুর রেলওয়ে হাফিজিয়া সুন্নিয়া আলিম মাদ্রারাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ইব্রাহীন খলিল এর সঙ্গে। তিনি বলেন, দেশে এবার বিপুলসংখ্যক পশু জবাইহলেও ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। আবার প্রতি বছরের মতো এবারও বেশির ভাগ ছাগলের চামড়া নষ্ট হয়েছে। বিদেশি চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে পাদিয়ে অসাধু ট্যানারি মালিকদের ফ্যাসিস্ট সিন্ডিকেট কৌশলে চামড়ার দাম কমিয়ে লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের চামড়াশিল্প।
তিনি বলেন, আমি ২৭০টি চামড়া বিক্রি করেছি। সরকারি রেট পাই নাই। সিটি করপোরেশন এর এক শ্রেণির কর্মকর্তারা ঈদের পরের দিন ঘোষণা করেন চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে দিলে সরকারি রেট অনুয়ায়ি প্রতিপিছ ১ হাজার ৩’শ টাকা দেওয়া হবে। ঈদের আগে বলা থাকলে আমার চামড়া প্রক্রিয়াকরণ বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে পারতাম। কিন্তু ঈদের পরের দিন বলায় চামড়া প্রক্রিয়াকরণ করা আমাদের পক্ষ্যে সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
তিনি আরো বলেন, গত বছর চামড়ার দাম কম ছিল, তবে এবারকার মতো এ রকম ভোগান্তির শিকার হতে হয়নি। এ বছর খাশির চামড়া ২০ টাকা করে দিতে হয়েছে। খাশির চামড়া সরকারি রেট ছিল ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। ২০ টাকা করে প্রতি পিস চামড়া অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে দিতে যেয়ে আমরা সর্বশান্ত হয়েছি।
লক্ষ্মীপুর জেলার বশিকপুর দারুল উলূম কারীমিয়ার মুহ্তামিম মুফতি ফজলুর রহমান আজম এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সরকার এবার লবন দিয়েছে আমরা জানি না। নিজেদের টাকায় লবন কিনে তা চামড়া সংরক্ষন করার ব্যবহার করেছি। তবে দুঃখের বিষয় ১৫ দিন গত হলেও সংরক্ষিত সেই চামড়ার কোন ক্রেতা মেলেনি। আমাদের সংগ্রহে ৪৪টি পশুর চামড়া রয়েছে যা নিয়ে শঙ্কায় আছি।
মুহতামিম বশিকপুর কাওমী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা জাকির এর মুটোফেনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমাদের মাদ্রাসার ২৬৫টি পশুর চামড়াসহ এলাকার আরো দুটি মাদ্রাসার ৮৬টি চামড়া আমরা প্রক্রিয়াজাত করে রেখেছি। সরকার থেকে ৩ বস্তা লবন পেয়েছি। লবন সল্পতার জন্য আমাদের আরো ২৬ বস্তা লবন বাজার থেকে কিনতে হয়েছে। তিনি বলেন, আজ ১৫ দিন হয় কোন ক্রেতার দেখা নেই। অবশেষে বাধ্য হয়েই ঢাকায় গিয়ে কোন ট্যানারির সঙ্গে কথা বলে চামড়াগুলো বিক্রি করার চেষ্টা করবো।
৭’শ টাকা দরে ৫৯২টি চামড়া বিক্রি করেছেন খিলাগাঁও জামিয়া মাদানিয়ার ভাইচ প্রিন্সিপাল মুফদী তাসলিফুল। তিনি জানান, এবার সরকার চামড়া সংরক্ষনের জন্য লবন দিয়েছে এটা আমরা জানি না। ঈদের দিনেই চামড়া গুলো বিক্রি করে দিতে হয় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে। এছাড়া আমাদের পক্ষে ঐ সময় চামড়াগুলো সংক্ষরণ করার মত কোন লবন ছিল না। বা কেনাও সম্ভব ছিল না। বাধ্য হয়েই চামড়াগুলো সরকারি রেট না পেয়ে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছেই বিক্রি করতে হয়।
৫৭৪টি গবাদি পশুর চামড়া নিয়ে বিপদের মধ্যে রয়েছে রাজধানীর খিলগাঁও জামিয়া মাদানিয়ার শিক্ষা সচিব আলহাজ জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, লবণ দিয়ে চামড়া প্রক্রিয়াকরণ করতে আমাদের অনেক খরচ হয়েছে। বিক্রি করতে হয় ৭০০ টাকা পিস। সকালে ৮০০ টাকা করে প্রতিপিস চামড়া কেনা যাবে। বিকেলে বলে ৭০০ টাকা করে দাম দেওয়া যাবে। খিলগাঁও তালতলা মসজিদে সাড়ে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সরকারি রেট ছিল সাড়ে ১৩০০ টাকা।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা মনে করেছিলাম নতুন সরকারের আমলে চামড়ার ভালো মূল্য পাবো। কিন্তু নতুন সরকারে সময়ই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দাপটে কমদামে চামড়া বিক্রি করতো হলো। গত বছর আমরা সাড়ে ৮০০ টাকা করে পেয়েছি। গত ৪-৫ বছর যাবৎ সিন্ডেকেট ব্যবসায়ীদের দাপটে আমাদের কম মূল্যে চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে। নতুন সরকারের সময়ই এই হাল তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে প্রশ্ন রাখেন তিনি?
