ভারতের সুতার ডাম্পিংয়ে ধ্বংসের মুখে স্পিনিং শিল্প
৫০ টেক্সটাইল মিল বন্ধ, দুই লাখ কর্মসংস্থান হারানো—৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম বিটিএমএর
নিজস্ব প্রতিবেদক : ভারতের সুতার ডাম্পিং এবং দীর্ঘদিনের নীতিগত অবহেলায় দেশের স্পিনিং শিল্প ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। ইতোমধ্যে দেশে অন্তত ৫০টি টেক্সটাইল মিল বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে দুই লাখের বেশি শ্রমিক ও কর্মচারী কর্মসংস্থান হারিয়েছেন। এ অবস্থায় স্পিনিং খাত রক্ষায় আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সরকারের জরুরি নীতি সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)।
রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর গুলশান ক্লাবে বিটিএমএ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য তুলে ধরেন সংগঠনের সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল।
‘স্পিনিং সেক্টরে দীর্ঘদিন যাবৎ বিদ্যমান বহুবিধ সমস্যা ও তা থেকে উত্তরণে সরকারের করণীয়’ শীর্ষক এ সভায় তিনি স্পিনিং শিল্পের চলমান সংকটের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন।
বিটিএমএ সভাপতি বলেন, ভারতের সুতার ডাম্পিংয়ের কারণে দেশীয় স্পিনিং মিলগুলো ক্রমেই রুগ্ন হয়ে পড়ছে। ভারতের সুতা বাংলাদেশে প্রায় ৩০ সেন্ট কম দামে ডাম্পিং হচ্ছে, যা দেশীয় শিল্পের জন্য মারাত্মক হুমকি। এরই মধ্যে এর প্রভাব হিসেবে ৫০টি মিল বন্ধ হয়ে গেছে।
তিনি জানান, বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব মিলের প্রতিটিতে ৫০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ ছিল। মিল বন্ধ হওয়ার ফলে দেশ প্রায় দুই লাখ কর্মসংস্থান হারিয়েছে, যা অর্থনীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। চাইলেই এসব মিল পুনরায় চালু করা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে শওকত আজিজ রাসেল বলেন, আমার পাঁচটি কটন মিলের মধ্যে একটি ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আমি নিজেই ‘টেক্সটাইলবিহীন সভাপতি’ হয়ে যেতে পারি। কারখানা বন্ধ করাও সহজ নয়—ব্যাংকের দেনা-পাওনা মিটিয়ে তারপর বন্ধ করতে হয়।
তিনি আরও বলেন, গত ১৫ থেকে ২০ মাসে সরকারিভাবে স্পিনিং খাত নিয়ে কার্যকর কোনো নীতিগত উদ্যোগ বা গুরুত্ব লক্ষ্য করা যায়নি। এ সময়ের মধ্যে ভারত থেকে সুতা আমদানি ১৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দেশীয় শিল্পের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ও হতাশাজনক।
সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ধীরগতির সমালোচনা করে বিটিএমএ সভাপতি বলেন, ভারত একটি পলিসি করতে মাত্র তিন ঘণ্টা নেয়, আর আমাদের এখানে বছরের পর বছর কেটে যায়। এই সেক্টর বাঁচাতে এখনই দ্রুত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। তাই আমরা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে স্পষ্ট নীতি সহায়তার দাবি জানাচ্ছি—নইলে সামনে আরও ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে।
বিআলো/এফএইচএস



