ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গর্ব: প্রফেসর মেজর জেনারেল (অব.) মো. কামরুজ্জামানের যাত্রা
দেশপ্রেমে জীবন উৎসর্গ, সেনা থেকে শিক্ষাবিদ
(ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃতি সন্তান প্রফেসর মেজর জেনারেল (অব.) মো. কামরুজ্জামান)
জ ই বুলবুল: প্রফেসর মেজর জেনারেল (অব.) মো. কামরুজ্জামান বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যিনি তাঁর দক্ষতা, নেতৃত্ব এবং নিষ্ঠার জন্য ব্যাপকভাবে সম্মানিত। সেনাবাহিনীর উন্নয়নে অনন্য ভূমিকা রাখার পাশাপাশি তিনি শিক্ষা, গবেষণা এবং জাতীয় উন্নয়ন কার্যক্রমেও রেখেছেন অবিস্মরণীয় অবদান। তাঁর কর্মময় জীবন বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এক অনুপ্রেরণার নাম।
১৯৬৩ সালের ১৪ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার আলমনগর গ্রামের ডাক্তারবাড়িতে তাঁর জন্ম। পিতা মো. নুরুজ্জামান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক কৃষি কর্মকর্তা, আর মাতা ফরিদা বেগম ২০০৪ সালে “রত্নগর্ভা মা” হিসেবে জাতীয়ভাবে সম্মানিত হন।
শিক্ষাজীবন:
শিক্ষাজীবনে অসাধারণ কৃতিত্বের অধিকারী কামরুজ্জামান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) থেকে পিএইচডি (ফেলো) অর্জন করেন। ২০০৫ সালে ইউনিভার্সিটি অফ স্টেট অফ নিউইয়র্ক থেকে রাজনৈতিক অর্থনীতিতে পোস্ট-মাস্টার্স ডিপ্লোমা, ১৯৯৭ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমডিএস, ১৯৯৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি (স্বর্ণপদক) লাভ করেন। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে সোর্ড অফ অনার অর্জন করেন। এছাড়া ১৯৭৯ সালে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি এবং ১৯৮১ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় ডাবল স্ট্যান্ড অর্জন করেন।
সামরিক জীবন:
১৯৮১-৮৩ সালের ৮ম বিএমএ লং কোর্সের মাধ্যমে তাঁর সামরিক ক্যারিয়ার শুরু হয়। প্রশিক্ষণ শেষে সোর্ড অফ অনার ও একাডেমিক স্বর্ণপদক অর্জন করেন।
গুরুত্বপূর্ণ সামরিক প্রশিক্ষণ ও মিশন:
১৯৮৮ সালে চীনে অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল প্রশিক্ষণে প্রথম স্থান অধিকার করে সেরা নিক্ষেপ পুরস্কার পান। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়ে প্রাক্তন মহাসচিব কফি আনানের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান। ২০১১ সালে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রতিরক্ষা দলের নেতৃত্ব দেন এবং ২০১০ সালে সেনাপ্রধানের সঙ্গে ভারত সফরে দ্বিপাক্ষিক প্রশিক্ষণ সমন্বয় করেন। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান:
শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অবদানও প্রশংসনীয়। ২০০০ সালে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে (MIST) বিজনেস স্টাডিজ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তিনি বিইউপির বিজনেস স্টাডিজ বিভাগে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। স্টেট ইউনিভার্সিটি ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতেও শিক্ষকতা করেছেন। মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত রত্নগর্ভা ফরিদা জামান স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার মানোন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করছেন।
গবেষণা ও প্রকাশনা:
গবেষণায়ও তিনি অনন্য। তাঁর ২৫টিরও বেশি গবেষণা প্রবন্ধ সামরিক ও বিশ্ববিদ্যালয় জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ২০১০ সালে “মিডিয়া ও মিলিটারি ইন্টারফেস” গবেষণায় আর্মি হেডকোয়ার্টারের প্রথম পুরস্কার অর্জন করেন।
বর্তমান দায়িত্ব ও নেতৃত্ব:
বর্তমানে তিনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের স্বতন্ত্র পরিচালক, বিইউপির সিনেট সদস্য ও অধ্যাপক। এর আগে আর্মি ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মহাপরিচালক এবং অবসরপ্রাপ্ত আর্মড ফোর্সেস অফিসারস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (RAOWA) ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মেজর জেনারেল (অবঃ) কামরুজ্জামান বাংলাদেশের সামরিক ইতিহাসের এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব, যিনি নিজের মেধা, নিষ্ঠা এবং দেশপ্রেমের স্বাক্ষর রেখেছেন প্রতিটি ক্ষেত্রে।
একজন দূরদর্শী নেতা হিসেবে তিনি তাঁর নেতৃত্বের মাধ্যমে সততা, শৃঙ্খলা এবং মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর কর্মজীবন নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন ” আমি আমার জন্মস্থান নবীনগরের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করতে চাই। আমি নবীনগর উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের দোয়া এবং সমর্থন কামনা করি “।
নিজ জন্মস্থান ও মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকে তিনি বলেন—“আমি আমার জন্মস্থান নবীনগরের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করতে চাই। নবীনগরের সর্বস্তরের মানুষের দোয়া ও সমর্থন আমার পথচলার শক্তি।”
মেজর জেনারেল (অব.) মো. কামরুজ্জামানের জীবন সততা, শৃঙ্খলা ও মানবিকতার উজ্জ্বল উদাহরণ, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য চিরকাল অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
বিআলো/তুরাগ