ভারতীয় আকাশযুদ্ধের ইতিহাসে এক যুগের অবসান
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:ভারতের আকাশযুদ্ধে এক ঐতিহাসিক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটতে চলেছে। ৬২ বছরের দীর্ঘ পথচলার পর ভারতীয় বিমানবাহিনী বিদায় জানাতে চলেছে রুশ নির্মিত মিগ-২১ যুদ্ধবিমানকে। গত সপ্তাহে রাজস্থানের বিকানেরে নাল বিমানঘাঁটি থেকে বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল অরূপ প্রকাশ সিং এককভাবে মিগ-২১ উড়িয়ে এই যুদ্ধবিমানকে প্রতীকী বিদায় জানান। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর চণ্ডিগড়ে আনুষ্ঠানিক অবসরের মাধ্যমে মিগ-২১ অধ্যায়ের ইতি টানা হবে। ১৯৬৩ সালে চণ্ডিগড় থেকেই মিগ-২১ প্রথমবার ভারতীয় বিমানবাহিনীতে যুক্ত হয়েছিল। তারপর থেকে প্রায় ছয় দশক ধরে এই বিমান ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষার প্রধান ভরসা হয়ে আছে।
একসময় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত সুপারসনিক জেটগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল এটি। ৬০টিরও বেশি দেশে ব্যবহৃত হয়েছিল মিগ-২১, যার উৎপাদন সংখ্যা ছিল ১১ হাজারেরও বেশি। এয়ার চিফ মার্শাল সিং বলেন, “আমার মিগ-২১ অভিজ্ঞতা শুরু হয়েছিল ১৯৮৫ সালে। তখন আমি তেজপুরে টাইপ-৭৭ সংস্করণ চালাই। অবিশ্বাস্যভাবে দ্রুতগামী, সহজ নকশার, কিন্তু অত্যন্ত শক্তিশালী একটি বিমান ছিল এটি। ভারতের অসংখ্য পাইলটের কাছে এই বিমান ছিল প্রথম পাঠশালা।”
শুধু প্রশিক্ষণ বা প্রতিরক্ষা নয়, ভারতের প্রতিটি বড় যুদ্ধে মিগ-২১ তার অবদান রেখেছে। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধ থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত এই বিমান কার্যকর ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ঢাকায় গভর্নর হাউসে মিগ-২১ এর আক্রমণ ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। সেই হামলার পরই গভর্নর পদত্যাগ করেন এবং দু’দিন পর পাকিস্তান সেনারা আত্মসমর্পণ করে। পরবর্তীতে কারগিল যুদ্ধেও এই বিমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ১৯৯৯ সালে ‘অপারেশন সাফেদ সাগর’-এর সময় একটি পাকিস্তানি আটলান্টিক বিমান ভূপাতিত করে আলোচনায় আসে। এমনকি ২০১৯ সালেও বালাকোট ঘটনার পর মিগ-২১ একটি পাকিস্তানি এফ-১৬ ধ্বংস করে নতুন রেকর্ড গড়ে।
যদিও যুগের পরিবর্তনে প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। পুরনো নকশা, যন্ত্রাংশের রক্ষণাবেক্ষণ জটিলতা এবং আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে চাহিদার কারণে মিগ-২১-কে অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। এর জায়গা নিতে আসছে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হালকা যুদ্ধবিমান ‘তেজস’, আধুনিক রাফাল ও সু-৩০ এমকেআই। এয়ার চিফ মার্শাল সিং আরও বলেন, “তেজস আসলে মিগ-২১-এর উত্তরসূরি হিসেবে ডিজাইন করা হয়েছে। ছোট আকারের হলেও এতে নতুন প্রজন্মের অস্ত্র সংযোজন করতে হবে। ভবিষ্যতে এটি ধীরে ধীরে মিগ-২১-এর জায়গা নেবে।” ভারতের আকাশযুদ্ধে মিগ-২১ শুধু একটি যুদ্ধবিমান নয়, বরং এক প্রজন্মের সাহস, অভিজ্ঞতা ও ইতিহাসের প্রতীক। বিদায়ের এই মুহূর্তে ভারতীয় আকাশসেনাদের আবেগ তাই বিশেষভাবে উচ্ছ্বসিত।
বিআলো/ইমরান