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে সারাদেশে কোরবানি হয়েছে ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৪টি পশু। গত বছরের তুলনায় যা ১২ লাখ ৭২ হাজার ১৮৪টি কম। করোনাকালের (২০২০-২১ সাল) পর এটিই সর্বনিম্ন কোরবানি। তারপরেও সিন্ডিকেট করে চামড়া শিল্পকে পাট শিল্পের মতো ধ্বংস করার চক্রান্ত হচ্ছে এমনটিই মনে করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার রক্ষা আন্দোলন।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরটির ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান বলেন, এ বছর তুলনামূলক ভাবে ছাগল ও ভেড়ার কোরবানি কম হয়েছে। মানুষ প্রতিবছর যারা একা কোরবানি দিতেন, তাদের অনেকেও এবার যৌথভাবে দিয়েছেন। বড় গরুর বিক্রিতেও ধীরগতি ছিল। অবিক্রীত পশুর সংখ্যাও বেশি। তিনি বলেন, এ বছর কোরবানি কম হওয়ার পেছনে আর্থিক, সামাজিক কিংবা পরিবর্তিত পরিস্থিতির কোনো প্রভাব আছে কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখবো।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সিন্ডিকেটের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দাম নির্ধারণ করা এমনিতেই ঠিক নয়। বাজারকে নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হয়। সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।
এ দিকে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, লবণ ছাড়া চামড়ার দাম নির্ধারণ হয় না। এবারও লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া এক কোটি চামড়ার মধ্যে চট্টগ্রামে ৬২০ পিস চামড়া নষ্ট হয়েছে। সেই গল্প বড় করে দেখানো হচ্ছে। কারণ ট্যানারি মালিকরা চান না তারা বেশি দামে চামড়া কিনুন। তিনি বলেন, কোরবানির চামড়া সংরক্ষণে এবার এতিমখানা ও মাদরাসায় সরকারের পক্ষ থেকে লবণ সরবরাহ করা হয়েছে। ফলে রাজধানীর বাইরে বিপুল চামড়া সংরক্ষিত হয়েছে। কমপক্ষে আগামী তিন মাস দর-কষাকষির সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর ফলে ন্যায্য দাম নিশ্চিত হবে। ব্যবসায়ীরাও ভালো দাম পাবেন।
গত ১০ জুন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘কাঁচা চামড়ার গুণগত মান রক্ষায় লেস-কাট নিয়ন্ত্রণ এবং সঠিক পদ্ধতিতে চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও পরিবহন’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহমেদ বলেছিলেন, স্কয়ার ফুটে চামড়ার দাম নির্ধারণ করায় প্রতিবার যে অস্থিরতা তৈরি হতো এবার পিস হিসেবে চামড়ার দাম নির্ধারণ করায় সে অস্থিরতা তৈরি হবে না। তিনি বলেন, এবার প্রতি পিস গরুর চামড়া ঢাকার ভেতরে ১ হাজার টাকা, ঢাকা বাইরে ১ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করেছি। তবে সেটি সঠিক গুণগত মানের হতে হবে। চামড়া লবণবিহীন হলে সাড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা দাম পড়বে।
বিআলো/তুরাগ